
শাহরিয়ার শরীফ

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় দলে যখন প্রার্থী ঘোষণা শেষ, তখন ছোট দলগুলোর নেতাদের ঘুম হারাম। বিশেষ করে এতদিন রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে সরব থাকা দলগুলোর নেতারা বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
পছন্দের আসন বিএনপির থেকে ছাড় পেতে এরই মধ্যে কেউ কেউ নিজের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। কেউ এখনো অপেক্ষায় বিএনপির ডাকের। চাহিদামতো আসন না পেলেও অন্তত দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকের আসন নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কোনো কোনো নেতা।
এবারের নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধনী বলছে, ভোটের জন্য একাধিক দল মিলিয়ে জোট করলেও জোটের প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনের মাঠে লড়তে হবে।
মাঠের পরিস্থিতি বলছে, এ বিধান সংশোধন করায় বিপাকে পড়েছেন বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতারা। কারণ ভোটের মাঠে বিজয়ী হতে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন না করলে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না— এটিকেই বাস্তবতা মানছেন সবাই। ফলে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাড় পেলেও আরপিও সংশোধনীর মারপ্যাচে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার জন্য দল ছেড়ে সরাসরি যোগ দিতে হচ্ছে বিএনপিতেই।
অন্যদিকে দলগুলোকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিও নানা হিসাব-নিকাশ করছে। কোনো আসন হারানোর ঝুঁকি নিতে একেবারেই নারাজ দলটির নেতারা।
বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম তার দল বিলুপ্ত করেছেন। গত ৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে।

এ তালিকায় সোমবার নাম লিখিয়েছেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা। তিনিও নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা রয়েছে তার।
এহসানুল হুদার যোগদান অনুষ্ঠানে অবশ্য তাকে প্রার্থী করার বিষয়টি পরিষ্কার করেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ আসনে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার সময় বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এহসানুল হুদা যোগ দেওয়ার পর সে সমীকরণ পালটানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর একাধিক নেতা বলছেন, শাহাদাত হোসেন সেলিম ও এহসানুল হুদার মতো ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে লড়তে নিজেদের দল ছাড়তে প্রস্তুত হচ্ছেন মিত্র ও সমমনা জোটের অন্তত ১০ শীর্ষ নেতা। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাকিরাও শিগগিরই নিজ নিজ দল থেকে পদত্যাগ করে বা দলকে নিয়েই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-১ আসনে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন ছাড়ের বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির সবুজ সংকেত পেয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ববি হাজ্জাজ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য। এই তিন নেতা দল ছেড়ে বিএনপিকে যোগ দিতে পারেন— এমন আভাস মিলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সমমনা দলের একজন শীর্ষ নেতা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আসনের যে চাহিদা দিয়েছি তা পুরোটা দিতে পারবে না বিএনপি। আবার আরপিও অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো— শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে যে আসনগুলোতে সমঝোতা হবে, সেগুলোতে ধানের শীষ নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য বিএনপিতে যোগ দেওয়ার আলোচনা আছে। অনেকেই সেদিকে যেতে হতে পারে।’

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের একজন ঘনিষ্ঠ নেতা অবশ্য দাবি করেছেন, ববি হাজ্জাজের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার নিছক গুঞ্জন। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু এখনো হয়নি। আমরাও গুঞ্জন শুনছি। হলে জানতে পারবেন।’ আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
মিত্র জোটের অনিবন্ধিত দলগুলোর ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসব দলের প্রার্থীদের দল থেকে পদত্যাগের প্রয়োজন পড়ছে না। নিজ নিজ প্রতীকেই তারা নির্বাচনে থাকতে চাইছেন। এ নিয়ে গত বুধবার থেকে মিত্র দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকগুলো বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে।
আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বৈঠক শুরু করে বিএনপি। বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় দলটি।
পাশাপাশি ১২ দলীয় জোটকে আরও একটি আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। অন্য শরিক দলগুলোকেও ভিন্নভাবে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), পাঁচ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপি। অন্যদের সঙ্গেও বৈঠক হবে শিগগিরিই।
