জাবি প্রতিনিধি
ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাসহ ভোট কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ এবং পাঁচটি প্যানেল ছাড়াও তিনজন শিক্ষকের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখন চলছে ভোট গণনা। তবে ভোট বর্জন করা প্যানেলগুলো এই নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে।
সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ক্যাম্পাস জুড়ে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ২১টি হলে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ভোট নেওয়া হয় বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ মিলতে শুরু করে। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভোটারদের।
নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকলে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা ও শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে ভোট গ্রহণ আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী ফজিলাতুন্নেছা কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি হাসান। এরপর ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটে তাজউদ্দীন হলেও।
এদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভুল ছিল বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, কার্যকরী সদস্য পদে তিনজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যালটে একজনের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছিল। পরে সেই ব্যালট সংশোধন করা হয়।
ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা। ছবি: ফোকাস বাংলা
অন্যদিকে নারী ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব কেন্দ্রে নারী সাংবাদিকরাও বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এর মধ্যে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে এই নির্বাচনের জন্য। ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই নেওয়া হয়েছে ওএমআর মেশিন। পরে তাদের দাবির মুখে ওই ওএমআর মেশিন ব্যবহার করে ভোট গণনার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
পালটা অভিযোগ ছিল এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলেরও। এই জোটের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, আমরা গতকাল থেকে দেখতে পেয়েছি, নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনারের যে পরিমাণ প্রস্তুতি থাকার কথা, তার একটি প্রস্তুতিও তারা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদলের প্যানেল। সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, ভোটকেন্দ্র মনিটর করার জন্য জামায়াত নেতার কোম্পানি ঘিরে টেলিকাস্টসহ ভিডিও ক্যামেরা সাপ্লাই দিয়ে সিসি টিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল। ছবি: সংগৃহীত
বৈশাখী আরও বলেন, আমাদের বিজয় ব্যাহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটছে না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।
পরে একে একে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ভোট বর্জন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল— ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
লিখিত বক্তব্যে শরণ বলেন, গতকাল রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত ২টাই পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেওয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দায় কেবল এবং কেবলমাত্র এই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
এমনকি নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত তিন শিক্ষক পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তারা হলেন— গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা।
গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, তাজউদ্দীন হল, কবি নজরুল হল, ১৫ নম্বর ছাত্রী হল, খালেদা জিয়া হল, জাহানার ইমাম হলসহ প্রায় সব হলেই অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম ছিল। একটি বিশেষ দলের, বিশেষ গোষ্ঠীর যে রকম উগ্রপন্থি আচরণ ছিল, সে কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং জাতীয়বাদী ছাত্রদল এরই মধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছে। সে জন্য আমরা শিক্ষকরাও যে দ্বায়িত্ব পালন করছিলাম তা থেকে অব্যহতি নিচ্ছি।
জাবির তিন শিক্ষকও জাকসু নির্বাচন বর্জন করেছেন। ছবি: ভিডিও থেকে
অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, আমাদের মনে হয়েছে, আজ যে নির্বাচন হয়েছে সেটি একটি সাজানো নাটক। এ নাটক থেকে আমাদের সরে আসা দরকার। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম বলেন, আমাদের প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী আছে, যাদের নাম ভোটার লিস্টে ওঠে নাই। এটা কেন হলো— এ প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনকে অবশ্যই দিতে হবে। রাত থেকে অনেক কিছু হয়ে গেছে। আমরা অনেকগুলো অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারপরও আমাদের অনুরোধগুলোকে কর্ণপাত করা হয়নি। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করছি।
