top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

বাংলাদেশের ৪৫২ কোটি ডলার ফেরত দেবে পাকিস্তান?

বাংলাদেশের ৪৫২ কোটি ডলার ফেরত দেবে পাকিস্তান?

ঢাকায় ১৫ বছর পর হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের বৈঠক। মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, বৈঠক থেকে পাকিস্তানের কাছে পাওনা ৪ দশমিক ৫২ বিলিয়ন তথা ৪৫২ কোটি মার্কিন ডলার ফের চাইবে বাংলাদেশ। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে ন্যায্য হিস্যা হিসেবে এই অর্থ আনুষ্ঠানিকভাবে দাবি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের বিশ্লেষকরা বলছেন, এই দাবি বাংলাদেশ আগেও করেছে। কিন্তু অর্থ পাওয়া যায়নি। তবে দাবি অব্যাহত রাখতে হবে। অন্যদিকে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ও ইসলামাবাদভিত্তিক থিংকট্যাংক গ্রুপ সানোবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. কামার চিমারের বলছেন, বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক হলে পাকিস্তানের উচিত হবে বাংলাদেশের পাওনা পরিশোধ করে দেওয়া।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ ঢাকায় এসেছেন বুধবার (১৬ এপ্রিল)। বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে বৈঠক করবেন তিনি। সচিব পর্যায়ের এ বৈঠকে বাংলাদেশ পক্ষের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন। ২০১০ সালের পর বাংলাদেশে এই প্রথম পাকিস্তানের সঙ্গে সচিব পর্যায়ের বৈঠক হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, স্বাধীনতার পর পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনা ৪৫২ কোটি মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ১৯৭০ সালের ভোলা ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন র্পূব পাকিস্তানের জন্য পাঠানো ২০ কোটি ডলারের বৈদেশিক সহায়তা অন্যতম। এ ছাড়া আছে বিদেশি ঋণ, যা বাংলাদেশে ব্যয় হয়নি কিন্তু স্বাধীনতার পর দায় নিতে হয়েছে।

স্বাধীনতার পর পশ্চিম পাকিস্তানে কর্মরত বহু বাংলাদেশি সরকারি কর্মকর্তা দেশে ফিরে আসেন। কিন্তু পাকিস্তান সরকার তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও সঞ্চয়পত্রের অর্থ ফেরত দেয়নি।

এর পাশাপাশি অবিভক্ত পাকিস্তানের সম্পদ থেকে প্রায় ৪৩২ কোটি ডলারের ন্যায্য হিস্যার দাবিও বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে করে আসছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই অবিভক্ত পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশের অংশীদার ছিল বাংলাদেশ। বিদেশি মুদ্রা আর্জনে বাংলাদেশের অবদান ছিল ৫৪ শতাংশ। আর যেকোনো সমতার নীতি অনুসরণ করলেও বাংলাদেশ অন্তত ৫০ শতাংশ দাবি করতে পারে। এসব বিষয় নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তার একটি হিসাব তৈরি করেছে, যা দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে উঠতে পারে।

বাংলাদেশের পাওনার প্রশ্নে পাকিস্তানের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিশ্লেষক ও ইসলামাবাদভিত্তিক থিংকট্যাংক সানোবার ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. কামার চিমার বলেন, আমার অভিমত হলো— পাকিস্তানকে বাংলাদেশের পাওনার বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত। এটা নিয়ে পরিষ্কার আলাপ-আলোচনাও হওয়া দরকার। ঢাকায় আশা করি আলাপ হবে। পাকিস্তানেও হতে পারে। বাংলাদেশের যে দাবি তা ঠিক হলে অবশ্যই পাকিস্তানের সেটা পরিশোধ করা উচিত। আমার কথা, ৪৫২ কোটি ডলার বড় কথা নয়, দুই দেশের সম্পর্ক বড়। পাকিস্তানকে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে মেজর জেনারেল (অব.) মো. শহীদুল হক বলেন, ১৯৭১ সালের আগে যে বিদেশি ঋণ এসেছিল অবিভক্ত পাকিস্তানে। বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ আরও দাতা সংস্থার ঋণ ছিল। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর সেই ঋণের দায় আমাদের ওপর এলো। এটা কিন্তু যৌক্তিক না।

তিনি বলেন, ওই প্রকল্পগুলো কিন্তু আমাদের এখানে বাস্তবায়ন হয়নি। বাস্তবায়ন হলে কথা ছিল। সম্পদ ভাগাভাগি নিয়ে নানা মত থাকতে পারে। আমরা যা দাবি করি, তারা তার সঙ্গে দ্বিমত করতে পারে। কিন্তু আমরা তো পাবো। আর ঋণের টাকা তো ডকুমেন্টেড। আমার মনে হয় পাকিস্তানের উচিত আমাদের দাবি বিবেচনায় নেওয়া।

পাওয়া প্রসঙ্গে এম হুমায়ুন কবিরের ভাষ্য, এই দাবি আমরা আগেও করেছি। কিন্তু পাকিস্তান দেয়নি। তারপরও আমাদের দাবি জানিয়ে যেতে হবে। আমাদের সম্পদ তো আমরা চাইবেই। ১৯৭১ সালে মাহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি গণহত্যার জন্য পাকিস্তান আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো ক্ষমা চায়নি। বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা আছে যেতারা আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাইবে। একাত্তরে তাদের যে ভূমিকা সেটার দায় তারা গ্রহণ করবে। সেটা হলে দুই দেশের সম্পর্কের পথ আরো প্রশস্ত হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে দুপক্ষই দ্বিপাক্ষিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। এ ক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট এজেন্ডা নির্ধারণ করা না হলেও পারস্পরিক স্বার্থের সব বিষয়ই আলোচনায় উঠে আসবে।

পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মো. ইকবাল হোসেন খান এই বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য বর্তমানে ঢাকায় আছেন। তিনি বলেছেন, ইসলামাবাদ ঢাকার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে বিশেষভাবে আগ্রহী। পাকিস্তান বিশেষ করে তাদের পণ্যের দাম প্রতিযোগিতামূলক বিবেচনায় বাংলাদেশে রপ্তানি বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখছে। এ ক্ষেত্রে তুলা হতে পারে অন্যতম প্রধান পণ্য।

হাইকমিশনার ইকবাল বলেন, পাকিস্তান যেহেতু আফগানিস্তান ও ইরান থেকে পণ্যের প্রবেশদ্বার হিসেবে কাজ করে, তাই পরিবহণ খরচ কম হলে বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের মাধ্যমে আমদানি করার সুযোগ রয়েছে।

পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।

এদিকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারও এ মাসের শেষের দিকে ঢাকা সফর করবেন। ২০১২ সালের পর বাংলাদেশে এটি হবে কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম সফর।

r1 ad
r1 ad
top ad image