top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

শাহবাগ ডাকলেও বিএনপির জবাব— সিদ্ধান্ত সরকারের

শাহবাগ ডাকলেও বিএনপির জবাব— সিদ্ধান্ত সরকারের
শাহবাগে চলছে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলন। এনসিপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। তাদের প্রত্যাশা, বিএনপিও যোগ দেবে শাহবাগের আন্দোলনে। ছবি কোলাজ: রাজনীতি ডটকম

শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায় থাকলেও দলটির নেতারা বলছেন, এখানে অপেক্ষার তেমন কিছু নেই।  আওয়ামী লীগের বিচার বা নিষিদ্ধ করার বিষয়ে বিএনপি তার মনোভাব ও প্রস্তাব আগেই দিয়ে রেখেছে।  এখন সরকারের কাজ সেটি বাস্তবায়ন করা।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রদের রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) রয়েছে এই আন্দোলনের অগ্রভাগে। জামায়াতে ইসলামী, হেফাজতে ইসলামসহ আরও কিছু রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এই আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে।

আন্দোলনসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিএনপি এই আন্দোলনে যুক্ত হলেই আবারও সবার মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠিত হবে। শাহবাগে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নেওয়া অনেকে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকেও এই আন্দোলনে যুক্ত হতে অনুরোধ জানিয়েছেন।

বিএনপি বলছে, আওয়ামী লীগের বিচার ও দলটি নিষিদ্ধ করার দাবিতে তারা শুধু একমতই না, সরকরের কাছে এ নিয়ে প্রস্তাব দিয়ে রেখেছে। তাই দলটিকে নিষিদ্ধ করার এই আন্দোলন কেনো করতে হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে বিএনপির মধ্যে। তবে যারা আন্দোলনে যুক্ত তাদের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগে চলমান আন্দোলন নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো যোগাযোগ হয়েছে কি না— এ প্রশ্নের জবাব তাৎক্ষণিকভাবে দিতে পারেননি জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম সদস্য সচিব মীর আরশাদুল হক।

রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত নই। তবে বিষয়টি নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা হয়েছে।’

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স রাজনীতি ডটকমকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান খুব স্পষ্ট— জুলাই গণহত্যার মাধ্যমে আওয়ামী লীগ এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার হারিয়েছে। আমরা সুস্পষ্ট এই অবস্থান সরকারকে লিখিত ও মৌখিক দুভাবেই জানিয়েছি। কোন প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা যেতে পারে, সে বিষয়টিও সুস্পষ্টভাবে সরকারের কাছে বিএনপির প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। এখন সরকার কেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করছে না, সেটি সরকারই ভালো বলতে পারবে।’

আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার এ অবস্থান নিয়ে জনগণসহ সব রাজনৈতিক দলের মধ্যে জাতীয় ঐক্য তৈরি হয়েই আছে বলেও মন্তব্য করেন এমরান সালেহ প্রিন্স। তিনি বলেন, ‘এটা নিয়ে আর নতুন করে ঐক্য করার কিছু নেই। এখন সরকারের দায়িত্ব রাজনৈতিক দল ও জনগণের এই আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়ন করা।’

শাহবাগের চলমান কর্মসূচিতে বিএনপি যোগ দেবে কি না— এ প্রশ্নের জবাবে বিএনপির এই কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপি তো এমন কোনো দল না যে কোথাও কিছু একটা হলেই হুমড়ি খেয়ে পড়বে। সবাই যেখানে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে একমত সেখানে কেন এই আন্দোলন গড়ে উঠল, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাছাড়া বিএনপিকে কেউ আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক কোনোভাবেই কেউ এই আন্দোলন নিয়ে কিছু জানায়নি।’

‘তবে আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই— আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তার জন্য বিএনপি রূপরেখা দিয়ে রেখেছে। আমরা এখন সংস্কার, আওয়ামী লীগের বিচার ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে একটি নির্বাচনের জন্য কাজ করছি,’— বলেন এমরান সালেহ প্রিন্স।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে শাহবাগের আন্দোলনে বিএনপির অংশগ্রহণের প্রসঙ্গটি আলোচনায় আসে জুলাই আন্দোলনের অন্যতম নেতা এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমের ফেসবুক স্ট্যাটাসে।

Shahbag-Movement-Demanding-Awami-League-Ban-10-05-2025

আন্দোলনকারীরা রাতভর শাহবাগে অবস্থান করেন। শনিবার সকাল থেকে ফের গণজমায়েতের কর্মসূচি ঘোষণা রয়েছে। ছবি: ফোকাস বাংলা

শুক্রবার সন্ধ্যায় দেওয়া স্ট্যটাসে সারজিস লিখেছেন, ‘বিএনপি এবং তার অঙ্গসংগঠন ছাড়া সব রাজনৈতিক দল এখন শাহবাগে। বিএনপি এলে জুলাইয়ের ঐক্য পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হবে। ঐক্যবদ্ধ শাহবাগ বিএনপির অপেক্ষায়।’

