top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামতarrow iconছাত্র রাজনীতি

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে এখনই থামান

ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরকে এখনই থামান
ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে চলছে দ্বন্দ্ব। ছবি কোলাজ: রাজনীতি ডটকম

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতের ঘটনার পর জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিরোধ এখন তুঙ্গে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর বিএনপি-জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে বাগ্‌যুদ্ধ চলে আসছে। এরই মধ্যে ছাত্রদল ও শিবির প্রকাশ্য বিরোধ, এমনকি সহিংসতায় জড়িয়ে পড়েছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না, একে অন্যকে দোষারোপ করেই চলেছে।

চলমান এই বিবাদের মধ্যেই রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম মন্তব্য করেন, বাংলাদেশে নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের পথ ছাত্রদল অনুসরণ করছে।

শিবির সভাপতি বলেন, নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত হলেও দুর্ভাগ্যজনকভাবে ছাত্রদলকে তাদের পথ অনুসরণ করতে দেখা যাচ্ছে। আমরা লক্ষ করছি, বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরসহ অন্যান্য ছাত্র সংগঠনকে অন্যায়ভাবে দমনের চেষ্টা করছে ছাত্রদল।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, কুয়েটের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রশিবিরের সম্পৃক্ততার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে খুলনার শিববাড়িতে ‘একটা একটা শিবির ধর, ধইরা ধইরা জবাই কর’ এই স্লোগান দেওয়া হয়।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে ছাত্রশিবিরের এই সংবাদ সম্মেলনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। শিবিরের সংবাদ সম্মেলনের কয়েক ঘণ্টা পর দেওয়া এক বিবৃতিতে ছাত্রদল বলছে, মধুর ক্যানটিনে শিবিরের উপস্থিতি মুক্তিযুদ্ধকে কলঙ্কিত করে। মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বলে শিবির বীর মুক্তিযোদ্ধা ও শহিদদের অবমাননা করছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, শহিদের নিজের আঙিনায় খুনির সহযোগীদের বিচরণ খুবই ন্যক্কারজনক ঘটনা। অনুতাপ ও বিবেকবোধ থেকেই ছাত্রশিবিরের মধুর ক্যানটিনে আসা উচিত নয়।

এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে ছাত্রদল-যুবদল নেতাদের মুখোমুখি অবস্থান, ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা কুয়েটের ঘটনাটি সাধারণ শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের মধ্যেকার হিসেবে উল্লেখ করে আসছে। তবে ছাত্রদল ও যুবদল, এবং এমনকি বিএনপি নেতারাও বলছেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্র শিবিরই মূলত কুয়েটকে অশান্ত করছে।

রাজনীতিমুক্ত খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই কি খুলনায় ছাত্রদল-শিবির আবারও মুখোমুখি অবস্থান নিতে যাচ্ছে— এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

নব্বইয়ের দশকে বিএনপি যখন ক্ষমতায়, ওই সময় খুলনায় ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে বিরোধ প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছিল। তাহলে আবারও কি সেদিকেই যাচ্ছে খুলনার ছাত্র রাজনীতি?

কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবির নেতাকর্মীরা ‘প্রথমে’ হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করছে ছাত্রদল। বিএনপির ছাত্র সংগঠনটি বলছে, হামলায় ‘নেতৃত্ব দিয়েছেন’ কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনে আহ্বায়ক ওমর ফারুক। বৈষম্যবিরোধীদের একটি মিছিল থেকে ‘তার উসকানিতে’ ছাত্রদল সমর্থকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়েছে। ফারুকসহ হামলাকারীদের ‘শিবির নেতা’ হিসেবে দাবি করেছে ছাত্রদল।

হামলা-সংঘর্ষের ঘটনার পরই অবশ্য প্রতিবাদ জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ থেকে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ওপরই দায় চাপিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গত বুধবার ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গণঅভ্যুত্থানের পরে বাংলাদেশের যারা আত্মপ্রকাশ করতে ভয় পেয়েছে, সেই শিবিরের সন্ত্রাসীরা মঙ্গলবার ছাত্রদলের ওপর হামলা চালিয়েছে।

