top ad image
top ad image
home iconarrow iconমতামত

নির্বাচন ঘিরে একদিনে ৫ পক্ষের প্রতিক্রিয়া

নির্বাচন ঘিরে একদিনে ৫ পক্ষের প্রতিক্রিয়া

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ ঘিরে একদিনে অনেকগুলো অগ্রগতি হয়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক প্রধান পাঁচটি পক্ষ তাদের পৃথক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। শীর্ষ রাজনৈতিক নেতারা যেমন নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেছেন, তেমনি সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও নির্বাচনের তারিখ নিয়ে বক্তব্য এসেছে।

বক্তব্যগুলো খুব একটা নতুন, তা বলা যাবে না। কিন্তু পাঁচ পক্ষের বক্তব্য নির্বাচনের সুতোয় গাঁথলে অনেক কিছুই ধারণা করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর বিএনপি প্রকাশ্যে অসন্তুষ্টির কথা জানিয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট ডেডলাইন তাদের দেননি। আগের মতোই ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলেছেন। বিএনপি যে এই সিদ্ধান্তে কোনোভাবেই সন্তুষ্ট নয়, সেটিও স্পষ্ট ভাষায় বলে দিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

ভিডিওতে দেখুন—

নির্বাচন নিয়ে একদিনে অনেক কিছু…

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বিএনপি আশা করেছিল প্রধান উপদেষ্টা তাদের নির্বাচনের সম্ভাব্য দিন-তারিখ জানাবেন। এই বৈঠকের মূল লক্ষ্যও ছিল তাই। এতদিন বক্তৃতা-বিবৃতি ও ঘরের আলোচনায় বিএনপি তার এই মনোভাবের কথা প্রকাশ করে আসছিল। নির্বাচনের তারিখ না পেয়ে আজ দলটির ক্ষোভ অনেকটাই প্রকাশ্য হলো। এ অবস্থায় নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি মাঠের আন্দোলনে নামলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করে বিএনপির প্রতিনিধি দল। মূলত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে।

বৈঠক শেষে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা একেবারেই সন্তুষ্ট নই। আমরা পরিষ্কার করে বলেছি, ডিসেম্বর মধ্যে নির্বাচন না হলে দেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে। সে রকম হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়বে।’

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিচার এবং সংস্কারের পক্ষে সোচ্চার জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আবার নির্বাচনের দিন-তারিখ নয়, কথা বলেছেন বিএনপির বিরুদ্ধেই। তার অভিযোগ, প্রশাসন অনেক জায়গায় বিএনপির পক্ষে কাজ করছে। তাই এ ধরনের প্রশাসনের অধীনে নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

ঢাকায় সফররত মার্কিন কূটনীতিকদের সঙ্গে বুধবার বিকেলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। একই সঙ্গে রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের জন্য যেসব পরিবর্তন দরকার, সে পরিবর্তনগুলো না হলে নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না এবং সে রকম পরিস্থিতিতে এনসিপির নির্বাচনে অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে— এমন এমন অবস্থানও পুনর্ব্যক্ত করেন নাহিদ।

নির্বাচন, সংস্কার ও বিএনপি নিয়ে এনসিপি আহ্বায়ক কড়া প্রতিক্রিয়া জানালেও এত দিন নির্বাচনের বদলে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসা জামায়াতে ইসলামীর বক্তব্যে বরং কিছুটা পরিবর্তন লক্ষ করা গেছে। দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান আগামী রমজানের আগেই নির্বাচন চেয়েছেন।

আগামী বছর ফেব্রুয়ারির চতুর্থ সপ্তাহে রমজান শুরু হবে। চাঁদ দেখার ওপর নির্ভর করে হিজরি বর্ষপঞ্জির মাসটি শুরু হতে পারে ১৮ বা ২০ ফেব্রুয়ারি। সে হিসাবে জামায়াতের আমির ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধের মধ্যেই নির্বাচনের কথা বললেন।