শাহবাগ আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি সরাসরি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে। তিনি লিখেন, ‘বাংলাদেশের বেগম জিয়া, শাহবাগে হাজারও শহিদ পরিবার ও সারা বাংলাদেশ আপনার অপেক্ষায়।’

ঘণ্টা দেড়েক পর আরেক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেন, ‘জুলাই যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আপসহীন নেত্রী বেগম জিয়ার কাছে যেতে চাই আমরা শাহবাগের দাওয়াত নিয়ে। কাইন্ডলি সংশ্লিষ্ট কেউ হেল্প করুন। উনি আমাদের সার্বভৌম অভিভাবক।’

এর আগে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেন জুলাই আন্দোলনের আরেক নেতা এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ। হাসনাতের অবস্থান কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়ে সবাইকে সেখানে যোগ দিতে আহ্বান জানান এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

এদিকে জুলাই অভ্যুত্থানের মুখে পতনের শিকার আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি বিবেচনায় রয়েছে বলে জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। তবে সেই বক্তব্য আস্থায় না নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ সমমনা বিভিন্ন সংগঠন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ জন্য সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়েছে।

এনসিপি’র নেতৃত্বে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের সামনে বৃহস্পতিবার রাতভর অবস্থানের পর শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে সমাবেশ শুরুর সময়ে এমন বিবৃতি দেয় সরকার। কিন্তু আন্দোলনকারীরা শাহবাগে এসে অবস্থান নেন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত সেখানে থাকার ঘোষণা দেন।

মধ্যরাত পেরিয়ে নাহিদ নিজেও যোগ দেন যমুনার সামনের অবস্থান কর্মসূচিতে। রাতভর সেখানে অবস্থানের পর শুক্রবার দুপুরে সেখানে সমাবেশ থেকে ‘শাহবাগ ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। বিকেল থেকে শাহবাগেই জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। এখনো সেখানেই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে তারা অবস্থান করছেন।

এরই মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটি, ইনকিলাব মঞ্চ, লেবার পার্টি, আপ-বাংলাদেশ, জুলাই ঐক্য, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, খেলাফত মজলিস, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ, হেফাজতে ইসলাম, ছাত্র শিবির, ইসলামী আন্দোলন, জুলাই মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন এ আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছে। এসব দল ও সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও শাহবাগে অবস্থান করেছেন, করছেন।

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি দিয়ে শুরু হলেও শাহবাগ থেকে এখন তিনটি দাবি তুলে ধরেছে এনসিপি। দাবিগুলো হলো—

  • আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধ করতে হবে;
  • আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে আওয়ামী লীগকে দল হিসেবে বিচারের বিধান যুক্ত করতে হবে; এবং
  • জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করতে হবে।

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই দলটিকে নিষিদ্ধ করার দাবি ওঠে। জুলাই গণহত্যায় জড়িত অভিযোগে দলটির বিচারের দাবিও ছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হয়নি। যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনাসহ তার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের বিচার করা হচ্ছে, সেখানেও দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের বিধান যুক্ত করা হয়নি।

এর মধ্যে গত ৯ মাসে আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন। সবশেষ বুধবার (৭ মে) দিবাগত গভীর রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এ ঘটনা সাড়া ফেলে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে।

এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানানোর জের ধরেই হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রশ্ন তোলেন আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করার চলমান ‘ষড়যন্ত্র’ নিয়েও। হাসনাতের অভিযোগ, বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত করার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে। ভারতীয় হাইকমিশন ও গোয়েন্দা সংস্থা সরকারি-বেসরকারি ও সামরিক বিভিন্ন মহলের সঙ্গে মে মাসেই ২৩টি বৈঠক করেছে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করতেই।

এ বিষয়ে একাধিক স্ট্যাটাস দেওয়ার পরই প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নেওয়ার ডাক দেন হাসনাত, তাতে সংহতি জানান নাহিদও। তারপরই যমুনা হয়ে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি এখন অবস্থান করছে শাহবাগে।

বিএনপি নেতারা বলছেন, তারা আগেই দলের অবস্থান জানিয়ে রেখেছেন। দলটি গণহত্যার জন্য আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচার চায়। কিন্তু নিষিদ্ধের প্রশ্নে দলটির নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।

দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আগেই বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত নেবে জনগন।

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা হবে কি হবে না, তা বিএনপির বক্তব্যের বিষয় নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান। তিনি বলেছেন, এটা নির্বাচন কমিশন বা সরকার সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের কার্টার সেন্টারের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবদুল মঈন খান এ কথা বলেন।

মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে কি হবে না, তা বিএনপি নয়, জনগণ ঠিক করবে।বিএনপি এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক নয়। আমাদের মহাসচিব (মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর) ইতিমধ্যে বলেছেন যে জনগণের সিদ্ধান্তের বিষয় এটা।’

r1 ad
top ad image