top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

মালচিং পদ্ধতিতে আত্মনির্ভরশীল, নড়াইলে কৃষিতে অনুকরণীয় ৩ ভাই

মালচিং পদ্ধতিতে আত্মনির্ভরশীল, নড়াইলে কৃষিতে অনুকরণীয় ৩ ভাই
মালচিং পদ্ধতিতে সবজি চাষ করে সফল হয়েছেন নড়াইলের তিন ভাই। স্থানীয় কৃষক ও তরুণদের কাছে তারা এখন অনুকরণীয়। ছবি: রাজনীতি ডটকম

তিন ভাই রমজান খান (২২), ওয়েস খান (৪২) ও এলাহী খান (৩৫)। মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারেননি কেউ। বেছে নেন চাষাবাদ। ভরসা ছিল ইউটিউব। তা দেখেই শুরু করেন মালচিং পদ্ধতিতে সবজির আবাদ। তাতেই মিলেছে সাফল্য।

এই পদ্ধতির আবাদে নড়াইলের কালিয়া পৌরসভাধীর ঘোষপাড়ার তিন ভাই হয়েছেন আত্মনির্ভরশীল। উপার্জন করছেন লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, বিষমুক্ত সবজি উৎপদন করে সাড়া ফেলেছেন এলাকায়। এখন অন্য কৃষকদের কাছেও তারাই হয়ে গেছেন অনুকরণীয়।

চাকরির পেছনে না ছুটে তিন ভাই তাদের বাড়ির পাশের ক্ষেতে গড়ে তোলেন কৃষি খামার। সাত বছর আগে শুরুটা করেন রমজান খান। পড়ালেখায় কিছু না করতে পারলেও কৃষিতে যুক্ত হয়েই পেয়েছেন সাফল্য। প্রথমে আবাদ করেন শসা।

রমজান জানান, কোনো অভিজ্ঞতা বা প্রশিক্ষণ না থাকায় ইউটিউব দেখে পরে মালচিং পদ্ধতিতে শশার পাশাপাশি আগাম জাতের টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষাবাদ শুরু করেন তিনি। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। বরং খামারে যুক্ত করে নেন আপন দুই বড় ভাইকেও, যাদের মধ্যে এক ভাই প্রবাস ফেরত। এখন তাদের কৃষি খামার থেকে খরচ বাদেই প্রতি মাসে আয় হচ্ছে প্রায় লাখ টাকা।

রমজান খান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, এ বছর শুরুতে ১৮০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে টমেটো বিক্রি করেছি। গত ১২ বছরের মধ্যে টমেটোর দাম সর্বোচ্চ পেয়েছি। এ ছাড়া সাথী ফসল হিসেবে টমেটোর সঙ্গে বাঁধাকপির চাষ করে সাফল্য পেয়েছি। পাশের দুটি জমিতে বেগুন ও মরিচ আবাদ হয়েছে। তিনটি জমি মিলে বর্তমানে ৫০ শতকে চাষাবাদ করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের তিন ভাইয়ের এই কৃষি খামারে এখন আরও কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। সবাই মিলে কাজ করছি। ভালো ফলন পেতে কৃষি কর্মকর্তারাও সার্বিক সহযোগিতা করে থাকেন।

Narail Vegetable Cultivation Using Malching 21-04-2025 (2)

নিজের খামার থেকে টমেটো তুলছেন রমজান খান। ছবি: রাজনীতি ডটকম

কৃষিকে একটি ভালো ব্যবসা উল্লেখ করে সফল কৃষি উদ্যোক্তা রমজান বলেন, অনেক শিক্ষিত তরুণ চাকরির চেষ্টায় বেকার বসে থাকেন। চাকরি পেতে ব্যর্থ হয়ে হাতাশাগ্রস্থ পড়েন। অনেকে ধারদেনা ও ঋণের টাকায় বিদেশ যাওয়ার পথে প্রতারণার শিকার হন। অথচ তাদের কৃষি জমি থাকতেও সেদিকে মনোযোগ দেন না।

কৃষি কর্মকর্তারা জানান, বিভিন্ন ধরনের বস্তু দিয়ে যখন গাছপালার গোড়া, সবজি ক্ষেত ও বাগানের বেডের জমি বিশেষ পদ্ধতিতে ঢেকে দেওয়া হয়, তাকে বলা হয় মালচ। আর এ পদ্ধতিতে চাষাবাদকেই বলা হয় মালচিং।

