top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

দুর্ভাগা বিজ্ঞানী সেসিলিয়া পেইন

দুর্ভাগা বিজ্ঞানী সেসিলিয়া পেইন

দুর্ভাগা বিজ্ঞানী সেসিলিয়া পেইন
সেসিলিয়া পেইন

১৯২৩ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সেসিলিয়া পেইন বললেন নতুন কথা। তিনি বললেন, গোটা সূর্যই মূলত হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম দিয়ে পরিপূর্ণ। আরো কিছু মৌল আছে, কিন্তু সেসবের পরিমাণ অতি নগণ্য।১৯২৩ সালে জার্মান জ্যোতির্বিজ্ঞানী সেসিলিয়া পেইন বললেন নতুন কথা। তিনি বললেন, গোটা সূর্যই মূলত হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম দিয়ে পরিপূর্ণ। আরো কিছু মৌল আছে, কিন্তু সেসবের পরিমাণ অতি নগণ্য।

এজন্য তিনি নীল বোরের পরমাণু মডেলের উদারণ টানেন। বোর বলছিলেন, ইলেকট্রন এক শক্তিস্তর থেকে লাফ দিয়ে যখন আরেকটি শক্তিস্তরে যায় তখন যে শক্তি শোষণ অথবা নিঃসরণ করে তার মান প্ল্যাঙ্ক-আইনস্টাইনের কোয়ান্টাম তত্ত্ব থেকে বের করা যায়। তিনি বলেছিলেন শক্তিস্তরগুলি শক্তি নির্দিষ্ট ও বিচ্ছিন্নমানের। আবার পরমাণুর থেকে নিঃসৃত বর্ণালীও বিচ্ছিন্ন। সৌর বর্ণালীর বামার লাইনে সেই বিচ্ছন্ন রেখাগুলি পাওয়া গিয়েছিল।

বোর ভাবলেন, নিশ্চয়ই বামার লাইনের বর্ণালীর সাথে তাঁর পরমাণুর মডেলের শক্তিস্তরের শক্তির একটা যোগসূত্র আছে। বোর সেটাই খুঁজে বের করার চেষ্টা করলেন। এবং পেয়েও গেলেন। ইলেকট্রন যখন উচ্চশক্তিস্তর থেকে নিম্ন শক্তিস্তরে যায় তখন শক্তি হিসেবে একটা নির্দিষ্ট শক্তির ফোটন নিঃসরণ করে। আবার যখন নিম্ন শক্তিস্তর থেকে উচ্চশক্তিস্তরে যায় তখন ইলেকট্রন একটা নির্দিষ্ট শক্তির ফোটন নিঃসরণ করে। সেই ফোটনের শক্তি কতটুকু হবে সেটা নির্ভর করবে ফোটন কোন কক্ষপথ থেকে কোন কক্ষপথে লাফ দিচ্ছে তার ওপর। কিন্তু কোনো একটা নির্দিষ্ট কক্ষপথে ফোটন যখন অবস্থান করে তখন কোনো ফোটন শোষণ বা বিকিরণ করে না। আর সেই বিকিরণই মূলত বর্ণালী তৈরি করে।

পেইনের কথাতেও ছিল বোর মডেলের সুর। তিনি বললেন, নক্ষত্রের আসলে বিরাট তাপশক্তির আধার। উচ্চ তাপমাত্রার কারণে নক্ষত্রের হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম পরমাণুগুলো আয়োনিত হচ্ছে। আয়োনিত হওয়া মানে পরমাণুগুলোর হয় ধণাত্মক অথবা ঋণাত্মক চার্জে চার্জিত হওয়া। এর ফলে পরমাণুর ভেতের ইলেকট্রনগুলোর ভেতর কক্ষপথ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটছে। আর তার ফলেই বিকিরত হচ্ছে উজ্জ্বল আলো। আর সেই আলোই তৈরি করছে নাক্ষত্রিক বর্ণালী। প্যাইন নাক্ষত্রিক বর্ণালির বহু ডাটা নিয়ে পরীক্ষা করে এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন। ১৯২৫ সালে তিনি তথ্যগুলো সমন্বয় করে লিখলেন তাঁর থিসিস পেপার। তাঁর পরামর্শক হার্লো শ্যাপলে।

পেইনের পেপারটি তিনি পাঠালেন প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত জ্যোতির্বিদ নরিশ রাসেলের কাছে। রাসেল সেটা পড়ে জানিয়ে দিলেন, সূর্য বা নক্ষত্রের উপদান সম্পর্কে পেইনের ধারণা ভুল। তবে ডক্টরেট ডিগ্রি থেকে বঞ্চিত হলেন না পেইন।

এরপর সেসিলিয়া পেইন একটা বই লিখেলন। নাম স্টেলার অ্যাটমোস্ফিয়ার। বইটি অনুপ্রাণিত করল জার্মান জ্যোতির্বিদ আলবার্ট আনসৌল্ডকে। তিনি বইয়ের সূত্র ধরে সূর্যরশ্মির বণার্লীবিক্ষণ করলেন। নিশ্চিত হলেন, সৌরবর্ণালীর হাইড্রোজেন রেখা যে শক্তির ইঙ্গিত করে, তাতে প্রতিটা বর্ণালির জন্য প্রায় এক মিলিয়ন হাইড্রোজেন পরমাণু থাকার কথা সূর্যের ভেতরে। আমরা তো সূর্যালোকের খুব সামান্য অংশ পরীক্ষা করে হাইড্রোজেনের রেখা পাই। তাতেই যদি এই পরিমাণ হাইড্রোজেনের কথা বলে, তাহলে গোটা সূর্যের হিসেবে সেটার পরিমাণ কত হবে ভাবা যায়! শিগগির আইরিশ জ্যোর্তিবিদ ম্যাক ক্রেয়া আরেকটি পরক্ষার মাধ্যমে প্রমাণ করলেন পেইন আর আনসৌল্ডের ফলাফল অভ্রান্ত। বিজ্ঞানীরা মানতে বাধ্য হলেন, সর্যসহ সব নক্ষত্রের মূল উপাদান হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম।


এধরনের কাজের স্বীকৃতি কেবল নোবেলের মাধ্যমেই দেওয়া সম্ভব। কিন্তু পেইন কেন নোবেল দেওয়া হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি আজও। সেটা নারী বলেই কিনা?

r1 ad
r1 ad