শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন— প্লট দুর্নীতির মামলার রায়ে পর্যবেক্ষণ

প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৫০
(বাঁ থেকে) শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। কোলাজ: রাজনীতি ডটকম

পূর্বাচলে নতুন শহর প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে ও মেয়েকে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক বলেছেন, কোনো ধরনের আবেদন ছাড়াই ওই সব প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের। এসব প্লট নিয়ে শেখ হাসিনা রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এ রায় ঘোষণা করেন।

প্লট দুর্নীতির অভিযোগে শেখ হাসিনার নামে মামলা ছিল তিনটি। প্রতিটি মামলায় সাত বছর করে তাকে মোট ২১ বছরের সাজার রায় ঘোষণা করেন বিচারক।

অন্যদিকে একই অভিযোগের একটি মামলায় আসামি শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, আরেক মামলার আসামি তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। তাদের দুজনকে পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। জয়কে এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড সাজাও দেওয়া হয়েছে।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেন, কোনো ধরনের আবেদন পত্র ছাড়াই এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে শেখ হাসিনাসহ তার পরিবারের নামে প্লট বরাদ্দ করা হয়েছিল। প্লট বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজউকের বিধিমালা বা কোনো নিয়ম অনুসরণ করা হয়নি।

রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত আরও বলেন, সরকারি সম্পত্তি নিজের নামে নিয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন শেখ হাসিনা। এ ছাড়া প্লট নেওয়ার জন্য যে হলফনামা দেওয়া হয়েছিল তাতে নোটারি করা ছিল না বলে সেই হলফনামা জাল নথি ছিল বলে রায়ে উল্লেখ করেছে আদালত।

রায়ে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর মতো পদে থেকে বহুদিনের রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে শেখ হাসিনা রাজউকের ৬০ শতক জমি বরাদ্দ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১০ শতক নিয়েছিলেন নিজের জন্য এবং বাকিটা নিয়েছিলেন তার ছেলে, মেয়ে, বোন ও বোনের সন্তানদের জন্য। এ ঘটনা প্রমাণ করে, সরকারি সম্পত্তির প্রতি লোভসহ বিশেষ ও নিয়ন্ত্রণহীন ক্ষমতার অধিকারী এবং দুর্নীতিগ্রস্ত মানসিকতা ধারণ করতেন তিনি।

রায়ে আরও বলা হয়েছে, চার মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও তিনি জমি বরাদ্দের ন্যায্যতা নিশ্চিত করার নিয়মকানুন উপেক্ষা করেছেন, যা রাষ্ট্রীয় সম্পদ এক পরিবারের হাতে কেন্দ্রীভূত হওয়া ঠেকানোর জন্যই তৈরি। সরকারি জমিকে ব্যক্তিগত সম্পত্তির মতো ব্যবহার করে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্পদের প্রতি লোভী দৃষ্টি দিয়েছেন এবং নিজের ও ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সুবিধা দিতে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।

এ ধরনের আচরণ দায়িত্বের সুস্পষ্ট অপব্যবহার এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন কাউকে আইনের ঊর্ধ্বে স্থান দিতে পারে— এমন ধারণারই বহির্প্রকাশ। এসব কর্মকাণ্ড জনবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সততা ও জবাবদিহিতার শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর এবার প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির মামলায় তার বিরুদ্ধে রায় এলো। শেখ হাসিনা ও তার ছেলে-মেয়ে পলাতক থাকায় তাদের অনুপস্থিত দেখিয়ে এসব মামলার বিচার হয়েছে।

শেখ হাসিনা, জয় ও পুতুলসহ পৃথক এ তিন মামলায় আসামির সংখ্যা ৪৭। একই ব্যক্তি একাধিক মামলায় আসামি রয়েছেন। সে হিসাবে মোট ২৩ ব্যক্তি এসব মামলার আসামি। তাদের মধ্যে কেবল সাবেক রাজউক কর্মকর্তা খুরশিদ আলম কারাগারে রয়েছেন। তাকে এক বছরের কারাদণ্ড সাজা দিয়েছেন আদালত। গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকারকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে রায় ঘিরে বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়। সকাল থেকেই আদালত প্রাঙ্গণে পুলিশ, বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন ছিলেন।

ad
ad

খবরাখবর থেকে আরও পড়ুন

সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের ১৮ বছরের কারাদণ্ড

রাজউকের পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির তিন পৃথক মামলায় সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদকে ১৮ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

৩ ঘণ্টা আগে

শেখ হাসিনা-জয়-পুতুলের সাজায় দুদক হতাশ

দুদকের আইনজীবী খান মো. মাইনুল হাসান লিপন সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করেছিলাম। তা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

৩ ঘণ্টা আগে

নির্বাচনে ৩ ভাগে মোতায়েন হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

ইসি সচিব আখতার আহমেদ বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এটাই আমাদের চূড়ান্ত বৈঠক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিকনির্দেশনা দেবে। ইসি মনিটরিং করবে এখান থেকে।

৩ ঘণ্টা আগে

তফসিলের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে ইসি

বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র সচিব, ইসি সচিবসহ সামরিক, আধাসামরিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এই আলোচনার মূল লক্ষ্য।

৬ ঘণ্টা আগে