বিজ্ঞান

স্টেথোস্কোপ : যেভাবে এলো চিকিৎসাশাস্ত্রের এই গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্র

অরুণ কুমার
বিস্ময়করভাবে আবিষ্কার হয়েছিল স্টেথোস্কোপ

খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে, গ্রিক যুগে চিকিৎসকেরা রোগীর বুকে কান লাগিয়ে শ্বাস-প্রশ্বাসের অবস্থা ও হৃৎকম্পন বোঝার চেষ্টা করতেন।

অষ্টাদশ শতাব্দীতে এসে এ ব্যবস্থাটাকে আরেকটু এগিয়ে নেন অস্ট্রিয়ান চিকিৎসক লিওপোল্ড ওয়েনব্রুগার। তিনি রোগীর শরীরের বিভিন্ন স্থানে টোকা মেরে, সেখানে কান লাগিয়ে হৃৎপিণ্ডের অবস্থা বোঝার চেষ্ট করতেন। লিওপোল্ডের একটা থিওরি ছিল।

খালি পাত্রে টোকা দিলে একরকম শব্দ হয়। সেই পাত্রের অর্ধেকটা পানি ভর্তি করলে শব্দের ধরন বদলে যায়। সম্পূর্ণ ভর্তি করলে শব্দ একদম আলাদা রকমের হয়। এই ব্যাপারটাই তিনি কাজে লাগিয়েছিলেন চিকিৎসাক্ষেত্রে।

খালি পেটে থাকা কোনো রোগি আর ভরা পেটে থাকা রোগীর শরীরে টোকা দিলে আলাদা রকম শব্দ হবে।

তেমনি পেটে গ্যাস হলে, কিংবা তরলে ভর্তি থাকলে শব্দের মাত্রা যাবে বদলে। তখন ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের শব্দ কিছুটা বদলে যাবে। এই ব্যাপারগুলো খুব ভালোভাবে আয়ত্ত করেছিলেন লিওপোল্ড। কিন্তু এরজন্য যে কোনো যন্ত্র তৈরি করতে হবে, তেমন ভাবনা আসেনি তাঁর মাথায়।

১৮১৬ সাল। ফরাসী চিকিৎসক রেনে লেইনেক ব্যস্ত প্যারিসের নেকার হাসপাতালে। রেনে যক্ষার চিকিৎসার জন্য বিখ্যাত ছিলেন। যক্ষা তখন মারণব্যাধি। তাই এই রোগের চিকিৎসা বেশিরভাগ চিকিৎসক করতে চাইতেন না। রেনে এ ব্যাপারে খুব উদার ছিলেন।

একদিন বিশাল শরীরের এক রোগি এলো তার কাছে। যক্ষায় আক্রান্ত। রোগী যেমন যেমন মোটাসোটা, গায়ে তেমনি দুর্গন্ধ। ফরসীরা আসলে গোসলের ব্যাপারে আলসে। কয়েক সপ্তাহ পর পর তারা গোসল করে। তাই গায়ে বদগন্ধ তৈরি হয়। আর সেই গন্ধ ঢাকার জন্য তাঁরা নানা রকম সুগন্ধি ব্যবহার করে। এ কারণেই কিন্তু পারফিউম বা সুগন্ধি উৎপাদনে ফরসীরা বিখ্যাত।

যাইহোক, একে দুর্গন্ধ, তার ওপর বিশাল শরীর। বুকে কান লাগিয়ে ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডের গতিপ্রকৃতি বোঝা কঠিন হলো। তাছাড়া যক্ষা রোগীর মুখের খুব কাছে গিয়ে কান পাতাও ঝুঁকির। চিকিৎসক নিজেও আক্রান্ত হতে পারেন। তখনই আসলে রেনে একটা যন্ত্রের অভাব বোধ করলেন। যন্ত্র তো পরের কথা, এখন এই রোগী শামলাবেন কী করবেন! দুশ্চিন্তায় পায়চারী শুরু করলেন রেনে। আনমনে গিয়ে বসলেন হাসাপাতালের বাগানের বেঞ্চে।

তখনই একটা ব্যাপার চোখ খুলে দিল রেনের। দুজন বালক খেলছে বাগানে। ওদের হাতে একটা একটা লম্বা কাঠ আর পিন। একজন কাঠের এক মাথায় পিন দিয়ে আঁচড় কাটছে। অন্য জন কাঠের অন্যপ্রান্তে কান লাগিয়ে শুনছে।