এর আগে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলছিলেন। কেন্দ্রে ভোটের চেয়ে ব্যালট বেশি যাওয়া, প্রতিপক্ষের আচরণবিধি ভঙ্গ করা, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করা, পোলিং এজেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডোপটেস্টের ফলাফল না আসা, নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করাসহ নানা অভিযোগ করেন প্রার্থী ও ভোটাররা।
জাকসুতে এবার মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ছয় হাজার ১১৫ জন, ছাত্রী পাঁচ হাজার ৭২৮ জন। এই নির্বাচনে জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি ও হল সংসদের জন্য ১৫টি করে পদে ভোট দেবেন একেকজন ভোটার।
এবার জাকসু ভোটের মোট ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ১৩২ জন, নারী প্রার্থী ৪৬ জন। অন্যদিকে ২১টি হল সংসদে ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৪৭ জন। এর মধ্যে ১১ ছাত্র হলে প্রার্থী ৩১৬ জন, ১০ ছাত্রী হলে প্রার্থী ১৩১ জন।
ব্যাপক অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলাসহ ভোট কারচুপি-জালিয়াতির অভিযোগ এবং পাঁচটি প্যানেল ছাড়াও তিনজন শিক্ষকের ভোট বর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। এখন চলছে ভোট গণনা। তবে ভোট বর্জন করা প্যানেলগুলো এই নির্বাচন বাতিলের দাবি করছে।
সব মিলিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ক্যাম্পাস জুড়ে বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করছেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের।
বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ২১টি হলে শুরু হয় ভোট গ্রহণ। ভোট নেওয়া হয় বিকেল ৫টা পর্যন্ত। ভোট গ্রহণের শুরু থেকেই নানা ধরনের বিশৃঙ্খলা, অনিয়ম আর অব্যবস্থাপনার অভিযোগ মিলতে শুরু করে। এর মধ্যে বৃষ্টি শুরু হলে ভোগান্তিতে পড়তে হয় ভোটারদের।
নির্বাচনে নানা অনিয়মের অভিযোগ আসতে থাকলে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা হল কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা ও শহিদ তাজউদ্দীন আহমেদ হলে ভোট গ্রহণ আধা ঘণ্টা বন্ধ রাখতে হয়।
ছাত্রদলের জিএস প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী ফজিলাতুন্নেছা কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে তাকে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। পরে ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করেন ছাত্রদলের ভিপি প্রার্থী শেখ সাদি হাসান। এরপর ওই কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দেওয়া হয়। একই ঘটনা ঘটে তাজউদ্দীন হলেও।
এদিকে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল সংসদ নির্বাচনে ব্যালট পেপারে ভুল ছিল বলে জানিয়েছেন ভোটাররা। তারা বলছেন, কার্যকরী সদস্য পদে তিনজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার কথা থাকলেও ব্যালটে একজনের নামের পাশে টিক চিহ্ন দিতে বলা হয়েছিল। পরে সেই ব্যালট সংশোধন করা হয়।
ডাকসু নির্বাচনে ভোট দিতে লাইনে দাঁড়ানো ভোটাররা। ছবি: ফোকাস বাংলা
অন্যদিকে নারী ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে বাধার মুখে পড়তে হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব কেন্দ্রে নারী সাংবাদিকরাও বাধার মুখে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন।
এর মধ্যে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, জামায়াতে ইসলামীর একজন নেতার প্রতিষ্ঠান থেকে ব্যালট পেপার ছাপানো হয়েছে এই নির্বাচনের জন্য। ওই প্রতিষ্ঠান থেকেই নেওয়া হয়েছে ওএমআর মেশিন। পরে তাদের দাবির মুখে ওই ওএমআর মেশিন ব্যবহার করে ভোট গণনার পরিকল্পনা বাতিল করা হয়।
পালটা অভিযোগ ছিল এই নির্বাচনে ছাত্রশিবির সমর্থিত সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলেরও। এই জোটের ভিপি প্রার্থী আরিফ উল্লাহ বলেন, আমরা গতকাল থেকে দেখতে পেয়েছি, নির্বাচন কমিশন ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনারের যে পরিমাণ প্রস্তুতি থাকার কথা, তার একটি প্রস্তুতিও তারা ভালোভাবে গ্রহণ করেনি।
ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার ঘণ্টা দেড়েক আগে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেয় ছাত্রদলের প্যানেল। সংবাদ সম্মেলনে এই প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) প্রার্থী তানজিলা হোসেন বৈশাখী বলেন, ভোটকেন্দ্র মনিটর করার জন্য জামায়াত নেতার কোম্পানি ঘিরে টেলিকাস্টসহ ভিডিও ক্যামেরা সাপ্লাই দিয়ে সিসি টিভির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে পুরো ভোটকেন্দ্র শিবিরকে মনিটর করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলন করে ভোট বর্জন করে ছাত্রদল। ছবি: সংগৃহীত
বৈশাখী আরও বলেন, আমাদের বিজয় ব্যাহত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে এক হয়ে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ব্যবস্থা করেছে। এই নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের রায়ের সত্যিকার প্রতিফলন ঘটছে না। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করতে বাধ্য হচ্ছি।