এ পদ্ধতির সুবিধা তুলে ধরে রমজান বলেন, এ পদ্ধতিতে ক্ষেতের পানি সূর্যের তাপ ও বাতাসে দ্রুত উড়ে যায় না। ফলে সেচ লাগে অনেক কম। শীতকালে মালচ ব্যবহার করলে মাটিতে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা ধরে রাখা সম্ভব হয়। আবার গরম কালে মাটি ঠান্ডা থাকে। অনেক পোকামাকড়ের আক্রমণও রোধ করা যায়। ফলে বাড়তি কীটনাশক লাগে না।

রমজানের বড় ভাই ওয়েস খান বলেন, আমরা আধুনিক পদ্ধতিতে টমেটো, বেগুন, মরিচ ও বাঁধাকপির চাষ করে লাভবান হয়েছি। টাটকা সবজিগুলো বাজারে নিলে আগেভাগে বিক্রি হয়ে যায়। ভালো কিছু করার মধ্যে কত যে আনন্দ, তা আমরা তিন ভাই বাস্তবে উপভোগ করি। অথচ অনেকেই চায়ের দোকানে বসে অলস সময় কাটায়, কিন্তু বাস্তবে কিছুই করে না।

আরেক ভাই এলাহী খান বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর বিদেশে ছিলাম। দেশে এসে ছোট ভাই রমজানের সঙ্গে কৃষিকাজে যোগ দিয়েছি। বিদেশে কঠোর পরিশ্রমের চেয়ে ক্ষেতখামারে কম কষ্টে অনেক ভালো আছি। সব ফসলের ফলনও ভালো পাচ্ছি।

পাশের সালামাবাদ ইউনিয়নের জয়পুর গ্রামের জব্বার তালুকদার তিন ভাইয়ের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন কৃষিতে নিযুক্ত হতে। তিনি রাজনীতি ডটকমকে বলেন, রমজানসহ তিন ভাইয়ের সাফল্য দেখে এলাকার অনেক বেকার তরুণ এ ধরনের কৃষি খামার গড়ে তুলতে শুরু করেছে। আমিও একজন স্মার্ট কৃষি উদ্যোক্তা হতে চাই। রমজানদের কৃষি খামার দেখে খুব ভালো লেগেছে। উদ্যোক্তা হিসেবে এখান থেকে অনুপ্রেরণা পেয়েছি।

স্থানীয় একটি বীজ কোম্পানির কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, রমজানদের ক্ষেতে বাহুবলি টমেটো, প্রীতম ও সুপার হট বেগুন চাষাবাদ করা হয়েছে। এই জাতগুলো এখানকার মাটি ও আবহাওয়ায় উপযোগী। আধুনিক পদ্ধতির চাষাবাদে ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন, তেমনি এলাকার বেকারত্ব দূর হচ্ছে।

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা রুবেল হাওলাদার বলেন, রমজানদের তিন ভাইয়ের সাফল্য এলাকায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা দিয়েছে। এখানে নিয়মিত বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে গুরুত্বারোপ করা হয়।

রুবেল হাওলাদার আরও বলেন, মালচিং পদ্ধতিতে চাষাবাদ করায় এসব ক্ষেতখামারে সরাসরি কোনো কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষাবাদে কৃষি বিভাগ সব সময় সহযোগিতা করে থাকে। কালিয়া তথা নড়াইল জেলায় উৎপাদিত সবজি শতভাগ বিষমুক্ত হবে— আমরা সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।

সব স্থানেই মালচিং পদ্ধতি কার্যকর জানিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, পাহাড়ি এলাকা, এমনকি টিলা বা পাহাড়ের ঢাল এবং লালমাটি এলাকাতেও স্বল্প খরচে মালচিং প্রযুক্তি কার্যকর। লেবু, পেয়ারা, কাঁঠাল, আম, নারিকেল, কলা, কমলা, আনারস, বাতাবি লেবু, পেঁপে, আদা, হলুদের মতো ফল বা সবজি গাছে এ পদ্ধতিতে এক-দুই সপ্তাহ পর একবার পানি দিয়েও আবাদ চালিয়ে নেওয়া সম্ভব।

r1 ad
top ad image