top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

বন্যায় প্লাবিত ১২ জেলা, মানবিকসংকটে ৪৫ লাখ মানুষ

বন্যায় প্লাবিত ১২ জেলা, মানবিকসংকটে ৪৫ লাখ মানুষ
ছবি : সংগৃহীত

এখন পর্যন্ত বন্যায় প্লাবিত হয়েছে দেশের ১২ জেলা। এতে ৪৫ লাখ মানুষ মানবিক সংকটে পড়েছেন। বন্যার পরিধি আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি বেশি অবনতি হয়েছে। সরকারি হিসাবে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মারা গেছেন ১৫ জন। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪, ফেনীতে ১, চট্টগ্রামে ২, নোয়াখালীতে ১, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ১, লক্ষ্মীপুরে ১ ও কক্সবাজারে ৩ জন মারা যান।

পানিবন্দি ও ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয়ের জন্য ৩ হাজার ১৬০টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে ১ লাখ ৮৮ হাজার ৭৩৯ বন্যাদুর্গত মানুষ এবং ১৭ হাজার ৮৪৮টি গবাদি পশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। চিকিৎসাসেবায় ৬৩৭টি মেডিকেল টিম চালু রয়েছে। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে নৌযান ও অন্যান্য উদ্ধার যান দিয়ে পানিবন্দি মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হচ্ছে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও ব্যক্তি উদ্যোগের সংগঠনগুলো তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়ে বন্যার্তদের উদ্ধারে কাজ করছে। সরকারও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানোর পাশাপাশি নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উদ্যোগে বন্যার্তদের উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চলছে।

বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ফেনী জেলার বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে যোগাযোগের কিছু নম্বর জানিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সেগুলো হলো ফেনীর এনডিসি ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ (০১৭১৩১৮৭৩০৪), লেফটেন্যান্ট কমান্ডার সাইফুল (০১৭৬৯৭৫৪১০৩) ও মেজর ফাহিম (০১৭৬৯৩৩৩১৯২)।

সবচেয়ে বেশি বন্যাদুর্গত তিন জেলা ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায় উন্নতির আভাস দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র। গতকাল শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রের কর্মকর্তা তারেক সিদ্দিকী বলেন, আগামী ২-৩ দিনের মধ্যে ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের বন্যা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

গতকাল বিকেলে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানির স্তর ধীরগতিতে নামছে। আগের ২৪ ঘণ্টায় পূর্বাঞ্চলীয় কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও ফেনী জেলার ভারতের ত্রিপুরার সীমান্তবর্তী অঞ্চলে এবং ত্রিপুরার অভ্যন্তরীণ অববাহিকাগুলোতে ভারি বৃষ্টিপাত দেখা যায়নি এবং উজানের নদ-নদীর পানির স্তর নেমে যেতে শুরু করেছে। ফলে বর্তমানে মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও চট্টগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির ধীরগতিতে উন্নতি হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন বলেন, বৃষ্টিপাত কমার কথা যেটি বলা হয়েছে, সেটির অর্থ হলো-কোথাও কোথাও একটু কমবে, আবার বাড়বে। ২৮ আগস্টের পর উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বৃষ্টিপাত আবার কিছুটা বাড়বে।

চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন উপজেলায় পানি বন্দি হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার পরিবার। ফটিকছড়ি, হাটাহাজারী, মিরসরাই, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান উপজেলায় এসব পরিবার এখনো পানিবন্দি বলে জানিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের কার্যালয়। এর মধ্যে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারীর বাসিন্দারা স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে পড়েছেন। মিরসরাই ও ফটিকছড়ির ৫৯০ কিলোমিটার সড়ক এবং ১২৫টি কালভার্ট-ব্রিজ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

খাগড়াছড়ির বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় পানি নেমে গেছে। এ ছাড়া বেশিরভাগ জায়গায় পানি কমেছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (বিভাগ-২) ড. তানজির সাইফ আহমেদ কালবেলাকে বলেন, খাগড়াছড়ির মূল সদরের পানি এরই মধ্যে নেমে গেছে। চেঙ্গি নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। তবে ফটিকছড়ির অনেক এলাকা এখনো তলিয়ে আছে।

