স্যামসান অপশন: ইসরায়েলের ভয়ংকর গোপন নীতি

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
আপডেট : ১৫ জুন ২০২৫, ২৩: ৪৩
স্যামসন অপশন নামে এক গোপন নীতিতে চলে ইসরায়েল। প্রতীকী ছবি

ইসরায়েল ছোট একটি দেশ। কিন্তু চারপাশে অনেক শত্রু। আরব দেশগুলো বহুবার ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করেছে। এসব যুদ্ধ আর শত্রুতার ভয়ে ইসরায়েল তৈরি করেছে এক ভয়ঙ্কর পরিকল্পনা। এর নাম স্যামসান অপশন।

এই ‘স্যামসান’ নামটা এসেছে বাইবেল থেকে। স্যামসান ছিল এক শক্তিশালী মানুষ। শত্রুরা তাকে বন্দি করে ফেলে। পরে সে নিজের মৃত্যু মেনে নিয়ে শত্রুদের এক ভবন ধ্বংস করে দেয়। ইসরায়েলের এই পরমাণু নীতিও অনেকটা সেইরকম। যদি কখনো ইসরায়েল ধ্বংসের মুখে পড়ে, তাহলে তারা শত্রুদেরও ধ্বংস করে দেবে। এটাই হলো স্যামসান অপশন।

ইসরায়েল কখনো প্রকাশ্যে বলে না যে তাদের পরমাণু অস্ত্র আছে। আবার একেবারে অস্বীকারও করে না। এই ধোঁয়াশাই তাদের কৌশল। এতে শত্রুরা ভয় পায়। কারণ তারা জানে না, ইসরায়েল সত্যি পরমাণু অস্ত্র চালাবে কি না। এই ভয়ই তাদের জন্য ঢাল।

যুক্তরাষ্ট্রের গবেষক অ্যাভনার কোহেন এ বিষয়ে অনেক বই লিখেছেন। তার মতে, ইসরায়েল এই নীতির কথা গোপন রাখে। কিন্তু যারা বোঝে, তারা জানে—ইসরায়েলের হাতে পরমাণু শক্তি আছে।

অ্যাভনার কোহেন বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসের ভেতরে আছে অনেক ভয়। স্বাধীনতার যুদ্ধ, ছয় দিনের যুদ্ধ, আরব দেশগুলোর আক্রমণ— সব মিলিয়ে তারা সবসময় আতঙ্কে থাকে। তাই তারা মনে করে, শত্রুদের ভয় দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে।

এই স্যামসান অপশন নিয়ে সবচেয়ে আলোচিত বই লিখেছেন মার্কিন সাংবাদিক সেমোর হার্শ। তার বইয়ের নাম ‘দ্য স্যামসান অপশন’। এই বইয়ে তিনি লিখেছেন, ইসরায়েল অনেক আগেই দক্ষিণে ডিমোনা নামে এক জায়গায় গোপনে পরমাণু গবেষণাগার তৈরি করে। সেখানে তারা অস্ত্র তৈরি করে। যুক্তরাষ্ট্র এই বিষয় জানত, কিন্তু কিছু বলেনি।

এই অপশন আসলে এক ধরনের শেষ মুহূর্তের অস্ত্র। যখন আর কিছু করার থাকবে না, তখন তারা এটা চালাবে। কেউ কেউ বলেন, এই অপশন শুধু রাষ্ট্র ধ্বংসের আগেই নয়, বড় আঘাত এলেও চালানো হতে পারে।

হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক গ্রাহাম এলিসন বলেন, এই অপশন এক ধরনের প্রতিশোধের বার্তা। এতে শত্রুরা ভয় পায়। কিন্তু যদি কোনো ভুল হয়, তবে ফল হবে ভয়াবহ।

ইসরায়েল কখনো পরমাণু অস্ত্র আছে বলে না। আবার আন্তর্জাতিক চুক্তিতেও তারা সই করেনি। এই চুক্তির নাম ‘এনপিটি’। ফলে অন্য দেশগুলোর মতো তাদের ওপর নজরদারি চলে না। ইসরায়েল এটা ইচ্ছা করেই করে। তারা চায় সবাই ধাঁধায় থাকুক।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ইসরায়েলের হাতে ৮০ থেকে ২০০টি পরমাণু অস্ত্র আছে। এই অস্ত্রগুলো ভূমি থেকে, আকাশ থেকে ও সাবমেরিন থেকেও নিক্ষেপ করা যায়। মানে তিন দিক থেকেই ইসরায়েল হামলা চালাতে পারে।

