
টিম রাজনীতি ডটকম


জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ঘোষণা করা রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। পাশাপাশি দলটি অন্যান্য মামলায় অভিযুক্তদেরও সুবিচারের দাবি জানিয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের পর এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব দলের এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সারা বিশ্বের জনমত এবং বাংলাদেশের জনগণের দাবি ও প্রত্যাশা ছিল যেন পতিত স্বৈরাচার ও তার দোষরদের মানবতাবিরোধী ও নৃশংস, জঘন্য হত্যাকাণ্ড ও গণহত্যায় অপরাধের বিচার করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে আওয়ামী ফ্যাসিষ্ট শেখ হাসিনা ও তার দুই দোসরের বিরুদ্ধে রায় ঘোষিত হয়েছে। এ রায়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আইনের শাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বিএনপি এ ব্যাপারে জনগণকে সদা সর্বদা সচেতন থাকার আহ্বান জানাচ্ছে। একই সঙ্গে বিএনপি অন্যান্য মামলায় অভিযুক্তদের সুবিচারের দাবি জানাচ্ছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এ রায়ের ফলে আমরা মনে করি, দীর্ঘ ১৬ বছরের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যার শিকার এবং ২০২৪ ছাত্র গণঅভ্যূত্থানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের শিকার সহস্রাধিক শহিদের আত্মা শান্তি পাবে এবং তাদের পরিবার-পরিজনের ক্ষোভ কিছুটা হলেও প্রশমিত হবে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় সারা দেশ ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেও প্রতিধ্বনিত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। বলেছেন, এই রায় ও সাজা একটি মৌলিক নীতিকে পুনর্নিশ্চিত করেছে— যত ক্ষমতাবানই হোক, কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়।
সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে। বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ক্ষতিগ্রস্ত হাজারও মানুষ ও এখনো সেই ক্ষত বহনকারী পরিবারগুলোর জন্য এ রায় সীমিত মাত্রায় হলেও ন্যায়বিচার এনে দিয়েছে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, যে অপরাধগুলো নিয়ে বিচার হয়েছে— তরুণ ও শিশু, যাদের একমাত্র অস্ত্র ছিল তাদের কণ্ঠস্বর, তাদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী বল প্রয়োগের আদেশ, যা আমাদের আইন এবং সরকার-নাগরিক সম্পর্কের মৌলিক বন্ধনকে লঙ্ঘন করেছে। এসব জঘন্য কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের মূল মূল্যবোধ— মর্যাদা, দৃঢ়তা ও ন্যায়বিচারের প্রতি অঙ্গীকারকে আঘাত করেছে।
বাংলাদেশ এখন বৈশ্বিক জবাবদিহিতার ধারায় পুনরায় যুক্ত হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পরিবর্তনের পক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষার্থী ও নাগরিকরা এটি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছিলেন। তাদের অনেকেই জীবন দিয়ে মূল্য দিয়েছেন— তাদের বর্তমান উৎসর্গ করেছেন আমাদের ভবিষ্যতের জন্য।
সামনের পথচলায় শুধু আইনি জবাবদিহিতা নয়, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ও নাগরিকদের মধ্যে আস্থা পুনর্গঠনও জরুরি উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, প্রকৃত প্রতিনিধিত্বের জন্য মানুষ কেন সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলে— তা বোঝা এবং সেই আস্থার উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যবস্থা তৈরি করা অপরিহার্য। আজকের রায় সেই যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশ সাহস ও বিনয়ের সঙ্গে সামনে থাকা চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে। আইনের শাসন, মানবাধিকার ও প্রতিটি মানুষের সম্ভাবনার প্রতি অঙ্গীকারের মাধ্যমে ন্যায়বিচার বাংলাদেশে শুধু নামেমাত্র টিকে থাকবে না, এটি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সুদৃঢ় হবে।

জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়কে ‘গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত’ ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তিদের জন্য ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা সামদাসানি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় এ কথা বলেন তিনি। তবে মামলার রায়ে মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগকে জাতিসংঘ দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং কোনো পরিস্থিতিতেই এটি সমর্থনযোগ্য নয় বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বিবৃতিতে রাভিনা সামদাসানি বলেন, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত জাতিসংঘের অনুসন্ধান প্রতিবেদনের পর থেকে আমরা আহ্বান জানিয়ে আসছি, নেতৃত্ব ও দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিসহ সব অপরাধীকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী আইনের আওতায় আনা হোক। এ ছাড়া মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকারদের কার্যকর প্রতিকার ও ক্ষতিপূরণের সুযোগ নিশ্চিত করার পক্ষেও কথা বলেছি।
জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োগকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং কোনো পরিস্থিতিতেই এটি সমর্থনযোগ্য নয় বলে জানান তিনি।
এদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ফলকার টুর্ক আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ সত্য বক্তব্য, ক্ষতিপূরণ ও ন্যায়বিচারের মাধ্যমে জাতীয় পুনর্মিলনের পথে এগোবে। এর সঙ্গে অর্থবহ ও রূপান্তরমূলক নিরাপত্তা খাত সংস্কারও গুরুত্বপূর্ণ, যেন অতীতের লঙ্ঘন ও শোষণ পুনরায় না ঘটে। জাতিসংঘ কার্যালয় এ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ সরকার ও জনগণকে সমর্থন দিতে প্রস্তুত।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার সবার প্রতি ধৈর্য, সংযম ও শান্তি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিচার প্রক্রিয়াকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ও ‘অস্বচ্ছ’ অভিহিত করে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন ১০২ জন সাংবাদিক। এ বিচার প্রক্রিয়ায় দেশে আইনের শাসন ব্যাহত হবে বলেও উল্লেখ করেন তারা। বলেছেন, ‘ফরমায়েশি’ রায় বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা ধ্বংস করেছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে এক বিবৃতিতে এই শতাধিক সাংবাদিক এমন কথা বলেন। সিনিয়র সাংবাদিক তৈমুর ফারুক তুষার বাকিদের পক্ষে এ বিবৃতি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে—
১০২ সাংবাদিকের বিবৃতি— ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ বিচার আইনের শাসন ব্যাহত করবে