কুমিল্লায় গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে বুড়িচং উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম। রাতে বাঁধ ভাঙার কারণে অধিকাংশ লোকজন ঘরবাড়িতে আটকা পড়েন। এতে জেলা সদরের সঙ্গে উপজেলা সদরের প্রধান সড়কের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। গতকাল শুক্রবার কালবেলাকে এসব তথ্য জানান বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহিদা আক্তার।

ফেনী জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়েছে। ফলে মোবাইলে যোগাযোগও কঠিন হয়ে পড়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (ওঅ্যান্ডএম) আকাশ কুসুম বড়ুয়া বলেন, বন্যার কারণে ১৩টি সাব-স্টেশনের সবকটি বন্ধ রাখা হয়েছে। এতে ৪ লাখ ৪১ হাজার ৫৪৬ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় আছেন। বন্যাদুর্গত অন্তত ২০ জন রোগীকে ফেনী থেকে সেনাবাহিনীর অ্যাভিয়েশন হেলিকপ্টারে করে কুমিল্লা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে ফুলগাজী উপজেলা থেকে গুরুতর অসুস্থ এক অন্তঃসত্ত্বা নারী গতকাল শুক্রবার দুপুরে ছেলেসন্তানের জন্ম দিয়েছেন।

নোয়াখালীতে বৃষ্টি না হওয়া ও দিনভর রোদ থাকায় বিভিন্ন উপজেলায় পানি কমতে শুরু করেছে। এতে স্বস্তি ফিরেছে মানুষের মাঝে। জেলা প্রশাসক দেওয়ান মাহবুবুর রহমান বলেন, নোয়াখালীর ৮ উপজেলায় ৫০২টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৮০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

চাঁদপুরে মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার নিচে রয়েছে, তাই কাউকে আতঙ্ক না ছড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের চর বাগাদীতে কয়েকটি স্থানে ছোট ছোট গর্ত সংস্কার করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুরে শুক্রবার সকাল ৮টার পর থেকে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে দুর্ভোগ কমেনি। কমলনগর, রায়পুর ও রামগতির বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনভর বৃষ্টি না হওয়া, কোথাও কোথাও রোদের দেখা মেলায় জনমনে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুর আহমেদ জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত হাওড়া নদীর পানি ৯ সেন্টিমিটার কমেছে।

সিলেটে বৃষ্টি না হওয়ায় শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি বিভিন্ন পয়েন্টে কমেছে। তবে কুশিয়ারা নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ বলেন, শুক্রবার দুপুর ১২টায় কুশিয়ারা নদীর পানি অমলশিদ পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জে ৭৫ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

লালমনিরহাটে তিস্তায় পানিপ্রবাহ বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও স্রোত থাকায় শুরু হয়েছে নদীভাঙন। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, তিস্তায় বন্যার আশঙ্কা নেই, তবে পানির স্রোত বেশি থাকায় কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনকবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

মৌলভীবাজার পাউবোর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, উজানে বৃষ্টি না হওয়ায় মনু নদীর পানিও কমতে শুরু করেছে। এ ছাড়া ধলাই নদীতে পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে আকস্মিক বন্যায় তলিয়ে যায় জেলার কুলাউড়া, জুড়ী, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের অসংখ্য বসতঘর, আঞ্চলিক সড়ক, গ্রামীণ সড়ক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এতে কমপক্ষে আড়াই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন।

হবিগঞ্জ জেলার জালালাবাদ এলাকায় নদীভাঙনের ফলে নোয়াগাঁও, রিচি, জালালবাদ, সুলতান মাহমুদপুর, হুরগাঁওসহ অন্তত ২৫টি গ্রামে নতুন করে পানি উঠেছে। অন্তত ৫০ হাজার লোক পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম হাসনাঈন জানান, খোয়াই নদীর বাল্লা পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করেছে। তবে নদীভাঙনের ফলে নতুন করে এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে।

r1 ad
r1 ad