এসব দল ও জোটের সব নেতা আবার ধানের শীষে লড়তে রাজি নন। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকিসহ আরও কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতা নিজেদের দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলমান।
এর মধ্যে অবশ্য গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপি বৈঠক করলেও কোনো ফলাফল আসেনি। কারণ বিএনপি মাত্র দুটি আসনে ছাড় দিতে চেয়েছে দলটিকে। বিপরীতে গণঅধিকারের নির্বাহী পরিষদ বিএনপির কাছে অন্তত ১০টি আসন চেয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, দুটি আসন দিয়ে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ। নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, অন্তত ১০টি আসন দিলে সমঝোতা হতে পারে। বিএনপি রাজি না হওয়ায় আমরা এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই অবস্থান নিয়েছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক এবং দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। তাদের দুজনের জন্য দুটি আসনে বিএনপি ছাড় দেবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে সাবেক বিএনপি নেতা রেদোয়ান আহমেদ বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন— এমন গুঞ্জনও আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কল করা হলেও রেদোয়ান আহমেদ রিসিভ ধরেননি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আসন বেশি চেয়েছিলাম, কিন্তু একটি আসনে বিএনপি ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে। সে হিসাবে আমি আমার আসনে কাজ করছি। নির্বাচন তো ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে করতে চাই।’
বিএনপিতে যোগদান করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘এখন পর্যান্ত এমন কোনো প্রস্তাব আসেনি। এলে চিন্তা করা যাবে।’
এদিকে দীর্ঘদিনের মিত্রদের যোগদানের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিজের দল নিয়ে তারা মাঠে ছিলেন। নির্বাচনে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। যারা যোগ দিচ্ছেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই। শিগগিরই আমরা মিত্রদলগুলোর সঙ্গে আসন নিয়ে সমস্যার সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
গত ৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।
এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পর বিএনপি এ ধারার বিরোধিতা করে দাবি জানায়, জোটভিত্তিক নির্বাচনে এক দলের প্রার্থী অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি) এই সংশোধন বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নেয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সরকার আগের প্রস্তাব অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারি করেছে। ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নিবন্ধিত দল জোট করলেও জোটের মনোনীত প্রার্থী অন্য দলের প্রতীকে ভোট করতে পারবেন না, তাকে নিজের দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
আরপিওর এ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে তথা নির্বাচনে জোট করলে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করার সুযোগ চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর একটি রিট হয়। গত ১১ ডিসেম্বর জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
ফলে আরপিও সংশোধনীই বহাল থাকছে। প্রার্থীদেরও জোট করলেও প্রতীক ব্যবহার করতে হবে নিজ দলেরই।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বড় দলে যখন প্রার্থী ঘোষণা শেষ, তখন ছোট দলগুলোর নেতাদের ঘুম হারাম। বিশেষ করে এতদিন রাজপথে যুগপৎ আন্দোলনে সরব থাকা দলগুলোর নেতারা বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে দৌড়ঝাঁপ করছেন।
পছন্দের আসন বিএনপির থেকে ছাড় পেতে এরই মধ্যে কেউ কেউ নিজের দল বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। কেউ এখনো অপেক্ষায় বিএনপির ডাকের। চাহিদামতো আসন না পেলেও অন্তত দলের প্রধান ও সাধারণ সম্পাদকের আসন নিশ্চিত করতে প্রাণপণ চেষ্টা চালাচ্ছেন কোনো কোনো নেতা।
এবারের নির্বাচন সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সংশোধনী বলছে, ভোটের জন্য একাধিক দল মিলিয়ে জোট করলেও জোটের প্রার্থীকে শেষ পর্যন্ত নিজ দলের প্রতীকেই নির্বাচনের মাঠে লড়তে হবে।
মাঠের পরিস্থিতি বলছে, এ বিধান সংশোধন করায় বিপাকে পড়েছেন বিএনপির সমমনা দলগুলোর নেতারা। কারণ ভোটের মাঠে বিজয়ী হতে বিএনপির প্রতীক ধানের শীষে নির্বাচন না করলে খুব একটা সুবিধা করতে পারবেন না— এটিকেই বাস্তবতা মানছেন সবাই। ফলে জোটের প্রার্থী হিসেবে বিএনপির পক্ষ থেকে ছাড় পেলেও আরপিও সংশোধনীর মারপ্যাচে ধানের শীষ প্রতীক পাওয়ার জন্য দল ছেড়ে সরাসরি যোগ দিতে হচ্ছে বিএনপিতেই।
অন্যদিকে দলগুলোকে আসন সমঝোতার মাধ্যমে ছাড় দেওয়ার ক্ষেত্রে বিএনপিও নানা হিসাব-নিকাশ করছে। কোনো আসন হারানোর ঝুঁকি নিতে একেবারেই নারাজ দলটির নেতারা।
বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিয়ে নির্বাচন করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (বিএলডিপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম তার দল বিলুপ্ত করেছেন। গত ৯ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। তাকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনে বিএনপির প্রার্থীও ঘোষণা করা হয়েছে।

এ তালিকায় সোমবার নাম লিখিয়েছেন জাতীয় দলের চেয়ারম্যান এহসানুল হুদা। তিনিও নিজের দল বিলুপ্ত করে বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। কিশোরগঞ্জ-৫ আসন থেকে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার কথা রয়েছে তার।
এহসানুল হুদার যোগদান অনুষ্ঠানে অবশ্য তাকে প্রার্থী করার বিষয়টি পরিষ্কার করেননি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ আসনে দ্বিতীয় দফায় প্রার্থী ঘোষণার সময় বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবালের নাম ঘোষণা করে বিএনপি। এহসানুল হুদা যোগ দেওয়ার পর সে সমীকরণ পালটানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনো আসেনি।
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর একাধিক নেতা বলছেন, শাহাদাত হোসেন সেলিম ও এহসানুল হুদার মতো ধানের শীষ প্রতীকে ভোটে লড়তে নিজেদের দল ছাড়তে প্রস্তুত হচ্ছেন মিত্র ও সমমনা জোটের অন্তত ১০ শীর্ষ নেতা। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে বাকিরাও শিগগিরই নিজ নিজ দল থেকে পদত্যাগ করে বা দলকে নিয়েই ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করবেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুর-১ আসনে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার এবং নড়াইল-২ আসনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে আসন ছাড়ের বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে বিএনপি।
এদিকে বিএনপির সবুজ সংকেত পেয়ে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) ববি হাজ্জাজ প্রস্তুতি নিচ্ছেন ঢাকা-১৩ আসন থেকে নির্বাচন করার জন্য। এই তিন নেতা দল ছেড়ে বিএনপিকে যোগ দিতে পারেন— এমন আভাস মিলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির সমমনা দলের একজন শীর্ষ নেতা রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আসনের যে চাহিদা দিয়েছি তা পুরোটা দিতে পারবে না বিএনপি। আবার আরপিও অনুযায়ী দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করতে হবে। সেক্ষেত্রে বাস্তবতা হলো— শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে যে আসনগুলোতে সমঝোতা হবে, সেগুলোতে ধানের শীষ নিয়েই নির্বাচন করতে হবে। এ জন্য বিএনপিতে যোগ দেওয়ার আলোচনা আছে। অনেকেই সেদিকে যেতে হতে পারে।’

এনডিএম চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের একজন ঘনিষ্ঠ নেতা অবশ্য দাবি করেছেন, ববি হাজ্জাজের বিএনপিতে যোগ দেওয়ার নিছক গুঞ্জন। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘এমন কিছু এখনো হয়নি। আমরাও গুঞ্জন শুনছি। হলে জানতে পারবেন।’ আসন সমঝোতার বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বলে জানান তিনি।
মিত্র জোটের অনিবন্ধিত দলগুলোর ক্ষেত্রে আবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। এসব দলের প্রার্থীদের দল থেকে পদত্যাগের প্রয়োজন পড়ছে না। নিজ নিজ প্রতীকেই তারা নির্বাচনে থাকতে চাইছেন। এ নিয়ে গত বুধবার থেকে মিত্র দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা জানিয়েছেন, বৈঠকগুলো বেশ ফলপ্রসূ হয়েছে।
আসন বণ্টন নিয়ে সৃষ্ট মতবিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে ‘ওয়ান-টু-ওয়ান’ বৈঠক শুরু করে বিএনপি। বুধবার প্রথম দিনের বৈঠকে ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটকে একটি করে আসনে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেয় দলটি।
পাশাপাশি ১২ দলীয় জোটকে আরও একটি আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা চলছে। অন্য শরিক দলগুলোকেও ভিন্নভাবে মূল্যায়নের আশ্বাস দিয়েছে বিএনপি।
এরই ধারাবাহিকতায় লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), পাঁচ দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণফোরামের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি নিয়ে বৈঠক করেছে বিএনপি। অন্যদের সঙ্গেও বৈঠক হবে শিগগিরিই।
এসব দল ও জোটের সব নেতা আবার ধানের শীষে লড়তে রাজি নন। নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বাংলাদেশের জাতীয় পার্টির (বিজেপি) আন্দালিব রহমান পার্থ, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকিসহ আরও কয়েকটি দলের শীর্ষ নেতা নিজেদের দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে চান। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে বিএনপির আলোচনা চলমান।
এর মধ্যে অবশ্য গণঅধিকার পরিষদের সঙ্গে আসন সমঝোতা নিয়ে বিএনপি বৈঠক করলেও কোনো ফলাফল আসেনি। কারণ বিএনপি মাত্র দুটি আসনে ছাড় দিতে চেয়েছে দলটিকে। বিপরীতে গণঅধিকারের নির্বাহী পরিষদ বিএনপির কাছে অন্তত ১০টি আসন চেয়েছে।
গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদের সদস্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়ক আবু হানিফ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, দুটি আসন দিয়ে বিএনপির সঙ্গে আসন সমঝোতায় যাচ্ছে না গণঅধিকার পরিষদ। নির্বাহী পরিষদের সদস্যরা বলেছেন, অন্তত ১০টি আসন দিলে সমঝোতা হতে পারে। বিএনপি রাজি না হওয়ায় আমরা এককভাবে ৩০০ আসনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
একই অবস্থান নিয়েছেন এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমদের ছেলে অধ্যাপক ওমর ফারুক এবং দলটির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ। তাদের দুজনের জন্য দুটি আসনে বিএনপি ছাড় দেবে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে সাবেক বিএনপি নেতা রেদোয়ান আহমেদ বিএনপিতে যোগ দিতে পারেন— এমন গুঞ্জনও আছে।
এ বিষয়ে কথা বলতে একাধিকবার কল করা হলেও রেদোয়ান আহমেদ রিসিভ ধরেননি।
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আমরা আসন বেশি চেয়েছিলাম, কিন্তু একটি আসনে বিএনপি ছাড় দেওয়ার কথা বলেছে। সে হিসাবে আমি আমার আসনে কাজ করছি। নির্বাচন তো ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে করতে চাই।’
বিএনপিতে যোগদান করার বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, ‘এখন পর্যান্ত এমন কোনো প্রস্তাব আসেনি। এলে চিন্তা করা যাবে।’
এদিকে দীর্ঘদিনের মিত্রদের যোগদানের বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে নিজের দল নিয়ে তারা মাঠে ছিলেন। নির্বাচনে তাদের অবশ্যই মূল্যায়ন করা হবে। যারা যোগ দিচ্ছেন আমরা তাদের স্বাগত জানাই। শিগগিরই আমরা মিত্রদলগুলোর সঙ্গে আসন নিয়ে সমস্যার সমাধানে পৌঁছাতে পারব।’
গত ৩ নভেম্বর আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত গেজেট অনুযায়ী, আসন্ন নির্বাচনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে অংশ নিলেও প্রার্থীদের নিজ নিজ দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে।
এমন বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ, ২০২৫ জারি করা হয়। এর আগে গত ২৩ অক্টোবর উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আরপিও সংশোধনের খসড়ায় নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়।
বৈঠকের পর বিএনপি এ ধারার বিরোধিতা করে দাবি জানায়, জোটভিত্তিক নির্বাচনে এক দলের প্রার্থী অন্য দলের প্রতীক ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী ও ন্যাশনাল কনসেনসাস পার্টি (এনসিপি) এই সংশোধন বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নেয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর এই টানাপোড়েনের মধ্যেই সরকার আগের প্রস্তাব অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারি করেছে। ফলে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো নিবন্ধিত দল জোট করলেও জোটের মনোনীত প্রার্থী অন্য দলের প্রতীকে ভোট করতে পারবেন না, তাকে নিজের দলের প্রতীকেই ভোট করতে হবে।
আরপিওর এ সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে তথা নির্বাচনে জোট করলে জোটের যেকোনো দলের প্রতীক নিয়ে ভোট করার সুযোগ চেয়ে গত ২৬ নভেম্বর একটি রিট হয়। গত ১১ ডিসেম্বর জোটবদ্ধ নির্বাচনে নিজ নিজ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধানের বৈধতা প্রশ্নে জারি করা রুল খারিজ করে দেন হাইকোর্ট।
ফলে আরপিও সংশোধনীই বহাল থাকছে। প্রার্থীদেরও জোট করলেও প্রতীক ব্যবহার করতে হবে নিজ দলেরই।

বিএনপি মহাসচিবের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। তিনি বলেন, সরকারের প্রতি যে আস্থা ছিল, বিশ্বাস করি তারা সেটি রাখবে। দেশে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিতে সরকারকে আরও সচেতন হওয়ার আহবান জানাচ্ছি।
৫ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনী সমীকরণে জোটের শরিক জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে আসনটি ছেড়ে দিয়েছে বিএনপি। এতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ধানের শীষের টিকিট পাওয়ার স্বপ্নভঙ্গ হলো রুমিন ফারহানার। প্রভাবশালী প্রার্থী মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীবের জন্য আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় এলাকায় বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়ে
৫ ঘণ্টা আগে
সমঝোতা অনুযায়ী, জমিয়তের প্রার্থীরা নির্দিষ্ট চারটি আসনে তাদের নিজস্ব প্রতীক ‘খেজুর গাছ’ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
৬ ঘণ্টা আগে
বিএনপি এ সিদ্ধান্ত জানালে সোমবার গণঅধিকার পরিষদের জাতীয় নির্বাহী কমিটি বৈঠকে বসে। বৈঠকে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা জানান, বিএনপির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাত্র দুটি আসনে সমঝোতায় তারা রাজি নন। অন্তত ১০টি আসন পেলে আসন সমঝোতা করা সম্ভব বলে মত দেন অধিকাংশ নেতা।
১৯ ঘণ্টা আগে