টিম রাজনীতি ডটকম
বহুল প্রতীক্ষিত ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’-এ সই করেছে ২৪টি রাজনৈতিক দল। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরাও এতে সই করেছেন। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ দিনের আলোচনার ফসল সংস্কার প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নের অঙ্গীকারে সম্মত হলো রাজনৈতিক দলগুলো।
তবে জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনায় ওতপ্রোতভাবে যুক্ত ছয়টি রাজনৈতিক দল এই সনদে সই করেনি, এর মধ্যে রয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি)।
অন্যদিকে জুলাই সনদ ঘিরে তিন দাবি নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে সকাল থেকে অবস্থান নিয়েছিলেন ‘জুলাই যোদ্ধা’রা। তাদের অবস্থান ঘিরে পুলিশের সঙ্গে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষও হয়েছে।
বিস্তারিত পড়ুন এখানে— জুলাই যোদ্ধাদের বিক্ষোভ-৫ দলের বর্জনের মধ্যেই জুলাই সনদে সই
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ দিনের সংলাপে ৩০টি রাজনৈতিক দল ও জোট সক্রিয়ভাবে অংশ নিলেও এর মধ্যে ছয়টি দল শেষ পর্যন্ত জাতীয় জুলাই সনদে সই করেনি। সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে মতভিন্নতার কারণে এর মধ্যে পাঁচটি দল বর্জন করেছে জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানও।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেলে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে বাকি ২৪টি রাজনৈতিক দল। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসসহ জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বাকি সদস্যরাও এতে সই করেন।
ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে সংলাপে থাকা ৩০টি দল ও জোটের মধ্যে যে ২৪টি দল সই করে জুলাই সনদ বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করেছে তারা হলো—
বিভিন্ন দল বা গোষ্ঠীর নানা ধরনের চাওয়া-পাওয়া থাকলেও সবাই গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের একটি লক্ষ্য নিয়েই জুলাই সনদে সই করার মাধ্যমে এক মোহনায় মিশেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, আমাদের মতের পার্থক্য থাকবে, পথের পার্থক্য থাকবে। রাজনীতিতে মতপার্থক্য না থাকলে তা গণতান্ত্রিক হয় না। কিন্তু ঐক্যের জায়গাও থাকতে হবে। যেন আমরা বলতে পারি, আমাদের অনেক স্রোত, মোহনা একটি— একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ তৈরি করা। আমাদের বহু স্রোত, কিন্তু সবাই এক জায়গায়— আমরা যেকোনো ধরনের স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই দাঁড়িয়ে থাকব।
জুলাই জাতীয় সনদকে সেই স্বপ্ন, সেই প্রত্যাশা, সেই চেষ্টার স্মারকের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ। শুক্রবার জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন। জুলাই সনদ প্রণয়নে তিনিই কমিশনের পক্ষ থেকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়ন হবে আশাবাদ জানিয়ে আলী রীয়াজ বলেন, আমরা মনে করি রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আমাদের যে চেষ্টা সে চেষ্টা একদিনে সাফল্য অর্জন করবে না। কেবল একটি দলিল সেটার নিশ্চয়তা দেবে না। আমরা আশা করি, এই যে জাতীয় দলিল তৈরি হয়েছে, তার বাস্তবায়ন ঘটবে। দ্রুততার সঙ্গে বাস্তবায়ন ঘটবে। নাগরিকদের মতামতের মধ্য দিয়ে এই দিক নির্দেশক, বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে ভবিষ্যতে পরিচালনা করবে। কিন্তু আমাদের অনেকটা পথ যেতে হবে।
জুলাই সনদ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠানকে ঐতিহাসিক অভিহিত করে ঐকমত্য কমিশনের এই সহসভাপতি বলেন, আজকের এই দিন বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি অভূতপূর্ব ও অনন্য সময়। একটি ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে থাকা বাংলাদেশের জন্য এটি হচ্ছে আমাদের দীর্ঘপথের যাত্রার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে লাখো মানুষের আত্মদানের মধ্য দিয়ে সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের আদর্শকে ধারণ করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র গঠনের প্রচেষ্টা শুরু হলেও তা গত ৫৩ বছর ধরে বারবার হোঁচট খেয়েছে বলে উল্লেখ করেন আলী রীয়াজ। পরবর্তী সময়ের নানা আন্দোলন-সংগ্রামের কথাও তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, এসব লড়াই-সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় আজ আমরা জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর করতে যাচ্ছি। আমাদের যে স্বপ্ন, বাংলাদেশের মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা—তাকে ধারণ করে, তাকে অগ্রসর করে নিয়ে যাওয়ার জন্য সবার জন্য একটি বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যে চেষ্টা, তাতে একটি দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্যই বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলো প্রায় এক বছর ধরে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে এই জাতীয় সনদে উপনীত হয়েছেন।
জুলাই সনদ প্রণয়ন ও এতে সই করতে সম্মত হওয়ার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানান আলী রীয়াজ। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই ধন্যবাদ জানান তিনি।