নাছির বলেন, তাদের নির্যাতনের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে আহত শিক্ষার্থীরা দোকানে আশ্রয় নিলে দোকানদারকেও বৈষম্যবিরোধী কথিত শিক্ষার্থী ও শিবিরের সন্ত্রাসীরা হামলা করে। পরে গ্রামবাসীর সঙ্গে অনাকাঙ্ক্ষিত হামলার ঘটনা ঘটেছে। এরপর ছাত্রদলের নামে এক ধরনের ‘মব’ তৈরি করা হয়েছে।

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের দাবি ঘিরে ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে দফায় দফায় হামলা-সংঘর্ষের পরিপ্রেক্ষিতে কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ক্যাম্পাস বন্ধের ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।

বিরোধের শেষ এখানেই নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে যখন ছাত্র সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে, ঠিক সেই সময়ে নির্বাচনের সময় নিয়ে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে ছাত্র সংগঠনগুলোর মধ্যে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও শিবিরের চাওয়া, দ্রুততম সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক। অন্যদিকে চায় না, জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হোক।

ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর অবস্থান যেন জাতীয় রাজনীতিতে বিএনপি-জামায়াতের পরস্পরবিরোধী অবস্থানের মতোই। এ ক্ষেত্রে জামায়াত আগে সংস্কার ও স্থানীয় নির্বাচন চায়। বিএনপির চাওয়া যত দ্রুতসম্ভব জাতীয় নির্বাচন, তারপর স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের পক্ষে মত তাদের।

রাজনীতিতে মতবিরোধ থাকবে, কিন্তু তা যেন সহিংসতায় পরিণত না হয়। দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এমনিতেই নাজুক। তার ওপর দুই ছাত্র সংগঠনের উসকানিমূলক বক্তব্য ও শক্তি প্রদর্শন বাড়তি বিশৃঙ্খলা ছাড়া আর কিছু দিতে পারবে না।

ছাত্রশিবিরি মানেই রগ কাটার যে বদনাম, তা নিয়ে এরই মধ্যে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। জামায়াতের যুদ্ধাপরাধের দায়ের মতো শিবিরের রগ কাটার অভিযোগও মানুষের মুখে মুখে। এই বদনাম তারা ঘুচাবে না, উসকে দেবে— সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।

আবার জনপ্রিয়তার কারণে ছাত্রদলেরও এমন কিছু করা উচিত নয়, যা আইনশৃঙ্খলার আরও অবনতি ঘটায়। ক্ষমতার খুব কাছাকাছি চলে যাওয়ার মানসিকতা লক্ষ করা যায় দলটির নেতাকর্মীদের।

বিবদমান এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে ও পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে থাকলে নিষিদ্ধ ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ নিজেদের সব অপকর্ম জায়েজ করার সুযোগ পাবে। মানুষ ছাত্রলীগের সন্ত্রাস, অপকর্মের সঙ্গে অন্য ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড মেলানোর সুযোগ পাবে।

এখনকার মুখোমুখি দুই ছাত্রসংগঠনের অভিভাবক বিএনপি ও জামায়াতের এখানে বড় ভূমিকা রয়েছে। ছাত্রদের দিয়ে মাঠ গরম বা দখলে রাখার রাজনীতি আজকের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খুব একটা সফল বা গ্রহণযোগ্য হবে বলে মনে করেন না রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।

তার চেয়ে বরং জাতীয় স্বার্থে যার যার সংগঠনের লাগাম টেনে ধরার এখনই সময়। নইলে রক্তপাত, রগকাটা ও নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ঘটতেই থাকবে। সেটি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে আসা জুলাই-আগস্টের চেতনার সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, তা বলাই বাহুল্য।

r1 ad
r1 ad
top ad image