top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

মৌলিক সংস্কারের পরে নির্বাচন চায় ‘নির্বাচনমুখী’ এনসিপি

মৌলিক সংস্কারের পরে নির্বাচন চায় ‘নির্বাচনমুখী’ এনসিপি

​নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নিবন্ধনের জন্য সময় বাড়াতে চেয়েছিল৷ সময় দুই মাস বাড়ানো হয়েছে। ফলে, নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং তহবিল গঠনের সুবিধা হবে বলে এনসিপি নেতারা খুশি। তবে ‘মৌলিক সংস্কার'-এর আগে নির্বাচনের বিরোধী তারা৷

রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সর্বশেষ সময় ছিল ২০ এপ্রিল। তবে এনসিপির আবেদনের প্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন দুই মাস সময় বাড়িয়েছে। এনসিপি অবশ্য তিন মাস চেয়েছিল। দুই মাস বাড়ানোর ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের যুক্তি হলো, "আরো কয়েকটি রাজনৈতিক দল, যারা নিবন্ধনের আবেদন করেছে, তারা সময় বাড়াতে চেয়েছে নিবন্ধনের শর্ত পুরণের জন্য। আর এই সময় বাড়ানোর কারণে ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরে প্রস্তুতিতে কোনো সমস্যা হবে না।”

অন্যদিকে এনসিপি নেতারা বলছেন, তারা কিছুদিন আগেই নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেছেন, তাই নিবন্ধনের শর্ত পুরণে বাড়তি সময় লাগছে। তবে আগামী দুই মাসের মধ্যে শর্ত পুরণ করতে পারবে বলে আশাবাদী তারা।

তবে এনসিপির অগ্রাধিকার তালিকার এক নাম্বারে নির্বাচন নেই। এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার ডয়চে ভেলেকে বলেন, "আমরা মৌলিক সংস্কার চাই সবার আগে। মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থবহ হবে না।”

এনসিপি এরই মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছে। আরো বৈঠক হবে। সরোয়ার তুষার বলেন, "স্বৈরতান্ত্রিক বা এক ব্যক্তি কেন্দ্রিক যে ক্ষমতা-কাঠামো আছে, তার গণতান্ত্রিক সংস্কার করতে হবে। আমরা এটাকেই বলছি মৌলিক সংস্কার। আমরা সেটাই তুলে ধরেছি ঐকমত্য কমিশনের কাছে। রাষ্ট্রের তিন বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য, অন্যান্য সাংবিধানিক পদের নিয়োগ প্রধানমন্ত্রী এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হওয়া, জীবনে দুইবারের বেশি কেউ যাতে প্রধানমন্ত্রী না হতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদ যেন তার মতো কন্ট্রোল করতে না পারেন, গণতান্ত্রিক মতামতের ভিত্তিতে যাতে মন্ত্রিপরিষদ চলে, প্রধানমন্ত্রী শাসিত নয়, মন্ত্রিপরিষদ শাসিত সরকার হবে। এখন প্রধানমন্ত্রী চাইলে যে-কোনো মন্ত্রীকে সরিয়ে দিতে বা দপ্তর পরিবর্তন করতে পারেন। আমরা সেটা চাই না। এই সিদ্ধান্ত নেবে পুরো মন্ত্রিপরিষদ। প্রধানমন্ত্রী হবেন ফার্ষ্ট অ্যামাং দ্য ইকুয়েলস। রাষ্ট্রপতি যেন ইলেক্টোরাল ভোটে নির্বাচিত হন। সংসদ ও সংসদ সদস্যদের স্বাধীতা- এরকম আরো কিছু মৌলিক সংস্কারের পর আমরা নির্বাচন চাই।”

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, "নির্বাচন পেছানোর জন্য আমরা এসব চাইছি না। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদি ব্যবস্থা বহাল রেখে নির্বাচন করে কোনো লাভ নাই।”

নিবন্ধনের সময় বাড়িয়ে নেয়ার পিছনেও নির্বাচন পেছানোর উদ্দেশ্য আছে কিনা জানতে চাইলে আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বলেন, "আমরা নতুন দল, তাই নিবন্ধনের শর্ত পুরণে আমাদের একটু সময় দরকার। অন্য দল যারা আবেদন করেছেন, তারাও সময় বাড়াতে চেয়েছেন। দুই মাস সময় বাড়িয়ে দিয়েছে, আমরা এই সময়ের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে পারবো। নির্বাচন পেছানো আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আর আমরা কোনো চাপও দেইনি।”

সরোয়র তুষার বলেন, "সময় বাড়ানোর জন্য হাইকোর্টে একটি রিটও আছে। আদালতও সময় বাড়াতে রুল জারি করেছেন।”

নির্বাচন কমিশনের নীতিমালায় নিবন্ধনের যে শর্ত আছে, তা হলো:

১. স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত কোনো সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে কমপক্ষে একটি আসনে বিজয়।

২. সেসব নির্বাচনে দলটির প্রার্থীরা যেসব আসনে অংশ নিয়েছেন, সেসব আসনে মোট ভোটের ৫ শতাংশ অর্জন।

