চাঁদা না দিলে তোর দোকান ভেঙে ফেলব— ব্যবসায়ীকে ছাত্রদল নেতার হুমকি

নেত্রকোনার মোহনগঞ্জে ব্যবসায়ীর কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে ওই ব্যবসায়ীর দোকান ভেঙে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ছাত্রদল নেতা। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সোহেল রানা গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা জুবায়ের আহমেদ শাকিবের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন।
উপজেলার বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়নের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোহেল রানা। অপরদিকে ছাত্রদল নেতা একই উপজেলার বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়ন শাখা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলার কাশিপুর গ্রামের মো. দিলোয়ার হোসেনের ছেলে।
শুক্রবার সকালে মোহনগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসির) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, কাশিপুর বাজারে একটি মনোহারী দোকান ও একটি রাইসমিল রয়েছে সোহেল রানার। গত ৫ আগস্টের পর থেকে ছাত্রদল নেতা শাকিব তার লোকজন নিয়ে গিয়ে সোহেল রানার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় শাকিব তার সহযোগীদের নিয়ে সোহেল রানার দোকানে গিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। এ সময় তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ছিল। তবে চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে সোহেল রানার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে তারা বলেন, ‘আগামী দুই দিনের মধ্যে টাকা না দিলে তোর দোকানটি ভেঙে ফেলব।’ এ ছাড়া সময় সুযোগ মতো পাইলে খুন করে লাশ গুম করে ফেলব।’ পরে তারা এসব হুমকি দিয়ে চলে যান। এ ঘটনায় পরদিন থানায় লিখিত অভিযোগ দেন সোহেল রানা। অভিযোগপত্রে এতে শাকিবসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
অন্যরা হলেন, কাশিপুর গ্রামের মো. আরিফ (৩০), মো. বাবলু মিয়া (৩৫), মো. দিলোয়ার হোসেন (৫৮), মো. নান্টু মিয়া (২৪) ও বায়জিদ (১৮)।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, শাকিব গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধমকিসহ আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছে। রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে এলাকায় নানান রকমের অসামাজিক কর্মকাণ্ড করে চলছে। তার অত্যাচারে এলাকার সাধারণ মানুষ অতিষ্ট। গত বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় শাকিব তার সহযোগীদের নিয়ে আমার দোকানে এসে গলায় ছুরি ঠেকিয়ে হুমকি দিয়ে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। না দেওয়ায় হুমকি দিয়ে বলে যায় আগামী দুই দিনের মধ্যে টাকা না দিলে মেরে ফেলবে। এ সময় দোকানে এলাকার অনেক লোক বসা ছিল। তাদের সামনেই এমন কাজ করেছে। এখন ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছি। শেষে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।
এ বিষয়ে মোহনগঞ্জ উপজেলার বড়তলী-বানিয়াহারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. কুতুব উদ্দিন বলেন, ঘটনাস্থল আমার বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। তবে এলাকার লোকজনের মাধ্যমে ঘটনাটি শুনেছি। ভুক্তভোগীরাও ঘটনাটি জানিয়েছেন। ঘটনার সত্য মিথ্যা জানি না। যেহেতু থানায় অভিযোগ দিয়েছে, পুলিশ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে আশা করছি। সত্য হলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আর মিথ্যা হলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। এতে এলাকায় এমন ঘটনা আর ঘটবে না।
এদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে জুবায়ের আহমেদ শাকিব বলেন, আমি এসবের কিছুই জানি না। আমি ওইদিন ঢাকা ছিলাম। আমার বিরুদ্ধে করা সকল অভিযোগ মিথ্যা।
মোহনগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. শফিকুজ্জামান বলেন, অভিযোগ তদন্ত করার জন্য থানার একজন উপ-পরিদর্শককে (এসআই) দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তের পর এ বিষয়ে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।