গাজা ইস্যুতে মুখোমুখি যুক্তরাষ্ট্র–রাশিয়া, জাতিসংঘে পাল্টাপাল্টি প্রস্তাব

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
ছবি: সংগৃহীত

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের গাজা শান্তি পরিকল্পনাকে শক্তিশালী করতে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে (ইউএনএসসি) তাদের উত্থাপিত গাজা শাসনসংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

ওয়াশিংটন সতর্ক করে বলেছে, এই প্রস্তাবটি পাস না হলে ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘গুরুতর পরিণতি’র পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তবে রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রস্তাবের বিকল্প হিসেবে নিজস্ব একটি খসড়া উত্থাপন করেছে।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স তাদের কাছে এ-সংক্রান্ত আসা নথির ভিত্তিতে জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই আহ্বানের মধ্যে রাশিয়া নিরাপত্তা পরিষদে গাজা ইস্যুতে নিজেদের একটি ‘বিকল্প প্রস্তাব’ হাজির করেছে।

জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্র মিশনের এক মুখপাত্র গতকাল বৃহস্পতিবার বলেন, ওয়াশিংটনের প্রস্তাবকে ঘিরে ‘বিভ্রান্তি তৈরি করার যেকোনো চেষ্টা’ গাজার ফিলিস্তিনিদের জন্য ‘গুরুতর, বাস্তব ও পুরোপুরি এড়ানো অসম্ভব এমন পরিণতি’ ডেকে আনতে পারে। বিশেষ করে, এ কারণে যুদ্ধবিরতি ভেঙে যেতে পারে এবং ইসরায়েল আবারও হামলা শুরু করতে পারে।

গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে খসড়া প্রস্তাবটি পাঠায়। এর ভাষা ও বিষয়বস্তু নিয়ে এখনো আলোচনা চলছে। বার্তা সংস্থা এএফপির পাওয়া খসড়া অনুযায়ী, এই প্রস্তাবে গাজায় একটি অন্তর্বর্তীকালীন শাসনকাঠামো ‘বোর্ড অব পিস বা শান্তি পরিষদকে’ ২০২৭ সালের শেষ পর্যন্ত দুই বছরের ম্যান্ডেট দেওয়ার কথা রয়েছে। এই পরিষদের চেয়ারম্যান থাকবেন ট্রাম্প।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সদস্য রাষ্ট্রগুলো একটি ‘অস্থায়ী আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী (আইএসএফ)’ গঠন করবে। এই বাহিনী গাজার অ-রাষ্ট্রীয় সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর হাতে থাকা অস্ত্র স্থায়ীভাবে নিষ্ক্রিয় করতে কাজ করবে, বেসামরিক মানুষকে রক্ষা করবে এবং মানবিক করিডরগুলোকে নিরাপদ রাখবে।

আইএসএফ ইসরায়েল, মিসর ও নবগঠিত ফিলিস্তিনি পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে সীমান্ত এলাকা সুরক্ষায় কাজ করবে এবং গাজাকে সামরিকীকরণমুক্ত করতে ভূমিকা রাখবে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত ২০ হাজার সদস্যের এই বাহিনীতে যুক্তরাষ্ট্র কোনো সেনা পাঠাবে না।

ওয়াশিংটন বলছে, ইন্দোনেশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, কাতার, তুরস্ক ও আজারবাইজানের সঙ্গে বাহিনীতে যোগদানের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে হামাসের সঙ্গে সরাসরি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় এসব দেশ এখনো সেনা পাঠানো নিয়ে দ্বিধায় রয়েছে।

আগের খসড়াগুলোর তুলনায় সর্বশেষ প্রস্তাবে ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রসঙ্গ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (পিএ) প্রয়োজনীয় সংস্কার সম্পন্ন করলে ‘ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবসম্মত পথ খুলে যেতে পারে’। প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনিদের মধ্যে রাজনৈতিক সম্ভাবনার একটি দিগন্ত নির্ধারণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সংলাপ শুরু করবে, যাতে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ সহাবস্থান নিশ্চিত হয়।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত বুধবার বলেছেন, প্রস্তাবটি পাস হবে বলে তিনি আশাবাদী। ভাষা নিয়ে আলোচনায় ‘ভালো অগ্রগতি’ হয়েছে। তবে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে ‘বোর্ড অব পিস’ ধারণাটি সমর্থন পেলেও খসড়ায় বেশ কিছু গুরুতর প্রশ্নের উত্তর নেই বলে জানিয়েছে এএফপি। যেমন, পরিষদের কোনো তদারকি কাঠামোর উল্লেখ নেই, পিএর ভবিষ্যৎ ভূমিকা অস্পষ্ট এবং আইএসএফের ম্যান্ডেট সম্পর্কেও বিস্তারিত তথ্য নেই।