আলী রীয়াজ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যারা প্রাণ দিয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, যারা আজকেও আহত আছেন, জুলাই যোদ্ধারা আজকেও সামগ্রিকভাবে কষ্টকর জীবনযাপন করছেন। তাদের প্রত্যেকের অবদানের মধ্য দিয়ে এই সনদ তৈরি হয়েছে। কেননা জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান দীর্ঘদিনের রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য যে আকাঙ্ক্ষা, তার প্রতিফলন।
তিনি আরও বলেন, যা সাম্য-মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায় বিচারকে প্রতিষ্ঠা করে, সেই প্রচেষ্টায় আমরা সবাই এক, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ। কেননা সেখানে আমি-আপনি-তুমি-সে, এভাবে আমরা বিভক্ত নই। সেই প্রচেষ্টা, সেই সংগ্রাম, সেই প্রয়াস, সেই পথযাত্রা অব্যাহত থাকবে। সেই প্রত্যাশা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের, সেই প্রত্যাশা আমাদের সবার।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘জাতীয় জুলাই সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ২৫টি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা উপস্থিতি ছিলেন। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বিভিন্ন সংলাপে অংশ নেওয়া বাকি পাঁচটি দল এ অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি।
যেসব রাজনৈতিক দল ও তাদের প্রতিনিধিরা জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তারা হলেন—
১। লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমেদ ও প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. নেয়ামূল বশির
২। খেলাফত মজলিসের আমীর মাওলানা আব্দুল বাছিত আজাদ ও মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের
৩। রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম ও মিডিয়া সমন্বয়ক সৈয়দ হাসিবউদ্দীন হোসেন
৪। আমার বাংলাদেশ পাটির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মজিবুর রহমান ভূঁইয়া মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ
৫। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার
৬। জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ ও মহাসচিব মোমিনুল আমিন
৭। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ
৮। বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ
৯। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারী জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার
১০। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল
১১। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন ও সিনিয়র সহসভাপতি মিসেস তানিয়া রব
১২। গণঅধিকার পরিষদের (জিওপি) সভাপতি নুরুল হক নুর ও সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন
১৩। বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক ও রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য বহ্নিশিখা জামালী
১৪। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ এবং জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান
১৫। ১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র এবং ১২ দলীয় জোট ও বাংলাদেশ এলডিপির চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম;
১৬। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান
১৭। গণফোরামের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. মিজানুর রহমান
১৮। জাকের পাটির ভাইস চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম ভুইয়া ও গাজীপুর জেলা ছাত্রফ্রন্টের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জহিরুল হাসান শেখ
১৯। জাতীয় গণফ্রন্টের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল হক টিপু বিশ্বাস ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আরেফিন লিটু বিশ্বাস
২০। বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা আবদুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইযহার
২১। বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়্যারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব খন্দকার মিরাজুল ইসলাম
২২। ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান শেখ রফিকুল ইসলাম (বাবলু) ও মহাসচিব ড. মোহাম্মদ আবু ইউসুফ (সেলিম)
২৩। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহসভাপতি মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী ও মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী
২৪। ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল কাদের ও মহাসচিব মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন রাজী
২৫। আমজনতার দলের সভাপতি কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক মো. তারেক রহমান
এ ছাড়াও শহিদ পরিবারের পক্ষ থেকে শহিদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর বাবা মীর মোস্তাফিজুর রহমান ও শহিদ তাহির জামান প্রিয়র মা শামসী আরা বেগম জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ সই করার মাধ্যমে বাংলাদেশের নবজন্ম হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আজ এই জুলাই জাতীয় সনদ সইয়ের মাধ্যমে আমাদের নবজন্ম হলো। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা করলাম। এখান থেকে আমরা যেন সামনের দিকে সঠিকভাবে যেতে পারি, তার জন্য আল্লাহর মেহেরবানি চাই, যেন আমরা পথ থেকে বিচ্যুত না হই।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে একমত হয়েছি যে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। সেভাবেই দেশকে পরিচালনা করা, দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সেটি কীভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়, তার জন্যই এই সনদ প্রণয়ন করা হয়েছে।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান থেকে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত সবাইকে এবং দেশের সব নাগরিককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ১০ মিনিটে বক্তব্য দিতে শুরু করেন প্রধান উপদেষ্টা। এ সময় তিনি জুলাই সনদ প্রণয়নে অনন্য ভূমিকা রাখার জন্য জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