এ ধরনের খেলা ছেলেমেয়েদের সচারাচর খেলতে দেখা যায়। কিন্তু সেদিনে এই খেলাটাই রেনে মাথায় একটা আইডিয়া জন্ম দিয়েছিল। ওই ছেলেদুটোর খেলা দেখে রেনের মনে পড়ে যায় শব্দবিজ্ঞানের কথা। তিনি জানতেন, বাতাসের তুলনায় পানিতে শব্দের বেগ প্রায় সাড়ে চার গুণ। অন্যদিকে পানির তুলনায় কাঠের ভেতরে শব্দের বেগ আরও বেশি, প্রায় ১২ গুণ।

সেটা ছিল রেনের জন্য ইউরেকা মোমেন্ট। তিনি দ্রুত রোগির কাছে ফিরে এলেন। তাঁর টেবিলে ছিল একটা মেডিকেল জার্নাল। সেটা রোল করে কানে লাগালেন একটা মাথা আরেক মাথা রাখলেন রোগির বুকে। এখন দিব্যি রোগির হৃৎকম্পন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি শোনা যাচ্ছে।

তারপর রেনে সত্যিকারের একটি স্টেথোস্কোপ বানালেন। সেটা কাঠ দিয়েই। গোলাকার লম্বা একটা কাঠের ভেতর ছিদ্র করে নলের মতো বানালেন। সেটাই ছিল ইতিহাসের প্রথম স্টেথোস্কোপ। এরপর আরও তিন বছর খেটেখুটে তিনি স্টোথোস্কোপের উন্নতি ঘটান।

ad
ad

সাত-পাঁচ থেকে আরও পড়ুন

পাকিস্তানিদের শেষ ভরসা সপ্তম নৌ বহরও পরিণত মরীচিকায়

পরাশক্তিদের দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ ও প্রবাসী সরকার ছিল অটল। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১২ ডিসেম্বর এক বেতার ভাষণে বলেন, ‘সপ্তম নৌ বহর আমাদের স্বাধীনতা আটকাতে পারবে না। প্রয়োজনে আমরা ১০০ বছর যুদ্ধ করব, তবু বিদেশিদের কাছে মাথা নত করব না।’

৩ দিন আগে

উত্তরে কাদেরিয়া ঝড়, দক্ষিণে সপ্তম নৌ বহর: নিয়াজির চোখে সর্ষে ফুল!

কাদেরিয়া বাহিনীর সদস্যরা প্যারাট্রুপারদের পথ দেখিয়ে পুংলি ব্রিজের দিকে নিয়ে যায় এবং ব্রিজটি দখল করে নেয়। এর ফলে ময়মনসিংহ ও জামালপুর থেকে পিছু হটা পাকিস্তানি ৯৩ ব্রিগেডের সৈন্যরা ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে আটকা পড়ে।

৫ দিন আগে

উত্তরে চীন, দক্ষিণে আমেরিকা— ইয়াহিয়ার ‘গালগপ্পো’ আর রূপসায় স্বজনের গোলা!

ঢাকার চারপাশের বৃত্ত বা ‘লুপ’ ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে পুরোপুরি সম্পন্ন হয়ে যায়। উত্তরে ময়মনসিংহ মুক্ত হওয়ার পর মিত্রবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা ঢাকার দিকে ছুটছে, পূর্বে মেঘনা পাড় হয়ে নরসিংদীর দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিশাল বহর, আর পশ্চিমে পদ্মার পাড়ে চলছে তুমুল প্রস্তুতি।

৫ দিন আগে

আকাশ থেকে নামল ‘উড়ন্ত যম’— পালিয়েও শেষ রক্ষা হলো না পাকিস্তানি বাহিনীর

পাকিস্তানি জেনারেলরা তাদের তথাকথিত ‘ফোর্ট্রেস ডিফেন্স’ বা দুর্গ রক্ষা কৌশলের ওপর যে অন্ধ বিশ্বাস রেখেছিল, তা তখন অন্ধের মতোই তাদের হোঁচট খাওয়াচ্ছিল। একদিকে বিশ্বরাজনীতির দাবার বোর্ডে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সপ্তম নৌ বহর পাঠানোর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের উত্তাপ ছড়াচ্ছিল, অন্যদিকে বাংলার

৬ দিন আগে