৩. কেন্দ্রীয় কমিটিসহ একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় অফিস থাকতে হবে। দেশের অন্তত এক-তৃতীয়াংশ জেলায় জেলা অফিস থাকতে হবে। আর অন্তত ১০০টি উপজেলা বা মেট্রোপলিটন এলাকার থানায় অফিস থাকতে হবে, যার প্রতিটিতে সদস্য হিসেবে কমপক্ষে ২০০ জন ভোটার থাকবে।

ওই তিনটি শর্তের যে-কোনো একটি পুরণ ছাড়াও নিবন্ধন পেতে আগ্রহী দলটির গঠনতন্ত্রে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব কমিটির সদস্য নির্বাচিত করা; কমিটিতে কমপক্ষে ৩৩ শতাংশ নারী সদস্য রাখা (২০৩০ সালের মধ্যে পূরণ)সহ আরো কিছু বিধান রাখার শর্ত আছে।

মনিরা শারমিন বলেন, "১০০ উপজেলা ও ২২ জেলায় কমিটি দেয়া, কেন্দ্রীয়সহ ওইসব জেলা-উপজেলায় নিজস্ব অফিস নেয়ার কাজ এগিয়ে চলছে। আশা করি, এই দুই মাসের মধ্যেই আমার এইসব কাজ শেষ করতে পারবো। আর আমাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির তো ৪৫০ উপজেলায় কমিটি আছে। সেই কমিটিগুলো তো সংযুক্ত হবে। বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে কমিটির নাম আসছে, সেগুলোও দেখছি। আমরা আগামী সপ্তাহেই একটি সাংগঠনিক সপ্তাহ ঘোষণা করবো। তার মধ্য দিয়েই সব পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হবে। গঠনতন্ত্র সময়ের মধ্যেই চূড়ান্ত হবে।দলীয় প্রতীকও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে।”

তহবিলের ব্যাপারে তিনি বলেন, "এইসব কাজ করতে তো খরচ আছে। আমরা এখন নিজেরা খরচ করছি। কিন্তু ক্রাউড ফান্ডিং-এর মাধ্যমেই মূলত আমরা তহবিল গঠন করবো। আমরা একটা নীতিমালা তৈরি কেরেছি, ফাইনান্সিয়াল পলিসি তৈরি করেছি। এই সপ্তাহের শেষে আমরা পলিসি ঘোষণা করে ফান্ড সংগ্রহ শুরু করবো। আমরা দলের নামে এরই মধ্যে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলেছি।”

এএনসিপি জাতীয় থেকে স্থানীয়- সব ধরনের নির্বাচনেই প্রার্থী দেবে। এ কারণে তারা প্রার্থীও বাছাই করছে। মনিরা শারমিন বলেন, " আমরা রাজনৈতিক দল করেছি। অবশ্যই নির্বাচন আমাদের টার্গেট। মৌলিক সংস্কার হলেই আমরা নির্বাচনে অংশ নেবো। জাতীয় নির্বাচন ছাড়াও জেলা, উপজেলা, পৌরসভা,ইউপি -সব নির্বচনেই আমরা অংশ নেবো। যারা বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলছি। নিজেরাও প্রার্থী নিয়ে চিন্তা করছি। আমরা একটি নির্বাচনমুখী দল।”

তার কথা, "আমরা মৌলিক সংস্কার ছাড়াও নির্বাচন কমিশনের সংস্কার চেয়েছি। আরপিওর সংশোধন চেয়েছি। আসলে এই সংস্কারগুলো নির্বাচনের আগে দরকার। কোনো সময়ক্ষেপন বা সুবিধা নেয়ার জন্য নয়। আমরা মনে করি, ফ্যাসিবাদ রেখে নির্বাচন নয়। আর প্রধান উপদেষ্টা যে ডিসেম্বর থেকে জুনের কথা বলছেন, সেই সময়ের মধ্যেই মৌলিক সংস্কার করে নির্বাচন সম্ভব। সংস্কার না করে নির্বাচন করলে ওই সংস্কার আর হবে না। তাহলে জুলাই অভূত্থানের ফল জাতি পাবে না।”

নির্বাচন কমিশনে এ পর্যন্ত ৬৫টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে। তার মধ্যে ৪৬টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের সময়সীমা দুই থেকে ছয় মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে বলে জানান নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সহকরি সচিব মো. দেলোয়র হোসেন। ৫ আগস্টের পর আদালতের নির্দেশে চারটি নতুন রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয়া হয় সব মিলিয়ে এখন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখা ৫০টি।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, "এনসিপিকে কোনো সুবিধা দিতে বা কোনো চাপের মুখে আমরা নিবন্ধনের সময় বাড়াইনি, যারা আবেদন করেছে, তাদের অধিকাংশের আবেদনে সাড়া দিয়ে আমরা দুই মাস বাড়িয়ে ২২ জুন পর্যন্ত করেছি।”

"আমরা ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। নিবন্ধনের সময় বাড়ানোর কারণে সেটা বাধাগ্রস্ত হবে না। এমন কোনো নিয়ম নেই যে, নিবন্ধিত হওয়ার নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার আগে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। নিবন্ধিত হওয়ার পরের দিনও পারবে। আর নিবন্ধিত না হলেও তো স্বতন্ত্রভাবে বা অন্য দলের প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করা যায়,” বলেন তিনি।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

r1 ad
top ad image