ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ব্যাখ্যা— সেহেরি-ইফতারের সময়সূচিতে বিভ্রান্তি নেই

সেহেরি ও ইফতারের সময়সূচি নিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি বলছে, আলেম-ওলামাসহ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তাদের নিয়ে এই সময়সূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। এই সময়সূচিতে সেহেরি ও ইফতারের জন্য কোনো 'অলস সময়' রাখা হয়নি, 'সঠিক সময়' রাখা হয়েছে। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জনসংযোগ দপ্তর থেকে এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি গণমাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি কিছু কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রণীত সেহেরি ও ইফতারের সমযসূচি নিযে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। কিন্তু বর্তমানে যে সেহেরি ও ইফতারের সময়সূচি বের করা হয়েছে তা আলেম-ওলামা ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত কমিটি প্রণয়ন করেছে। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুল মালেকসহ প্রখ্যাত ওলামায়ে কেরাম, আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিশেষজ্ঞ, মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন কেন্দ্রের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল বিভাগের শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা এই কমিটতে রয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, সেহেরি ও ইফতারের জন্য যুগ যুগ ধরে মানুষ প্রকৃতির ওপর নির্ভর করেছে। ঘড়ি, আবিষ্কারের পর ঘড়ির ওপর মানুষের নির্ভরশীলতা এসেছে। প্রতিটি বিষযে মিনিট, সেকেন্ড, মিলি সেকেন্ড, এমনকি ন্যানো সেকেন্ডের হিসাবও বের করা সহজ হয়েছে। বর্তমানে যে সময়সূচি উন্নয়ন করা হয়েছে তা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম হিসাব করেই করা হযেছে।
তিন দশকেরও বেশি সময় আগে ইসলামিক ফাউন্ডেশন যে সময়সূচি প্রণয়ন করেছিল সে প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, কয়েক যুগ ধরে চলে আসা সেই সময়সূচিতে সেহেরি, ফজরের আজান ও ইফতারের সময়ের সঙ্গে ৩ মিনিট করে সতর্কতামূলক সময রাখা হয়েছিল। সেহেরির ৩ মিনিট আগেই সময শেষ করা এবং ফজরের আযানের জন্য ৩ মিনিট পরে আজানের সময় নির্ধারণ করাতে মাঝখানে ৬ মিনিট অলস সময় রাখা হযেছিল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন বলছে, শরিয়তে এ ধরনের অলস সময়ের কোনো বিধান নেই। শরিয়া অনুযায়ী, সেহেরির সময় শেষ, ফজরের সময শুরু— এভাবেই সময় নির্ধারণ করতে হবে। আগের সময়সূচিতে ফজরের আজান সতর্কতামূলকভাবে ৩ মিনিট পরে নির্ধারণ করায় অনেকের রোজা নষ্ট হচ্ছে। কারণ সাধারণ মানুষ মনে করে, আজান পর্যন্ত সেহেরি খাওয়া যায়।
ইফতারের ক্ষেত্রেও এমন জটিলতা ছিল উল্লেখ করে ফাউন্ডেশন বলছে, আগে ইফতারের সময় সতর্কতামূলকভাবে ৩ মিনিট পরে রাখা হযেছিল। ব্যক্তিজীবনে অনেকে সতর্কতামূলকভাবে আরও ৩ মিনিট পরে ইফতার করেন। এতে ইফতারের সময় ক্রমান্বয়ে পিছিয়ে যাচ্ছে। অথচ শরিয়তের বিধান অনুযায়ী, শিগগিরই ইফতার করা উত্তম। তাছাড়া বহির্বিশ্বে সময় নিযে যারা গবেষণা করেন, (৩ মিনিট কমিযে এবং ৩ মিনিট বাড়িযে দেওয়ার কারণে) এই সময়সূচিতে তাদের সঙ্গে অমিল পরিলক্ষিত হয়। ফলে বিভ্রান্তি তৈরি হয়।
নতুন সময়সূচিতে এই জটিলতা নিরসন করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। সংস্থাটি বলছে, সার্বিক দিক বিবেচনা করে কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে সেহেরি, ফজরের আজান ও ইফতারের জন্য কেবল 'সঠিক সময়' ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রণয়ন করবে, কোনো 'অলস সময়' রাখবে না। কেউ চাইলে নিজ দায়িত্বে সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন। বর্তমান প্রণীত সময়সূচি অত্যন্ত সূক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম হিসাব করেই প্রণয়ন করা হয়েছে এবং তা সঠিক। এ নিয়ে বিভ্রান্তির কোনো অবকাশ নেই।
প্রসঙ্গত, আগামীকাল শুক্রবার ১৪৪৬ হিজরির ২৯ শাবান। এ দিন সন্ধ্যায় আকাশে রমজানের চাঁদ দেখা গেলে শনিবার (১ মার্চ) থেকে মাসব্যাপী রোজা শুরু হবে।