ভারতের হামলায় পাকিস্তানে নিহত ৭০, এনডিটিভির প্রতিবেদন\n
দুই দেশের মধ্যে কীভাবে যুদ্ধ শুরু হবে, তা নিয়েও কিছু পূর্বানুমান উঠে এসেছিল গবেষণায়। বলা হয়েছিল, ভারতীয় সংসদে এক সন্ত্রাসীর বোমা হামলায় সংসদ সদস্যরা নিহত হলে ভারতীয় সেনাবাহিনী পাকিস্তানে প্রবেশ করে আক্রমণ চালাবে। এর জের ধরে দুই দেশ তাদের কাছে থাকা সব পরমাণু অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। আরেক পূর্বানুমানে বলা হয়, ভারত কাশ্মিরে আক্রমণ করার পরই শুরু হয়ে হবে পারমাণবিক যুদ্ধ।
রাটগার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. অ্যালান রোবোক ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তিনি গবেষণায় বলেছিলেন, দুই দেশে যদি বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন নেতারা ক্ষমতায় থাকেন তাহলে হয়তো এমন কিছু হবে না। তবে পূর্বানুমানের মতো এমন আরও দৃশ্যকল্প তৈরি হতে পারে, যার জের ধরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
২০১৯ সালে ওই গবেষণার ফলাফল প্রকাশের সময় ড. অ্যালান রোবোক বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তান তাদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার বাড়িয়ে চলেছে। শুধু সংখ্যার বিচারেই নয়, এসব অস্ত্রের বিস্ফোরণের শক্তিও তারা ক্রমাগত বাড়িয়ে চলেছে। ফলে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কা অনেক বেশি।
অধ্যাপক রোবোক অবশ্য তখন বলেছিলেন, ‘এই যুদ্ধ যেকোনো সময়ে লাগতে পারে, হতে পারে আগামীকালও। ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোনো তথ্য থাকে না। কখন কী হবে সেটাও কেউ বলতে পারে না। সে কারণে আমরা কিছু দৃশ্যকল্প ব্যবহার করেছি, কী হতে পারে সেটা বোঝার জন্যে। সেই সম্ভাবনার কথা চিত্রিত করতে আমরা শুধু একটা সময়কে বেছে নিয়েছি।’
ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও ভারত-চীন কিংবা যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যেও যুদ্ধ লেগে যেতে পারে বলে জানিয়েছিলেন অ্যালান রোবোক। তবে কাশ্মিরকে ঘিরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অব্যাহতভাবে চলতে থাকা বিরোধের কারণেই এই দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের আশঙ্কাই প্রবল দেখেছিলেন অধ্যাপক রোবোক।
পাকিস্তানে কায়দে আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরমাণু বিজ্ঞানী ড. পারভেজ হুডভাই-ও ওই সময় জানিয়েছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ লাগলে তার কারণ হবে কাশ্মির। তিনি বলেছিলেন, কাশ্মীরের পরিস্থিতি যতোই শান্ত করা যাবে, পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিও ততোটা কমে আসবে। দুর্ভাগ্যজনক হলো সেরকম কিছুই হচ্ছে না।
ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল দীপঙ্কর ব্যানার্জি কাশ্মির ছাড়াও সন্ত্রাসবাদসহ কিছু ইস্যুকে যুদ্ধের কারণ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ হলে আর সেই যুদ্ধে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করা হলে অবশ্য সেই যুদ্ধের প্রভাব আর দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। বরং গোটা বিশ্বের জন্যই সেটি হুমাকর কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
জলবায়ু বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোক বলেছিলেন, পারমাণবিক বোমার ফলে আগুন লেগে যাবে, সেই আগুন থেকে যে পরিমাণ ধোঁয়া তৈরি হবে তা ছড়িয়ে পড়বে সারা পৃথিবীতে। এই ধোঁয়ার কারণে আমাদের এই গ্রহে সূর্যের আলোও ঠিকমতো এসে পৌঁছাতে পারবে না। ফলে পৃথিবী অনেক ঠাণ্ডা আর অন্ধকারময় হয়ে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, ধোঁয়া যখন পৃথিবীর আরও ওপরের আবহাওয়ামণ্ডলে চলে যাবে, তখন সেটা সূর্যের আলোতে উত্তপ্ত হয়ে আরও বেশি ছড়িয়ে পড়বে, যা সেখানে স্থায়ী হবে কয়েক বছর। বৃষ্টিপাত কমে যাবে। তেজস্ক্রিয়তার ঘটনা ঘটবে। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে খাদ্য উৎপাদনের ওপর। ফলে যুদ্ধের পরেও অনাহারে আরো বহু মানুষের মৃত্যু হবে।
বিজ্ঞানী অ্যালান রোবোকের সেই গবেষণার ছয় বছর পর সে ভারত-পাকিস্তান দাঁড়িয়ে যুদ্ধের মুখে। সত্যিই কি তবে দুই দেশ যুদ্ধে জড়াবে? পরমাণু অস্ত্রের ঝনঝনানিতে গোটা পৃথিবীই ধাবিত হবে সংকটের মুখে? যত আশঙ্কাই থাকুক, শুভবুদ্ধির কেউ নিশ্চয় চাইবে না বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে চলামান আরও কয়েকটি যুদ্ধের মধ্যে পরমাণু অস্ত্রধারী দুই দেশ সত্যি সত্যিই যুদ্ধে জড়িয়ে যাক।