পরে একে একে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ভোট বর্জন করেছে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের চারটি প্যানেল— ‘সম্প্রীতির ঐক্য’, ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, ‘স্বতন্ত্র অঙ্গীকার পরিষদ’ ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের আংশিক প্যানেল। বেশ কয়েকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীও তাদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন চত্বরে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের প্যানেলগুলোর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী শরণ এহসান।
লিখিত বক্তব্যে শরণ বলেন, গতকাল রাতে ব্যালট বাক্স নিয়ে হট্টগোল থেকে শুরু করে রাত ২টাই পোলিং এজেন্টের ঘোষণা দেওয়া, তার ফলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের পোলিং এজেন্ট ম্যানেজ করতে না পারা, পোলিং এজেন্টদের কাজ করতে না দেওয়া, নারী হলে পুরুষ প্রার্থী প্রবেশ, ভোটার লিস্টে ছবি না থাকা, আঙুলে কালির দাগ না দেওয়া, ভোটার হওয়ার পরও তালিকায় নাম না থাকা ইত্যাদি অনেক অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আর গাফিলতির কারণে এই নির্বাচনকে ঘিরে অনেক সন্দেহ আর প্রশ্ন ওঠার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
তিনি বলেন, এই দায় কেবল এবং কেবলমাত্র এই ব্যর্থ, অথর্ব এবং পক্ষপাতদুষ্ট নির্বাচন কমিশন আর প্রশাসনের আমরা এই অনিয়মের নির্বাচনকে বয়কট করেছি এবং দ্রুত সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়ায় নতুন করে তফসিল ঘোষণাসহ পুননির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি।
এমনকি নির্বাচন পরিচালনায় যুক্ত তিন শিক্ষক পর্যন্ত নির্বাচন নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের সিদ্ধান্তের কথা জানান। তারা হলেন— গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম ও অধ্যাপক শামিমা সুলতানা।
গণিত বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, তাজউদ্দীন হল, কবি নজরুল হল, ১৫ নম্বর ছাত্রী হল, খালেদা জিয়া হল, জাহানার ইমাম হলসহ প্রায় সব হলেই অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম ছিল। একটি বিশেষ দলের, বিশেষ গোষ্ঠীর যে রকম উগ্রপন্থি আচরণ ছিল, সে কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এবং জাতীয়বাদী ছাত্রদল এরই মধ্যে নির্বাচন বর্জন করেছে। সে জন্য আমরা শিক্ষকরাও যে দ্বায়িত্ব পালন করছিলাম তা থেকে অব্যহতি নিচ্ছি।
জাবির তিন শিক্ষকও জাকসু নির্বাচন বর্জন করেছেন। ছবি: ভিডিও থেকে
অধ্যাপক শামিমা সুলতানা বলেন, আমাদের মনে হয়েছে, আজ যে নির্বাচন হয়েছে সেটি একটি সাজানো নাটক। এ নাটক থেকে আমাদের সরে আসা দরকার। তাই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অধ্যাপক নাহরিন ইসলাম বলেন, আমাদের প্রচুর ছাত্র-ছাত্রী আছে, যাদের নাম ভোটার লিস্টে ওঠে নাই। এটা কেন হলো— এ প্রশ্নের উত্তর প্রশাসনকে অবশ্যই দিতে হবে। রাত থেকে অনেক কিছু হয়ে গেছে। আমরা অনেকগুলো অনুরোধ করেছি। কিন্তু তারপরও আমাদের অনুরোধগুলোকে কর্ণপাত করা হয়নি। তাই আমরা নির্বাচন বর্জন করছি।
এর আগে ভোট গ্রহণ শুরু হওয়ার পর সকাল থেকেই বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা নানা অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলছিলেন। কেন্দ্রে ভোটের চেয়ে ব্যালট বেশি যাওয়া, প্রতিপক্ষের আচরণবিধি ভঙ্গ করা, জামায়াত সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে ব্যালট পেপার ও ওএমআর মেশিন সরবরাহ করা, পোলিং এজেন্টের অনুমতি থাকলেও তাদের প্রবেশে বাধা দেওয়া, ডোপটেস্টের ফলাফল না আসা, নির্বাচনকে ‘ম্যানিপুলেট’ করাসহ নানা অভিযোগ করেন প্রার্থী ও ভোটাররা।
জাকসুতে এবার মোট ভোটার ১১ হাজার ৮৪৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ছয় হাজার ১১৫ জন, ছাত্রী পাঁচ হাজার ৭২৮ জন। এই নির্বাচনে জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদে ২৫টি ও হল সংসদের জন্য ১৫টি করে পদে ভোট দেবেন একেকজন ভোটার।
এবার জাকসু ভোটের মোট ১৭৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে পুরুষ প্রার্থী ১৩২ জন, নারী প্রার্থী ৪৬ জন। অন্যদিকে ২১টি হল সংসদে ৩১৫টি পদের বিপরীতে প্রার্থী হয়েছেন ৪৪৭ জন। এর মধ্যে ১১ ছাত্র হলে প্রার্থী ৩১৬ জন, ১০ ছাত্রী হলে প্রার্থী ১৩১ জন।
জামায়াত আমির ফেসবুকে লেখেন, ‘মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা। সত্যের ওপর অটল থাকা এবং প্রিয় জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনের ওপর আস্থাই আমাদের শক্তি।’
৭ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত ব্যালট পেপার দিয়ে জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। তিনি এতে কারচুপির আশঙ্কাও করছেন।
১১ ঘণ্টা আগেনির্বাচিত জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধনের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রাখে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় গেলে পরবর্তী সময়ে সংশোধনী সংবিধান আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
১১ ঘণ্টা আগে