প্রযুক্তি
কী আছে আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে

আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স নিয়ে এখন দেশ তোলপাড়। রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক ইস্যুর বাইরেও আইফোনের এই আধুনিক মডেল নিয়ে আলোচনা কম হয় না। কিন্তু কী আছে এই ফোনে?
আসলে নতুন প্রযুক্তি জগতে অ্যাপলের প্রতিটি নতুন আইফোন মডেলই একটি আলোচিত ঘটনা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বাজারে আসা আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স (iPhone 16 Pro Max) তার উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং নতুন ফিচারগুলোর জন্য প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করেছে।
বড় স্ক্রিন, উন্নত ডিসপ্লে
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে রয়েছে ৬.৯ ইঞ্চির সুপার রেটিনা এক্সডিআর (Super Retina XDR) ডিসপ্লে, যা আগের মডেলগুলোর তুলনায় বড় এবং উন্নত। ডিসপ্লেটি ১২০ হার্টজ পর্যন্ত রিফ্রেশ রেট সমর্থন করে, ফলে স্ক্রলিং ও অ্যানিমেশন আরও মসৃণ। এছাড়া, ডিসপ্লের সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা ২০০০ নিটস পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্পষ্ট দৃশ্যমানতা নিশ্চিত করে।
শক্তিশালী পারফরম্যান্স
এই মডেলে ব্যবহৃত হয়েছে অ্যাপলের নতুন A18 Pro চিপসেট, যা ৩ ন্যানোমিটার প্রযুক্তিতে নির্মিত। এতে রয়েছে ৬-কোর সিপিইউ এবং ৬-কোর জিপিইউ, যা ডিভাইসটিকে দ্রুত এবং শক্তিশালী করে তোলে। এছাড়া, ৮ জিবি LPDDR5X র্যাম এবং সর্বোচ্চ ১ টেরাবাইট NVMe স্টোরেজের অপশন রয়েছে, যা মাল্টিটাস্কিং এবং স্টোরেজের জন্য যথেষ্ট।
উন্নত ক্যামেরা সিস্টেম
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের ক্যামেরা সিস্টেমে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন এসেছে। এতে রয়েছে:
- ৪৮ মেগাপিক্সেল প্রধান ক্যামেরা (ওয়াইড)
- ৪৮ মেগাপিক্সেল আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরা
- ১২ মেগাপিক্সেল ৫x টেলিফটো ক্যামেরা (পেরিস্কোপ লেন্স)
- TOF 3D LiDAR স্ক্যানার
এই ক্যামেরা সিস্টেমের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ১০x অপটিক্যাল জুম এবং ২৫x ডিজিটাল জুম করতে পারবেন। এছাড়া, উন্নত নাইট মোড, প্রোর (ProRAW) এবং প্রোরেস (ProRes) ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা রয়েছে।
নতুন ক্যামেরা কন্ট্রোল বাটন
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে একটি নতুন ক্যামেরা কন্ট্রোল বাটন যুক্ত করা হয়েছে, যা ডিভাইসের সাইডে অবস্থিত। এই বাটনের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা দ্রুত ক্যামেরা অ্যাপ খুলতে এবং বিভিন্ন ক্যামেরা ফিচার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, যেমন জুম, ফোকাস এবং শাটার।
অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স ও ভিজ্যুয়াল ইন্টেলিজেন্স
- আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে অ্যাপলের নতুন AI ফিচার 'অ্যাপল ইন্টেলিজেন্স' অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা আরও উন্নত করে। এতে রয়েছে:
- Siri-এর উন্নত ভাষা বোঝার ক্ষমতা
- কাস্টম ইমোজি তৈরির জন্য Genmoji
- এ ছাড়াও ভিজ্যুয়াল ইন্টেলিজেন্স, যা ক্যামেরার মাধ্যমে বস্তু বা স্থানের তথ্য প্রদান করে
এই ফিচারগুলো ব্যবহার করতে iOS 18.2 বা তার পরবর্তী সংস্করণ প্রয়োজন।
ব্যাটারি ও চার্জিং
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে ৪,৬৮৫ mAh ব্যাটারি রয়েছে, যা আগের মডেলের তুলনায় বড়। এটি ৩৩ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিডিও প্লেব্যাক এবং ২৯ ঘণ্টা পর্যন্ত ভিডিও স্ট্রিমিং সাপোর্ট করে। চার্জিংয়ের জন্য রয়েছে:
২৭ ওয়াট USB-C ফাস্ট চার্জিং
২৫ ওয়াট MagSafe চার্জিং
Qi 2 ওয়্যারলেস চার্জিং
সংযোগ ও অন্যান্য ফিচার
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সে রয়েছে:
Wi-Fi 7 এবং Bluetooth 5.3 সাপোর্ট
USB-C 3.2 Gen 2 পোর্ট (১০ Gbps)
IP68 রেটিং (৬ মিটার পানির নিচে ৩০ মিনিট পর্যন্ত সুরক্ষা)
স্যাটেলাইট SOS এবং Find My সাপোর্ট
এছাড়া, ডিভাইসটি চারটি রঙে পাওয়া যাচ্ছে: ডেজার্ট টাইটানিয়াম, ন্যাচারাল টাইটানিয়াম, হোয়াইট টাইটানিয়াম এবং ব্ল্যাক টাইটানিয়াম।
দাম ও অন্যান্য
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্সের মূল্য শুরু হয়েছে $১,১৯৯ থেকে (প্রায় ১,৪৯,০০০ টাকা)। এটি ২৫৬ জিবি, ৫১২ জিবি এবং ১ টেরাবাইট স্টোরেজ অপশনে পাওয়া যাচ্ছে।
আইফোন ১৬ প্রো ম্যাক্স তার বড় ডিসপ্লে, শক্তিশালী পারফরম্যান্স, উন্নত ক্যামেরা এবং নতুন AI ফিচারগুলোর মাধ্যমে স্মার্টফোনের অভিজ্ঞতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যারা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি এবং প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা খুঁজছেন, তাদের জন্য এটি একটি আদর্শ ডিভাইস হতে পারে। তবে, বড় আকার এবং উচ্চ মূল্যের কারণে এটি সবার জন্য উপযুক্ত নাও হতে পারে। তাই কেনার আগে নিজের প্রয়োজন এবং বাজেট বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।