এতদিন বিএনপি সংস্কারের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলমান রাখার কথা বলে আসছিল। জামায়াত বলে আসছিল আগে সংস্কার ও পরে নির্বাচনের কথা। জামায়াতের বক্তব্যের সঙ্গে সরকার ও এনসিপির বক্তব্যেরও মিল ছিল অনেকটাই।

তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের অবস্থান ও বক্তব্য বুধবার ছিল অনেকটাই কাছাকাছি। জামায়াত আমির বলেন, আগামী বছরের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করলে বর্ষা, ঝড়ঝাপটা, বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসবে। তখন নির্বাচন না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সে কারণেই জামায়াত আগামী রোজার আগে নির্বাচন চাইছে বলে জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, লন্ডনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানের সাক্ষাতের খবরও বুধবারই গণমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হয়েছে। বিএনপি বা জামায়াতের পক্ষ থেকে এ সাক্ষাৎ নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেওয়া হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো বলছে, খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের লন্ডনের বাসায় তাদের মধ্যে এ সাক্ষাৎ হয়।

পত্রিকার খবর বলছে, ১৩ এপ্রিল দুই দলের শার্ষ নেতাদের বৈঠকে সাম্প্রতিক বিরোধ ও দূরত্ব নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দুই শীর্ষ নেতার বৈঠকে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে জামায়াতের নতুন অবস্থানের পেছনে ওই সাক্ষাতের ভূমিকা রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে।

কেবল রাজনৈতিক দল নয়, বুধবার নির্বাচন নিয়ে বক্তব্য এসেছে সরকারের তরফ থেকেও। প্রধান উপদেষ্টা ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যেকার সাক্ষাতের পর আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল ব্রিফিংয়ে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যে যাই বলুক জুনের পরে নির্বাচন যাবে না।

বিএনপির সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে কিছু বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে বলেও জানান আইন উপদেষ্টা। বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন মানে ইচ্ছা করে দেরি করে মে বা জুন মাসে নির্বাচন করা হবে, এমনটি নয়। ডিসেম্বর থেকে জুন মানে হচ্ছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। ডিসেম্বরে সম্ভব হলে ডিসেম্বরে, জানুয়ারিতে সম্ভব হলে জানুয়ারিতেই নির্বাচন হবে বলে বিএনপিকে বৈঠকে বোঝানো হয়েছে।

এদিকে আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্য ধরে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ তথ্য জানান নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার।

তিনি বলেন, প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো গুছিয়ে জুন-জুলাইয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রকাশ করা হবে। আর আগামী অক্টোবরের আগে রাজনৈতিক দলসহ অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করবে ইসি। দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় আগস্ট-সেপ্টেম্বর বা সম্ভব হলে তার আগেই করা হবে বলেও জানান তিনি।

সুনির্দিষ্টভাবে দিন-তারিখ না এলেও নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে বুধবার। বিএনপির ডিসেম্বর, জামায়াতের ফেব্রুয়ারি আর সরকারের ডিসেম্বর থেকে জুন— ভোটের দিনক্ষণ এখন এই সময়গুলোর মধ্যেই আবর্তিত হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন জুলাইয়ে রোডম্যাপ ঘোষণা করলে তখন এই সময়সীমা স্পষ্ট হয়ে উঠবে।

সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছে। ইসিও বলে আসছে, সরকারঘোষিত এই সময়সীমা অনুযায়ী ‘আর্লিয়েস্ট টাইম’ বা ডিসেম্বরকে ধরে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু সরকারের এই বক্তব্যে মাঠের প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ অনেকেই আস্থা রাখতে পারছে না।

এরই মধ্যে একটি মহল অনলাইন-অফলাইনে ‘ড. ইউনূস পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকবেন’ বার্তা নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে নির্বাচন ঘিরে চারদিকে ষড়যন্ত্র, অবিশ্বাস ও গুজবের ডালপালা দেখছেন বিশ্লেষকরা, যাকে তারা ঐকমত্য, জাতীয় নির্বাচন ও গণতন্ত্রের পথে বাধা হিসেবেই মনে করছেন।

r1 ad
r1 ad
top ad image