সুন্দরবনে পর্যটকদের ক্যামেরায় ধরা পড়ল বাঘ

সুন্দরবন রয়েল বেঙ্গল টাইগারের জন্য সুপরিচিত। আর সেই বাঘের যদি সামনে থেকে দেখার সুযোগ মিলে যায় তাহলে তো কথাই নেই। সুন্দরবনে ঘুরতে গিয়ে বাঘ দেখতে পাওয়ার এমন দুর্লভ ঘটনার স্বাক্ষী হয়েছেন একদল পর্যটক। মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল সোয়া ১০টার দিকে সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের বড় কটকা খালে এমন মুহূর্তের সাক্ষী হয়েছেন তারা।
পর্যটকবাহী জলযান দি সেইল বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন সুন্দরবনের বড়কটকা খাল দিয়ে যাওয়ার সময় পাশ দিয়ে বাঘটি ওই খাল পার হচ্ছিল। খালে পার হয়ে বাঘটি বনের গহীনে চলে যায়। ওই জলযানে সুন্দরবন ভ্রমণে যাওয়া মোংলা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক ও পশুর রিভার ওয়াটার কিপার মো. নূর আলম শেখ সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের ট্যুরিস্ট জাহাজ কটকা থেকে তখন কচিখালির দিকে যাচ্ছিল। সময় তখন সকাল ১০টা ১০ মিনিট। বড় কটকা খালের মুখে যখন আমরা, তখন বেশ বড়সড় ওই বাঘটি আমরা খাল পার হতে দেখতে পাই।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবনসংলগ্ন বাগেরহাটের মোংলা উপজেলাতে আমার বাড়ি। গত ২৫ বছর ধরে আমি সুন্দরবনে আসি। প্রতি বছরই একাধিক বার আসা হয়। তবে এবারই প্রথম বনের মাঝে সামনা সামনি এমন বাঘ দেখতে পেয়ে আমি দারুণ উৎফুল্ল। আমার এমন সৌভাগ্য হবে তা আমি কোন দিন কল্পনাও করতে পারিনি। সেই মূহুর্তের অনুভূতি বলে শেষ করা যাবে না। সুন্দরবনের ভেতরে বাঘ দেখার ওই মুহূর্ত উচ্ছ্বাস আর উত্তেজনায় কেটেছে জাহাজের সকল পর্যটক ও কর্মীদের। তার যে যার মত করে ছবি তোলেন এবং ভিডিও ধারণ করেন ওই মুহূর্তের।
ওই জাহাজে থাকা ওয়াটারকিপার্স বাংলাদেশের সমন্বয়ক শরীফ জামিল নিজের মুঠোফোনে ধারণ করা সেই মুহূর্ত একটি ভিডিও নিজের সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করে লিখেন, ‘বিশাল আকারের রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখার বিরল অভিজ্ঞতা। ... সুন্দরবন বাঁচাও, বাংলার বাঘ বাঁচাও।
চিত্র সাংবাদিক আরিফুর রহমান বলেন, ‘বহুবার সুন্দরবন ঘুরতে এসেছি। বাঘের দেখা পাব এটা প্রতিবারের চাওয়া থাকে। সেই চাওয়া পূর্ণ আজ হলো। এবারের সুন্দরবন ভ্রমণ পরিপূর্ণ হলো।’
পটুয়াখালী থেকে সুন্দরবন ভ্রমণে আসা কামাল হাসান রনি বলেন, ১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে মোংলা থেকে সুন্দরবনের উদ্দেশ্যে আমরা রওনা করি। এবারে সুন্দরবন ভ্রমণটা সারাজীবনের জন্য স্বরণীয় হয়ে থাকবে। এক মাস আগে গত ১৯ জানুয়ারি সুন্দরবনের কটকা অভয়ারণ্যের বেতমোড় এলাকার নদীর পাশে একই জায়গায় তিনটি বাঘের দেখা পান পর্যটকবাহী জলযান এমভি আলাস্কা’র একদল পর্যটক। সে সময় একটি বাঘকে অপর দুটি বাঘ আক্রমণ করে প্রথমে নদীতে ফেলে দেয়। সে সময়কার বাঘের বেশ কিছু ছবি, ভিডিও ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
সুন্দরবনের খুলনা বিভাগীয় বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো বলেন, ‘মহামারি করোনাকালীন সুন্দরবনে সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ হয়। ওই বছর সুন্দরবন ছিল নিরব, কোলাহলমুক্ত। বনের বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ বেড়ে যায়। বন্যপ্রাণীকে তার মতো করে চলতে দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের বিগত ৩টি বাঘ গণনার ফলাফল বিশ্লেষণেও মিলেছে একই ধরণের তথ্য। প্রতি জরিপে ৮ থেকে ১১টি বাঘ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা আরো বৃদ্ধি পাবে এমন প্রত্যাশা বন বিভাগের। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসের সর্বশেষ জরিপ অনুসারে সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা ১২৫টি।’