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ও ‘একপাক্ষিক’ বলে অভিহিত করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। এ রায় দেশের ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছে দলটি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে জাসদ এ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
এ রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জাসদ কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি বিবৃতিতে বলেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার মন্ত্রিসভার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে দেওয়া দণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য অসাংবিধানিক সরকারের ট্রাইব্যুনালের সাজানো মামলার রায় বর্তমান ও ভবিষ্যতে কখনোই গ্রহণযোগ্য হবে না।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, অনুপস্থিত অভিযুক্তদের আত্মপক্ষ সমর্থনের প্রকৃত সুযোগ না দিয়ে সাজানো প্রক্রিয়ায় একপাক্ষিক ও একচেটিয়া রায়ের মামলা হিসেবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই কার্যক্রম ইতিহাসে কলঙ্ক হয়ে থাকবে।
জনগণের সার্বভৌমত্ব ও সংসদের ক্ষমতা অস্বীকার করে অধ্যাদেশনির্ভর সংশোধিত আইনের অধীনে বিচার করা ও শাস্তি দানকে জাসদ কখনোই সমর্থন করে না বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বিবৃতিতে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানকে দেশে ফেরত পাঠাতে ভারত সরকারের কাছে আবারও চিঠি পাঠাবে বাংলাদেশ।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, দুই প্রক্রিয়ায় এই চিঠি পাঠানো হবে ভারতকে।
উপদেষ্টা বলেন, তাদের দুজনকে (শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল) ফেরত আনতে হবে। যেহেতু আদালত শাস্তি দিয়েছেন, সে কারণে আমরা ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি অবহিত করব।
যে দুই প্রক্রিয়ায় ভারতকে চিঠি পাঠানো হতে পারে তা উল্লেখ করে তৌহিদ হোসেন বলেন, চিঠি পাঠানোর দুটি প্রক্রিয়া রয়েছে। একটি (চিঠি) অফিশিয়াল নোটের মাধ্যমে যাবে। সেটি স্থানীয়ভাবেও তাদের মিশনকে হস্তান্তর করা যায়। অথবা আমাদের মিশন তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে (চিঠি) হস্তান্তর করতে পারে। আমরা দুই পদ্ধতির যেকোনো একটা করতে পারি।
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান কামালের মৃত্যুদণ্ড রায়ের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ভারত। তবে দুই আসামিকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বান প্রসঙ্গে কিছু বলেনি দেশটি।
সোমবার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঘোষিত রায় ঘিরে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলছে, নির্বাসনে থাকা হাসিনার রায় ভারত ‘নজরে নিয়েছে’ এবং ‘বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ’ রয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী হিসেবে শান্তি, গণতন্ত্র, অন্তর্ভুক্তি এবং স্থিতিশীলতাসহ বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্তম স্বার্থের প্রতি ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা সর্বদা এই লক্ষ্যে সকল অংশীদারদের সঙ্গে গঠনমূলকভাবে কাজ করব।’
এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের জনগণের সর্বোত্মম স্বার্থের জন্য কাজ করার অঙ্গীকার করলেও বিবৃতিতে মৃত্যুদণ্ড সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামির কাউকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের আহ্বানের কোনো জবাব দেয়নি। বিবৃতি এ প্রসঙ্গে টুঁ শব্দটিও করেনি ভারত।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই পলাতক আসামি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে বাংলাদেশের কাছে ফেরত দিতে ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সন্ধ্যায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এর আগে এ দিন দুপুরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেন। তারা দুজনেই ভারতে অবস্থান করছেন বলে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল জুলাই হত্যাকাণ্ডের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত এ ব্যক্তিদের দ্বিতীয় কোনো দেশ আশ্রয় দিলে তা হবে অত্যন্ত অবন্ধুসুলভ আচরণ ও ন্যায়বিচারের প্রতি অবজ্ঞার সামিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, আমরা ভারত সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই, তারা যেন অবিলম্বে দণ্ডপ্রাপ্ত এই দুই ব্যক্তিকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করেন।
দুই দেশের মধ্যে বিরাজমান প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী এটি ভারতের জন্য অবশ্যপালনীয় দায়িত্ব বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়ায় তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জুলাইয়ে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা এই আসামির ন্যূনতম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড রায় দাবি করেছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। একই অপরাধে এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন বিচারক। সাবেক আইজিপি মামলায় ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় তাকে সাজা কমিয়ে দিয়েছেন আদালত।
রায়ের পরপরেই এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখান জুলাইয়ে শহিদ ও আহতদের পরিবার এবং জুলাইযোদ্ধারা। চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সাজা কমানোকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে প্রত্যাখ্যান করে তারা উচ্চ আদালতে আপিলের ঘোষণা দিয়েছেন।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে—
‘রাজসাক্ষী’র ৫ বছরের কারাদণ্ডে শহিদ পরিবারে তীব্র অসন্তোষ, যাবজ্জীবন দাবি