২০০৬ সালে ইসরায়েলের এক প্রধানমন্ত্রী এহুদ ওলমার্ট একবার বলেছিলেন, ইসরায়েলও পরমাণু শক্তিধর দেশ। পরে সরকার বলেন, ওটা ছিল ব্যক্তিগত অভিমত। কিন্তু ততক্ষণে বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় আগুন লেগে যায়।

বিশ্বের অন্য পরমাণু শক্তিধর দেশ, যেমন— আমেরিকা, রাশিয়া, চীন সবাই জানায়, কখন তারা এই অস্ত্র ব্যবহার করবে বা করবে না। কিন্তু ইসরায়েল কিছুই বলে না। তারা চুপ থাকে। এই চুপ থাকাও এক ধরনের হুমকি।

কেউ কেউ বলেন, এই গোপন নীতি ভালো। এতে শত্রুরা আক্রমণ করতে ভয় পায়। আবার কেউ বলেন, এতে বিপদ আরও বাড়ে। কারণ যদি কোনো ভুল বোঝাবুঝি হয়, বা ভুল বার্তা যায়, তাহলে যুদ্ধ শুরু হতে পারে।

ইসরায়েলের এই স্যামসান অপশন আসলে এক ‘ভয়ের খেলা’। তারা নিজের অস্ত্র দেখায় না, কিন্তু জানিয়ে দেয়— আমার হাতে অস্ত্র আছে। যদি আমায় শেষ করতে চাও, আমিও তোমায় শেষ করে দেবো।

এই নীতি হয়তো তাদের নিরাপদ রাখে। কিন্তু এতে সবারই ভয় বাড়ে। কারণ পরমাণু যুদ্ধ মানেই ধ্বংস। শুধু ইসরায়েল বা তার শত্রু নয়, পুরো অঞ্চলের মানুষ ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে।

তাই প্রশ্ন হলো— এই গোপন অপশন কি আসলেই শান্তি আনবে? নাকি এই ভয় থেকেই একদিন বড় যুদ্ধের সূচনা হবে?

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

উত্তরে কাদেরিয়া ঝড়, দক্ষিণে সপ্তম নৌ বহর: নিয়াজির চোখে সর্ষে ফুল!

কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা প্যারাট্রুপারদের পথ দেখিয়ে পুংলি ব্রিজের দিকে নিয়ে যায় এবং ব্রিজটি দখল করে নেয়। এর ফলে ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে পিছু হটা পাকিস্তানি ৯৩ ব্রিগেডের সৈন্যরা ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে আটকা পড়ে।

৩ দিন আগে

উত্তরে চীন, দক্ষিণে আমেরিকা— ইয়াহিয়ার ‘গালগপ্পো’ আর রূপসায় স্বজনের গোলা!

ঢাকার চারপাশের বৃত্ত বা ‘লুপ’ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যায়। উত্তরে ময়মনসিংহ মুক্ত হওয়ার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে ছুটছে, পূর্বে মেঘনা পাড় হয়ে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিশাল বহর, আর পশ্চিমে পদ্মার পাড়ে চলছে তুমুল প্রস্তুতি।

৪ দিন আগে

আকাশ থেকে নামল ‘উড়ন্ত যম’— পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না পাকিস্তানি বাহিনীর

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের তথাকথিত ‘ফোর্ট্রেস ডিফেন্স’ বা দুর্গ রক্ষা কৌশলের ওপর যে অন্ধ বিশ্বাস রেখেছিল, তা তখন অন্ধের মতোই তাদের হোঁচট খাওয়াচ্ছিল। একদিকে বিশ্বরাজনীতির দাবার বোর্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌ বহর পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল, অন্যদিকে বাংলার

৫ দিন আগে

বিনয়-বাদল-দীনেশ— অগ্নিযুগের ৩ বিপ্লবী

তিন যুবকের হাতে মোটেও সময় নেই। বেচারা সিম্পসন! আজীবন নিরীহ-নিরপরাধ ভারতীয়দের ওপর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে এসেছেন। এ জন্য কতকিছু চিন্তা করে নির্যাতনের উপায় বের করতে হয়েছে। সেই মানুষটি নিজের শেষ সময়ে বিন্দুমাত্র ভাবনার সময়ও পেলেন না। তার দিকে তাক করা তিনটি রিভলবার থেকে ছয়টি বুলেট সিম্পসনের শরীর ভেদ করে

৬ দিন আগে