নদীমাতৃক বাংলাদেশে নৌকার ইতিহাসও অনেক প্রাচীন। বর্তমানে আমাদের নদ-নদী, খাল-বিলের নাব্যতার সঙ্গে বিলুপ্ত হচ্ছে নৌকাও।
পাল তোলা সারি সারি নৌকার নৈসর্গিক দৃশ্য যেন আজ স্বপ্নের মতো।
এখন আর পাল তোলা নৌকার তেমন দেখা মেলে না। বর্ষাকাল এলে নদীতে যেটুকু সময়ে পানি থাকে, বিশেষ করে আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে, তখন কিছু নৌকা দেখা যায়। হাতেগোনা দু-একটা চোখে পড়লেও তাদের নৌকায় আগের মতো আর মানুষ ওঠে না। কিন্তু নৌকার ইতিহাস কিংবা ঐতিহ্য ম্লান হয়নি।
নৌকা নিয়ে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিতে প্রচলিত আছে অনেক গান। যেমন—‘পাল তোলা ওই নায়ের মাঝি। ভাটিয়ালি গায়/ ঘোমটা পরা গায়ের বধূ। শ্বশুরবাড়ি যায়। ও মাঝি ভাই ও মাঝি ভাই/ কোন সে গাঁয়ে যাও/রূপগঞ্জে মামার বাড়ি আমায় নিয়ে যাও/আষাঢ় মাসে ভাসা পানি/পুবালি বাতাসে বাদাম দেইখ্যা চাইয়া থাকি/আমারনি কেউ আসে…।
প্রাচীন বাংলার অন্যতম কেন্দ্র চন্দ্রকেতু গড়। এই চন্দ্রকেতু গড়ে বেশ কিছু পোড়ামাটির সিলে নৌকার ছবি আছে। সেখানে পাওয়া গেছে দুই ধরনের নৌকা। একটা হলো ‘এপ্য’ বা ‘এপগ্গ’, অন্যটি ‘জলধিসক্ল’ (জলধিশত্রু)। জলধিশত্রু ছিল যুদ্ধজাহাজ।
খ্রিষ্টাব্দের প্রথম শতকের পেরি প্লাসের বিবরণীতেও এপ্পগ নামের জলযানের কথা উল্লেখ পাওয়া যায়। মনসামঙ্গল ও চণ্ডিমঙ্গলেও বাংলা অঞ্চলে নদীপথ ও সমুদ্রপথে চলাচলে উপযোগী দাড়-টানা পণ্যবাহী জলযান নৌকা বা ডিঙ্গার কথা জানা যায়।
কবি মুকুন্দ রায় আর চণ্ডিমঙ্গলে ‘জঙ্গ’ নামের এক ধরনের বাণিজ্যিক জাহাজের কথা লিখেছিলেন। এখনো বাংলাদেশের ময়মনসিংহ জামালপুর শেরপুর এলাকায় ‘ঝঙ্গ’ নামের এক ধরনের নৌকা দেখা যায়, যা এই প্রাচীন জঙ্গেরই উত্তরসূরি। ১৫ শতকের শেষের দিকের কবি বিপ্রদাস পিপলয় এবং মুকুন্দ রায়ের বর্ণনায় ওঠে এসেছে নানান নৌকা।
সেসবের নাম ছিল— নরেশ্বর, সর্বজয়া, সুমঙ্গল, নবরত্ন, চিত্ররেখা, শশীমঙ্গল, মধুকর, দুর্গাবর, গুয়ারেখি, শঙ্খচূড়। তবে এসব নৌকা কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে।
',tags:[{name:"ইতিহাস",slug:"history",id:137,tagtitle:"",tagdescriptions:"",image:null,meta_title:"",meta_descriptions:""}],news_slug:"hhkpq3l7ek",story_type:"Story",watermark:null}}},video:{},photo:{},home:{loading:"IDLE",collections:[],error:null},section:{},tag:{},author:{}}