এই প্রশ্নগুলো অমীমাংসিত থাকতেই রাশিয়া গতকাল বৃহস্পতিবার তাদের নিজস্ব পাল্টা প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদের সামনে তোলে। রাশিয়ার নোটে বলা হয়েছে, ‘আমাদের খসড়ার উদ্দেশ্য হলো নিরাপত্তা পরিষদকে এমন একটি ভারসাম্যপূর্ণ, গ্রহণযোগ্য ও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্ধারণে সক্ষম করা, যা স্থায়ীভাবে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে পারে।’

৮ অক্টোবর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, ইসরায়েল ও হামাস তাঁর প্রচারিত ২০ দফার গাজা শান্তি পরিকল্পনার প্রথম পর্যায়ে সম্মত হয়েছে। এতে দুই বছরের সংঘাত থেমে গেছে, যে সংঘাতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ৬৯ হাজার ১৭৯ জনকে হত্যা করেছে। এই চুক্তির মাধ্যমে গাজায় আটক থাকা ইসরায়েলি বন্দীদের, জীবিত ও মৃত, ফিলিস্তিনি বন্দীদের সঙ্গে বিনিময় করা হচ্ছে। ইসরায়েলি সেনাদের আংশিক প্রত্যাহার করা হয়েছে এবং কিছু মানবিক সহায়তা প্রবেশও সম্ভব হয়েছে।

যুদ্ধবিরতি এখনো কার্যকর থাকলেও ইসরায়েল চুক্তি লঙ্ঘন করে প্রায় প্রতিদিন হামলা চালাচ্ছে, এতে শত শত ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। এই ‘অতিমাত্রায় নাজুক’ যুদ্ধবিরতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র গতকাল নিরাপত্তা পরিষদকে আহ্বান জানায়, ওয়াশিংটনের প্রস্তাব সমর্থন করে ‘মধ্যপ্রাচ্যে বহুল প্রতীক্ষিত শান্তির পথে এগোতে’ হবে। তাদের ভাষায়, এটি ‘মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তির পথে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত’।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

যুদ্ধবিরতির এক মাস: দিনে গড়ে ৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা

অধিকৃত পশ্চিম তীরেও অব্যাহত আছে নেতানিয়াহু বাহিনীর হামলা ও অভিযান। হেবরনের উত্তরাঞ্চলে বেইত উমর শহরে দখলদারদের গুলিতে কয়েকজন শিশু নিহত হয়েছে। আনতাবা শহরে ইসরাইলি বাহিনীর সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের লড়াই ও কয়েকজনকে আটকের খবর পাওয়া গেছে। জেরুজালেমে দখলদারদের অভিযানের সময় গুলিতে আহত হন অনেকে।

১২ ঘণ্টা আগে

সেনাপ্রধানের ক্ষমতা বাড়িয়ে পাকিস্তানের সংবিধান সংশোধন, বিরোধীদের ওয়াকআউট

সংশোধনী অনুযায়ী, পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পাশাপাশি নৌ বাহিনী ও বিমান বাহিনীও এখন থেকে সেনাপ্রধানের অধীনে থাকবে। তার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও পদমর্যাদা বজায় থাকবে। সমালোচকরা বলছেন, এ পরিবর্তনের ফলে সামরিক বাহিনী ও ক্ষমতাসীন জোটের হাতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে।

১ দিন আগে

যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ১৫শ ভবন ধ্বংস করেছে ইসরায়েল

স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, গত ১০ অক্টোবর হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার যেসব এলাকায় ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণ ছিল সেখানে দেড় হাজারের বেশি ভবন ধ্বংস করেছে দখলদার বাহিনী। খবর বিবিসির।

২ দিন আগে

পুলিশ-মাওবাদীদের সংঘর্ষে নিহত ৬

মঙ্গলবার ছত্তিশগড় রাজ্যের বিজাপুর জেলায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সঙ্গে মাও বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ছত্তিশগড়ের জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পাট্টিলিনগম টেলিফোনে এএফপিকে বলেছেন, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের পর আমরা এখন পর্যন্ত জঙ্গল থেকে ছয় মাওবাদীর লাশ উদ্ধার করেছি।

২ দিন আগে