মেরে লাশ গুম করে ফেলো— নির্দেশ দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা\n
ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। আন্দোলন চলাকালে গণহত্যা, মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী নানা অপরাধের অভিযোগ ওঠে। অন্তর্বর্তী সরকারের আহ্বানে জাতিসংঘের একটি তদন্ত দল এসব অপরাধের অনুসন্ধান করেছে।
বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেনেভা থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য-অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
জাতিসংঘের তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ওই সময়কার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সরকারি বিভিন্ন বাহিনী একযোগে আন্দোলন দমন করতে সহিংসতা ঘটিয়েছে। ওই সময়কার সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা নিজেই এই নৃশংসতার সমন্বয় করেছেন। নিজেই বিভিন্ন সময় আন্দোলন দমন করতে হত্যাসহ বলপ্রয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন।
জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানের সময় ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন করলেও তাদের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা ওএইচসিএইচআর বলেছে, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া বিচারিক প্রক্রিয়ায় তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে চায়।
রোরি মুনগোভেন বলেন, প্রতিবেদনে অপরাধীদের চিহ্নিত করা হয়নি। কিন্তু আমরা প্রচুর তথ্য সংরক্ষণ করেছি। সর্বোচ্চ মান অনুযায়ী এসব সংরক্ষণ করা হচ্ছে যেন পরে ব্যবহার করা যায়।
বিচার প্রক্রিয়া বিশ্বাসযোগ্য, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানদণ্ড মেনে চলার বিষয়ে জোর দেন মুনগোভেন বলেন, আমরা আশা করি বাংলাদেশ মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করবে। কারণ এটি একটি প্রতিশোধের স্থায়ী চক্র তৈরি করে।
মৃত্যুদণ্ড বিভিন্ন দেশে লুকিয়ে থাকা অপরাধীদের প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে বাধা তৈরি করবে বলেও উল্লেখ করেন মুনগোভেন। তিনি বলেন, অনেক সদস্যরাষ্ট্রের জন্য প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড একটি বাধা।
বিচার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট চ্যালেঞ্জ থাকার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশের সময় ওএইচসিএইচআর হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে সরকারকে পরামর্শ ও সহায়তা করার জন্য জাতিসংঘ বদ্ধপরিকর।
বাংলাদেশের বিদ্যমান ব্যবস্থায় ফাঁকফোকর থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মান ও ন্যায্য বিচারের জন্য যথাযথ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
ভলকার তুর্ক আরও বলেন, আমরা যে সাক্ষ্য এবং প্রমাণ সংগ্রহ করেছি, তা রাষ্ট্রীয় সহিংসতা এবং উদ্দেশ্যমূলক হত্যাকাণ্ডের একটি উদ্বেগজনক চিত্র তুলে ধরেছে। এসব চিত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের অন্যতম গুরুতর উদাহরণ এবং যা আন্তর্জাতিক অপরাধের মধ্যে পড়ে থাকতে পারে। জাতীয় মীমাংসা ও ভবিষ্যতের জন্য বাংলাদেশে ন্যায্যতা ও দায়বদ্ধতা অপরিহার্য।