সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিক— গ্যারি পিটার্সকে প্রধান উপদেষ্টা

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনাগুলোকে রাজনৈতিক বলে অভিহিত করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেছেন, বর্ণ-ধর্ম, জাতি ও লিঙ্গ নির্বিশেষে দেশের প্রতিটি নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষায় তার সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত বছরের আগস্টে ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে হিন্দুদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে তা ধর্মীয়ভাবে নয়, রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল। তবে তার সরকার দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় মার্কিন সিনেটর গ্যারি পিটার্স (ডি-এমআই) সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধান উপদেষ্টা তাকে এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস মার্কিন সিনেটরকে বাংলাদেশের বিভিন্ন শহর ও গ্রাম পরিদর্শন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রকৃত তথ্য জানতে বাংলাদেশ সফর করার জন্য অন্যান্য মার্কিন রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক ও কর্মীদের অন্তর্বর্তী সরকার আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
ঘণ্টাব্যাপী এই সাক্ষাতে দুই নেতা পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও দুই বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সিনেটর পিটার্স অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগ, গুরুত্বপূর্ণ কমিশনের প্রতিবেদন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো কম সংস্কারে সম্মত হলে সরকার ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। নির্বাচনের পরিবেশ হবে উৎসবমুখর। নির্বাচনের দিন বড় বড় উদ্যাপন হবে, যেমনটি আমরা অতীতে দেখেছি। আর প্রধান কমিশনগুলো প্রস্তাবিত সংস্কারগুলোতে সম্মত হওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো জুলাই সনদে সই করবে। জুলাই সনদ দেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।
পিটার্স সরকারের সংস্কার কর্মসূচির প্রশংসা করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে একটি মসৃণ গণতান্ত্রিক উত্তরণের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
সিনেটর পিটার্স বলেন, মিশিগানে তার নির্বাচনি এলাকায় অনেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মানুষ বসবাস করেন, যার মধ্যে ডেট্রয়েট শহরও রয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে ব্যাপক ভুল তথ্য ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভুল তথ্যের কিছু অংশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়েছে, যা সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
জবাবে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, আমাদের আপনার সাহায্য প্রয়োজন। দয়া করে আপনার বন্ধুদের বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে বলুন। এভাবে আমরা ভুল তথ্য প্রচারণার বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারি।
দুই নেতা সামাজিক ব্যবসা, দারিদ্র্যমুক্ত পৃথিবী এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্যান্য স্থানে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের হাতিয়ার হিসেবে ক্ষুদ্র ঋণ নিয়েও আলোচনা করেন।