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে ঘোষিত মৃত্যুদণ্ডের রায়কে ঐতিহাসিক হিসেবে অভিহিত করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে সরকারের এ অবস্থান জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে এ রায়ের গভীর তাৎপর্য উপলব্ধি করে সর্বস্তরের জনগণকে শান্ত, সংযত ও দায়িত্বশীল থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিবৃতিতে সরকার বলছে, রায়-পরবর্তী সময়ে কোনো ধরনের উচ্ছৃঙ্খলতা, উত্তেজনাপ্রসূত আচরণ, সহিংসতা বা আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে বিশেষ অনুরোধ জানানো হচ্ছে।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।
এ রায়কে মাইলফলক বলে উল্লেখ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। সোমবার রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এ রায় মাইলফলক। অপরাধ বিবেচনায় এ সাজা যথেষ্ট না হলেও আগামীতে কোনো সরকার বা কোনো ব্যক্তি যেন ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে না পারে তার জন্য উদাহরণ হবে এ রায়।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, ‘এ রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, ফ্যাসিবাদ যত শক্তিশালী হোক, যতই ক্ষমতা দখলে রাখুক, তাদের একদিন না একদিন আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।’
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যে রায় ঘোষণা করেছেন, একে ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে অভিহিত করেছেন ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম। এ মামলায় উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ দিয়ে বিশ্বের যেকোনো আদালতেই একই রায় হতো বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার পর বিকেলে ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, বাংলাদেশ জটিল অপরাধের বিচার করতে সক্ষম এবং বাংলাদেশ সাফল্যের সঙ্গে সেটা করেছে। আমরা এটাও একই সঙ্গে বলতে চাই—যে ধরনের সাক্ষ্যপ্রমাণ এ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে, বিশ্বের যেকোনো আদালতের স্ট্যান্ডার্ডে এগুলো উৎরে যাবে। পৃথিবীর যেকোনো আদালতে এ সাক্ষ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করা হলে আজ যেসব আসামিকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই একই শাস্তি পেতেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আদালত। ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় একই অভিযোগে দায়ী হলেও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে দেওয়া হয়েছে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড।
আদালতের আদেশের কথা তুলে ধরে তাজুল ইসলাম বলেন, আদালত যেটা করেছেন, দণ্ডপ্রাপ্ত শেখ হাসিনার সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দিয়েছেন। সেই সম্পদ রাষ্ট্র গ্রহণ করবে এবং সেখান থেকে সব শহিদ পরিবার ও আহত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেবে।
চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, আওয়ামী লীগ ও ১৪ জোট বা যুবলীগ একটি সন্ত্রাসী বা ক্রিমিনাল সংগঠন ছিল কি না, এটি যেহেতু আজকের মামলার সরাসরি বিবেচ্য বিষয় নয় বা তারা আসামি হিসেবে পক্ষ নয়, সে ব্যাপারে আদালত অবজারভেশন দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন।
সাজাপ্রাপ্ত দুই আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামাল দুজনেই পলাতক। তাদের বিষয়ে তাজুল বলেন, ভারতের সঙ্গে ২০১৩ সালের চুক্তি অনুযায়ী মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যারা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে, ভারত সরকার আইনের শাসন ও ন্যায়বিচারের স্বার্থে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে এবং তাদের ওপর যে সাজা তা কার্যকর করা যাবে। দ্বিতীয় প্রক্রিয়া হচ্ছে, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশে নিয়ে আসা যেতে পারে।

জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। পাশাপাশি আগামী সরকার যেন বিচার প্রক্রিয়াকে এগিয়ে নিয়ে যায়, তেমন প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন তিনি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে রায়ের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, আমরা যতদিন আছি, বিচারকাজ পূর্ণোদ্যমে চলবে। আশা করি আগামীতে যে সরকার নির্বাচিত হয়ে আসবে, বিচারের গুরুদায়িত্ব থেকে তারাও যেন কোনো অবস্থাতেই পিছুপা না হয়।
এ মামলায় যারা সাক্ষী দিয়েছেন তাদেরও অভিনন্দন জানান আইন উপদেষ্টা। এ রায়ের মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে জুলাইয়ের এ মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার আরেক আসামির বিরুদ্ধে একই অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তিনি ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
পাশাপাশি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের সব সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। তাদের এসব সম্পদ বিক্রি করে জুলাই শহিদ ও জুলাইয়ে আহতসহ ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন আদালত।

জুলাই অভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড সাজায় শহিদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। পাশাপাশি মামলার সাজা কার্যকর করতে আইনিভাবে যা যা করা সম্ভব, রাষ্ট্র সেগুলো করবে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার পর ট্রাইব্যুনালের সামনে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, জুলাই বিপ্লবে শহিদদের মামলায় শহিদরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন, রাষ্ট্র ন্যায়বিচার পেয়েছে, প্রসিকিউশন পক্ষ ন্যায়বিচার পেয়েছে। সে ন্যায়বিচারের মানদণ্ড হলো মামলার দুজন আসামিকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। একজন আসামি যিনি আদালতের সামনে নিজেকে রাজসাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, আদালত সার্বিক বিবেচনায় তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন।
আসাদুজ্জামান আরও বলেন, এ রায়ের মাধ্যমে শহিদদের প্রতি, দেশের প্রতি, দেশের মানুষের প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি, সংবিধানের প্রতি, আইনের শাসনের প্রতি ও আগামী প্রজন্মের প্রতি দায়বদ্ধতা পরিশোধে এ রায় একটি যুগান্তকারী রায়। এ রায় প্রশান্তি আনবে। এ রায় ভবিষ্যতের জন্য একটি বার্তা। এ রায় বাংলাদেশে ন্যায়বিচার ও আইনের শাসনের প্রতি একটি বার্তা।

মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিললেও ‘রাজসাক্ষী’ হওয়ায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
সোমবার দুপুর পৌনে ৩টার দিকে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইবুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, এ মামলার বাকি দুই আসামির মতো চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। তিনিও সমান সাজা পাওয়ার যোগ্য।
বিচাপতি বলেন, কিন্তু যেহেতু তিনি ‘রাজসাক্ষী’ হয়েছেন এবং আদালতকে এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যপ্রমাণ দিয়েছেন, সে কারণে তার সাজা কিছুটা কম হবে। তাকে আমরা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড সাজা দিয়েছি।

চাঁনখারপুলে ছয়জনকে হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার পর পাঁচজনের লাশ পোড়ানোর ঘটনায় জড়িত হিসেবে প্রমাণ মিলেছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে। এর জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৫০ মিনিটে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইবুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই আন্দোলন চলাকালে হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর ২টা ৪৮ মিনিটে চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইবুনালের বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
রায়ে ট্রাইব্যুনাল বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব অভিযোগ এ মামলায় করা হয়েছে সেগুলো সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে সরাসরি জড়িত ছিলেন।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার বলেন, শেখ হাসিনা গত কিছুদিনে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তবে কিছু কিছু সাক্ষাৎকারে তিনি পরোক্ষভাবে এসব অপরাধে নিজের নির্দেশের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন।
আদালত রায়ে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর যে দমনপীড়ন চালানো হয়েছে তা নজিরবিহীন। কেবল বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বেই এমন নিপীড়ন বিরল। জুলাই আন্দোলনে যারা হাত-পাসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারিয়েছে। এসব জঘন্য নির্যাতনের অবসান ঘটা প্রয়োজন। এর ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
বিচারক বলেন, শেখ হাসিনা উসকানি, হত্যার নির্দেশ ও হত্যাযজ্ঞ-নিপীড়ন প্রতিরোধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার তিন অভিযোগে অভিযুক্ত। এ কারণে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। ১ নম্বর অভিযোগে তাকে আমৃত্যু কারাদণ্ড সাজা দেওয়া হলো।
বিচারক আরও বলেন, ড্রোন-হেলিকপ্টার ও প্রাণঘাতী ব্যবহারের মাধ্যমে হত্যার নির্দেশ দিয়ে শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন। এ ছাড়া তিনি একই মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছেন চানখাঁরপুলে ছয়জনকে হত্যা ও আশুলিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় নির্দেশদাতা হিসেবে। এসব অপরাধে তাকে মৃত্যুদণ্ড সাজা দেওয়া হলো।
রাজসাক্ষী হওয়ায় সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে সর্বোচ্চ সাজা দেওয়া হবে না, তার সাজা কিছুটা কম হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
আদালত বলেন, এ মামলার আসামি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন যাবতীয় অপরাধের বিস্তারিত ও সত্য বিবরণ তুলে ধরার বিনিময়ে ‘রাজসাক্ষী’ (অ্যাপ্রুভার) হয়েছেন। তিনি যে অপরাধে জড়িত ছিলেন তাতে তিনি সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড পাওয়ার উপযোগী। কিন্তু তিনি রাজসাক্ষী হওয়ায় তার সাজা কিছুটা কম হবে, যা পরে ঘোষণা করা হবে।
রাজধানীর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে এক্সক্যাভেটর নিয়ে ঢোকার চেষ্টা করা বিক্ষোভকারীদের পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দিয়েছেন।
সোমবার দুপুর পৌনে ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল নিক্ষেপ করে বিক্ষোভকারীরা।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়ছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। ছয় অংশের দীর্ঘ এ রায়ে শেষ অংশ পড়তে শুরু করেছেন ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ট্রাইব্যুনালে রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু হয়। ট্রাইব্যুনাল জানান, ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টি ছয়টি অংশে বিভক্ত। এরপর বিচারপতিরা এসব অংশ তুলে ধরেন।
দুপুর ১টা ৫৭ মিনিটে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার রায়ের ষষ্ঠ ও শেষ অংশ পড়তে শুরু করেছেন।
এর আগে রায়ের অন্যান্য অংশে শেখ হাসিনার সঙ্গে পুলিশ-প্রশাসনসহ রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে টেলিফোন কথোপকথন পড়ে শোনানো হয়, যেখানে জুলাই হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনার নির্দেশের কথা উঠে আসে।
এ ছাড়া জুলাই হত্যাকাণ্ডসংশ্লিষ্ট যেসব ভিডিও রয়েছে, সেসব ভিডিওতে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণের বিবরণও বিচারপতিরা তুলে ধরেন ট্রাইব্যুনালে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আদালতের বাইরে অবস্থান নিয়েছে গণঅধিকার পরিষদ ও ‘মঞ্চ ২৪’।
সোমবার দুপুরের দিকে হাইকোর্ট মাজার গেটের সামনে চেয়ার-টেবিল নিয়ে অবস্থান নেন ‘মঞ্চ ২৪’-এর সদস্যরা। আশপাশেই অবস্থান করছিলেন গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা।
ট্রাইব্যুনালের সামনে ‘শেখ হাসিনার ফাঁসি চাই’ বলে স্লোগান দিচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণা শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ পর্যায়ে বিভিন্ন ভিডিওতে মানবতাবিরোধী অপরাধের যেসব তথ্যপ্রমাণ মিলেছে সেগুলোর বিবরণ তুলে ধরছেন বিচারপতিরা।
সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার কার্যক্রম। শুরুতে বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন। তিনি জানান, ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টি ছয়টি অংশে বিভক্ত। এতে মামলার বিবরণ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষ্যসহ সবকিছু উল্লেখ রয়েছে।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও অভিযোগ তুলে ধরার পর ট্রাইব্যুনাল শেখ হাসিনার সঙ্গে তখনকার পুলিশ-প্রশাসনসহ তার রাজনৈতিক সহযোগীদের সঙ্গে টেলিফোন কথোপকথন পড়ে শোনান। এরপর ট্রাইব্যুনাল বিভিন্ন ভিডিওতে উঠে আসা তথ্যপ্রমাণের বিবরণ পাঠ করেন।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে রায় পড়তে শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিরা। এর অংশ হিসেবে জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে শেখ হাসিনার সঙ্গে সাবেক সরকার, শেখ হাসিনার রাজনৈতিক সহযোগী ও প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার টেলিফোন কথপোকথন পড়ে শোনানো হচ্ছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় রায় পড়তে শুরু করেন বিচারকরা। জানান, ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়টি ছয়টি অংশে বিভক্ত। এতে মামলার বিবরণ থেকে শুরু করে তথ্যপ্রমাণ, সাক্ষ্যসহ সবকিছু উল্লেখ রয়েছে।
বিচারকরা এ পর্যায়ে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ও শেখ হাসিনার আত্মীয় শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক তথ্যমন্ত্রী জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুসহ কয়েকজনের সঙ্গে শেখ হাসিনার টেলিফোন কথপোকথনের বিবরণ তুলে ধরেন বিচারক।

রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির সামনে দুটি এক্সক্যাভেটর নিয়ে গেছেন একদল তরুণ। এক্সক্যাভেটর দুটি নিয়ে তারা ৩২ নম্বর বাড়িতে প্রবেশ করতে চাইছেন।
ঘটনাস্থলে পুলিশ অবস্থান করছে। তারা এক্সক্যাভেটর ভেতরে ঢুকতে না দেওয়ায় তরুণরা সেখানে বিক্ষোভ করছেন।

ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে জুলাইয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় রায় ঘোষণার কার্যক্রম শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। এ সময় চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম সূচনা বক্তব্য দেন।
এরপর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদার সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শুরু করেন।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কিছুক্ষণের মধ্যেই রায় ঘোষণা করবে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন বলছে, তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। ফলে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের আশা করছেন তারা।
শেখ হাসিনার এ রায় নয়, বরং তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করাকেই বড় কাজ বলে মনে করছেন জুলাইয়ে শহিদ মীর মুগ্ধের ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে মীর স্নিগ্ধ বলেন, এই রায় কিছুই প্রমাণ করে না, যতদিন না পর্যন্ত এই খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশের মাটিতে ফেরত এনে তার বিচার কার্যকর না করা হচ্ছে। তাই অবশ্যই সর্বপ্রথম দাবি থাকবে— খুনি হাসিনাকে দেশের মাটিতে ফেরত এনে রায় কার্যকর করা হোক।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে—