এর আগে জুলাই জাতীয় সনদে সই করেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের সই শেষ হলে প্রধান উপদেষ্টা নিজেও এ সনদে সই করেন।
অপেক্ষার অবসান হলো। সই হলো জুলাই জাতীয় সনদ। শুরুতে রাজনৈতিক দলের নেতারা সই করেন এ সনদে। এরপর প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস সই করেন এতে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সবাইকে সনদে সই করার অনুরোধ জানান।
এ সময় প্রধান উপদেষ্টাসহ সব রাজনৈতিক নেতারাই নির্ধারিত স্থানে জুলাই সনদে সই করেন।
চলছে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ স্বাক্ষরের অনুষ্ঠান। কিন্তু দীর্ঘ আট মাস সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত এই সনদে কী আছে? এই সনদ বাস্তবায়নে কী অঙ্গীকার করবে রাজনৈতিক দলগুলো।
জুলাই সনদ প্রণয়নের প্রক্রিয়া ও সনদে কী আছে, বিস্তারিত পড়ুন এ প্রতিবেদনে, পড়ুন জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ কপি।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ প্রণয়নের পটভূমি তুলে ধরে সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চে বক্তব্য রাখছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। জুলাই সনদ প্রণয়নে তিনিই কমিশনের পক্ষ থেকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৫২ মিনিটে জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে শুরু করেন তিনি।
জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত হয়েছেন অনুষ্ঠানস্থলে।
তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার ও নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
আরও রয়েছেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রেসিডিয়াম সদস্য আশরাফ আলী আকন, গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব রাশেদ খানসহ অন্যরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।
জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ স্বাক্ষরের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। শুরুতেই মঞ্চে বাজানো হয়েছে জাতীয় সংগীত।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটের দিকে জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর মঞ্চে শুরু হয় জাতীয় সংগীত।
এ সময় দর্শক ও অতিথিদের সারিতে সবাই দাঁড়িয়ে থেকে শ্রদ্ধা জানান, কণ্ঠ মেলান জাতীয় সংগীতে।
দীর্ঘ আট মাস ধরে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। এবার সেই সনদ স্বাক্ষরের পালা। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে কিছুটা দেরি হলেও অবশেষে সে আয়োজনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৩৫ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৌঁছান জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের মঞ্চে। সেখানে উপস্থিত সবাই তাকে স্বাগত জানান। এরপরই একটি ব্যান্ড দল বাদ্য বাজিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করে।
এ দিন বিকেল ৩টার দিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকেও এক বার্তায় অনুষ্ঠান শুরু হতে দেরি হতে পারে বলে জানানো হয়। বলা হয়, আমরা প্রস্তুত ঐতিহাসিক জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের জন্য। প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে অনুষ্ঠান শুরুর সময় কিছুটা বিলম্ব হতে পারে।
প্রস্তুতি সম্পন্ন ও অতিথিদের উপস্থিতির তথ্য জানিয়ে প্রেস উইং জানায়, এ অনুষ্ঠানের সার্বিক প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অনেক অতিথি এরই মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা প্রত্যক্ষ করতে অপেক্ষা করছি।
সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় দেখা গেছে, সনদ স্বাক্ষরের মঞ্চ প্রস্তুত। সেখানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত আছেন। সামনে অতিথিদের বসার জায়গা করা হয়েছে। সেখানে অতিথিদের অনেকেই উপস্থিত রয়েছেন।
এ অনুষ্ঠান ঘিরে অবশ্য সকাল থেকে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয় সংসদ ভবন এলাকায়। জুলাই অভ্যুত্থানে আহত ছাত্র-জনতাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি এবং জুলাই আহত বীর হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানসহ তিন দাবিতে সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলে অবস্থান নেন তারা। দুপুরে তাদের দাবি মেনে নেওয়ার কথা জানান জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তবে তারা নিজেদের অবস্থানে অটল থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের সংসদ ভবন এলাকা থেকে সরিয়ে দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এতে কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।