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায়ের আগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হয়েছেন জুলাইয়ে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। তারা ন্যায়বিচার তথা শেখ হাসিনাসহ মামলার তিন আসামির ফাঁসি দাবি করছেন।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল থেকেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজির হতে শুরু করেন জুলাইয়ে শহিদ ও আহতদের পরিবারের সদস্যরা। সকাল ১০টার পর তারা ট্রাইব্যুনালের মূল ফটকের সামনে অবস্থান নেন। পরে হাইকোর্টের মাজার রোডসংলগ্ন গেটের সামনে অবস্থান করছেন তারা।
জুলাইয়ে আহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী আরাফাত বলেন, পুলিশ আমার পায়ে গুলি করেছিল। সঙ্গে সঙ্গে সড়কে পড়ে যাই। উঠতে পারিনি। কিছু মানুষজন এসে আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেই ভয়াবহ স্মৃতি কখনো ভোলার মতো নয়।
আরাফাত আরও বলেন, চোখের সামনে আমাদের ভাইয়েরা শহিদ হয়েছে। আমরা এসবের বিচার চাই। আশা করি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামিকে সর্বোচ্চ সাজা দেবেন। সেটা হলে হয়তো আমাদের শহিদ ভাইদের আত্মা কিছুটা হলেও শান্তি পাবে।
ট্রাইবুনালের রায় শুনতে আসা এসব ব্যক্তিদের অনেকের হাতে আছে জুলাই শহিদদের ছবি। কারও হাতে রয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন। শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চেয়ে পোস্টারও এনেছেন তারা।

জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এ মামলায় সাবেক আইজিপি ‘রাজসাক্ষী’ (অ্যাপ্রুভার) হওয়ায় তার বিরুদ্ধে রায় বাকি দুজনের চেয়ে আলাদা হতে পারে।
আইনজীবীরা বলছেন, ‘রাজসাক্ষী’র সাজার বিষয়টি সম্পূর্ণ আদালতের এখতিয়ার। আদালত তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দিতে পারেন। আবার যেকোনো সাজাও দিতে পারেন।
জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার শফিকুল ইসলাম সোহেল রাজনীতি ডটকমকে বলেন, আদালত সন্তুষ্ট হলে তাকে খালাস দিতে পারেন, স্বল্প সাজাও দিতে পারেন, কিংবা বাকি আসামিদের মতো সর্বোচ্চ সাজাও দিতে পারে। এটি সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার।

জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে ৪ আগস্ট রাতেও তখনকার প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিয়ে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আলোচনা হয়েছে কীভাবে আন্দোলন দমন করা যায়। পরদিন ৫ আগস্ট সকাল ১০টা পর্যন্ত ঢাকায় পুলিশের শক্তিশালী অবস্থান ছিল। ১১টার দিকে উত্তরা দিয়ে লাখ লাখ জনতা ঢাকায় ঢুকতে শুরু করলে এবং সেনাবাহিনী তাদের বাধা না দিলে তখন গিয়ে পুলিশ তাদের অবস্থান ছেড়ে দিতে শুরু করে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বিচারের মুখোমুখি বাংলাদেশ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন জবানবন্দিতে এসব তথ্য দিয়েছেন।
গত ২৪ মার্চ ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতের অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. জাকির হোসাইনের আদালতে জবানবন্দি দেন চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। বিস্তারিত পড়ুন নিচের প্রতিবেদনে—
রাজসাক্ষীর জবানবন্দি— সাবেক আইজিপির চোখে ৪ ও ৫ আগস্ট
গত ১০ জুলাই এই তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। এর মাধ্যমে জুলাইয়ের প্রথম কোনো মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হয়। এ দিনই আদালতে ‘আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত’ বলে অপরাধের দায় স্বীকার করেন সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। বলেন, তিনি রাজসাক্ষী হয়ে জুলাই আন্দোলনের সময়কার গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্যপ্রমাণ আদালতকে দেবেন।

জুলাই আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রথম মামলার রায় ঘোষণার অপেক্ষায়। রায় ঘোষণার জন্য এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত হয়েছেন বিচারপতিরা।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে তারা আদালত প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন। এ সময় ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা দেখা গেছে। পুলিশ ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি সদস্যদের।
সোমবার বেলা ১১টার পর ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইবুনাল-১-এ রায় হওয়ার কথা রয়েছে।
ট্রাইবুনাল-১-এর বাকি দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

জুলাই হত্যাকাণ্ডের প্রথম মামলায় রায়ের মুখোমুখি ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা। বিরুদ্ধে আনা হয়েছে মানবতাবিরোধী ৫টি অভিযোগ।
একই মামলায় আসামি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। তিনি রাজসাক্ষী হওয়ায় তার রায় বাকি দুজনের থেকে ভিন্ন হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
মামলায় যে ৫ অভিযোগ আনা হয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সেগুলো হলো—
শেষ তিনটি ঘটনাতেই শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ‘উসকানিমূলক’ বক্তব্য ও ছাত্র আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ দিয়েছেন।
শেখ হাসিনার এ নির্দেশের পর অভিযুক্তরা তৎকালীন অন্যান্য উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিলে তাদের অধীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের সশস্ত্র কর্মীদের কর্মকাণ্ডে প্ররোচনা, সহায়তা ও যোগসাজশে যুক্ত ছিলেন।

জুলাই অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায়ের জন্য সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে তিনিও এ মামলার অন্যতম আসামি। তবে তিনি এ মামলায় দোষ স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য সরবরাহের শর্তে রাজসাক্ষী (অ্যাপ্রুভার) হয়েছেন।
পুলিশের প্রিজন ভ্যানে করে সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ৯টা ৭ মিনিটে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয় চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। পরে সেখান থেকে নেওয়া হয় হাজতখানায়।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের রায় ঘোষণা হবে কিছুক্ষণ পরেই। এ রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের চারদিকে নিরাপত্তা বাহিনী কঠোর নজরদারি চালাচ্ছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকালে ট্রাইব্যুনালের সামনে পুলিশ, র্যাব, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। ট্রাইব্যুনালের ভেতরে ও বাইরে পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তা আরও বাড়ানো হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘিরে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নেওয়া হয়েছে নজিরবিহীন নিরাপত্তাব্যবস্থা। পুলিশ-র্যাব ছাড়াও মোতায়েন করা হয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদের।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) সকাল ১১টায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্যানেল রায় প্রকাশ করবেন।
বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি), রয়টার্স ও ট্রাইব্যুনালের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে রায় সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। একই সঙ্গে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ঢাকার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বড় স্ক্রিনে লাইভ সম্প্রচারের আয়োজন করেছে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আসামিদের বিরুদ্ধে আনা পাঁচটি অভিযোগই সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ (প্রসিকিউশন)। রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করছে।
গত ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করা হয়। পুনর্গঠিত ট্রাইব্যুনালে প্রথম মামলাটি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হয়, যেখানে ১৭ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পরবর্তীকালে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন ও আসাদুজ্জামান খানও আসামি হন।
মামলায় প্রসিকিউশন গত ১২ মে ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালে জমা দেয়। এর মধ্যে তথ্যসূত্র ২ হাজার ১৮ পৃষ্ঠা, জব্দতালিকা ও প্রমাণাদি ৪ হাজার পাঁচ পৃষ্ঠা এবং শহীদদের তালিকা ২ হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠা। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করা হয় এবং ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে রায়ের প্রতিবাদে সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ। এমন পটভূমিতে রোববার রাতেও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ককটেল বিস্ফোরণ, বাস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আগুন এবং মশাল মিছিলের খবর পাওয়া গেছে।
রোববার রাতে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের বাসভবনের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কার্যালয়ের সামনেও।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অগ্নিসংযোগ ও ককটেল নিক্ষেপের সঙ্গে জড়িতদের গুলির নির্দেশ দিয়ে আলোচনায় এসেছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী। ঢাকা মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, সব বিষয় মাথায় রেখেই নিরাপত্তা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। তাই আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
ঢাকা ছাড়াও কড়া নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর ও ফরিদপুরে। এসব জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।