top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

ভয়ংকর সুন্দর ব্ল্যাকহোল

ভয়ংকর সুন্দর ব্ল্যাকহোল
শিল্পীর কল্পনায় ব্ল্যাকহোল

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর, যেমন ভয়ংকর তেমনি সুন্দর। কিন্তু ব্ল্যাকহোলন ঠিক কতটা ভয়ংকর। এ বিষয়ে বিখ্যাত তাত্ত্বিক পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার বিখ্যাত বই ‘আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ বইয়ে বলেছিলেন, একজন মানুষ যদি ব্ল্যাকহোলের ভেতর পড়ে যায়, তাহলে তিনি প্রথমে তিনি সেমাইয়ের মতো লম্বা আর কাগজের মতো পাতালা ও চ্যাপ্টা হয়ে যাবেন। তারপর তার শরীর ছিড়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ হবে।

এমন ভয়ংকর যে বস্তু, তাকে নিয়ে বিজ্ঞানপ্রেমীদের আগ্রহের শেষ নেই। ব্ল্যাকহোল বিখ্যাত তার সর্বগ্রাসী চরিত্রের কারণে। এটা এমন একটা বস্তু, এর আশাপশে যা-ই আসুক সেটাকে গিলে ফেলে। সাম্প্রতিক বলছে বিজ্ঞানীদের ধারনের চেয়ে বেশি দ্রুত গলধকরণ করে ব্ল্যাকহোল।

শুধু আশপাশের বস্তু নয়, কাছাকাছি কোনো নক্ষত্র থাকলেও সেটার শরীর থেকে গ্যাসীয় পদার্থ টেনে নেয় ব্ল্যাকহোল। সে সব পদার্থ ব্ল্যাকহোলে ঢোকার সময় এর ইভেন্ট হরাইজন ঘটনা দিগন্তের চারপাশে গ্যাসের উজ্জ্বল চাকতি তৈরি করে। এই চাকতিকে বলে অ্যাক্রেশন ডিস্ক। অ্যাক্রেশন ডিস্ক থেকে গ্যাসীয় বা অন্যান্য পদার্থ যে গতিতে ব্ল্যাকহোলে প্রবেশ করে বলে মনে করতেন বিজ্ঞানীরা, সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে তারচেয়েও দ্রুত ব্ল্যাকহোল এসব পদার্থ গ্রাস করে নেয়।

সম্প্রতি এ বিষয়ক একটি গবেষণা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির জ্যোতিঃপদার্থবিদ নিক কাজের নেতৃত্বে একদল গবেষক। তাঁরা প্রচলিত গবেষণাপদ্ধতির চেয়ে ভিন্নপথে গবেষণা করেছেন। আসলে পরীক্ষালব্ধ ডাটা বের করে তারা কম্পিউটার সিমুলেশন করেছেন সে সব ডাটা। অবশ্য সাধারণ কোনো কম্পিউটারে নয়, সিমুলেশনের জন্য ব্যবহার করেছেন সুপার কম্পিটার। এতে হাই রেজ্যুলেশন সিমুলেশন করে ব্ল্যাকহোলের থ্রিডি মডেল তৈরি করেছেন।

সাধারণ ব্ল্যাকহোলের স্পিন বা ঘূর্ণি থাকে। অর্থাৎ ব্ল্যাকহোল নিজ অক্ষের চারপাশে অবিরাম ঘোরে। ফলে এর চারপাশের স্থানকালে আলোড়ন তৈরি হয়। ঘূর্ণনের কারণেই ব্ল্যাকহোলের আকর্ষণে এগিয়ে আসা গ্যাসীয় পদার্থ ব্ল্যাকহোলের চারপাশে অ্যাক্রেশন ডিস্ক তৈরি করে। গ্যাসীয় পদার্থ, প্লাজমা ও ধূলিকণা দিয়ে তৈরি এই অ্যাক্রেশন ডিস্ক।

অ্যাক্রেশন ডিস্কের বেশ কয়েকটি স্তর থাকে। একেবারে বাইরের স্তরকে বলে আউটার ডিস্ক। এবং ভেতরের স্তর, যেটা ব্ল্যাকহোলের ঘটনাদিগন্তের প্রায় গায়ে গায়ে লেগে থাকে, সেটাকে বলে ইনার ডিস্ক।

ব্ল্যাকহোল প্রথমে ইনার ডিস্ক থেকে বস্তুকণাগুলা গ্রাস করে নেয়। ফলে ইনার ডিস্কে ভাঙন ধরে। আউটার ডিস্ক থেকে গ্যাস বা বস্তুকণা গিয়ে ইনার ডিস্কের সেই ক্ষত মেরামত করে।

আগে বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, এই ইনার ডিস্কের ক্ষত তৈরি আর সেটা মেরামত হওয়ার কয়েক শ বছরের দীর্ঘ প্রক্রিয়া। কিন্তু এই থ্রি-ডি সিমুলেশণে দেখা যায়, এই চক্র পূরণ হতে মাত্র কয়েক মাস সময় লাগে।

অ্যাক্রেশন ডিস্কের এই ক্ষত মেরামত দ্রত হয় কারণ, ব্ল্যাক ধারণার চেয়ে বেশি দ্রুত বস্তু গ্রাস করে, তত দ্রুত ক্ষত তৈরি হয়, তত দ্রুতে আউটার ডিস্কের বস্তু গিয়ে সেই ক্ষত মেরামত করে।

এই গবেষণার ফল কোয়সারের আচরণ ব্যাখ্যা করতে অনেক বড় ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।

কোয়াসার এমন এক জ্যোতিষ্ক যা সাধারণ নক্ষত্রের চেয়ে বহুগুণ উজ্জ্বল। আসলে কোয়াসার তৈরিই হয় ব্ল্যাকহোলের কারণে। যখন কোনো নক্ষত্র ব্ল্যাকহোলের খুব কাছ দিয়ে যায়, তখন সেই নক্ষত্রের ওপর ব্ল্যাকহোলের বিষম মহাকর্ষীয় টান তৈরি হয়।

বিষম কেন?

নক্ষত্রের যে পাশটা ব্ল্যাকহোলের দিকে থাকে, সেই পাশে মহাকর্ষীয় টান প্রবল। অন্যদিকে যে পাশটা ব্ল্যাকহোলে বিপরীত দিকে থাকে, সেদিকে ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় টান তুলনামূলক অনেক কম। দুই পাশে বিষম মহাকর্ষ টানের কারণে নক্ষত্রের ভেতরের ভারসাম্য নষ্ট হয়। নক্ষত্রটা তখন ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। ভেঙে যাওয়া সেই নক্ষত্রের ভেতরকার বস্তুকণা জমা হয় ব্ল্যাকহোলের অ্যাক্রেশন ডিস্কে। তখন ব্ল্যাকহোলে অ্যক্রেশন ডিস্কওি বহুগুণে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। এটাকেই আসলে কোয়াসার বলে।

এছাড়া দুটি গ্যালাক্সি তাদের সমস্ত গ্রহ-নক্ষত্র বুকে নিয়ে পরস্পরের সঙ্গে সংঘর্ষ করে এবং দুটিতে মিলে একটা বিশাল গ্যালাক্সি তৈরি করে। প্রতিটা গ্যালাক্সির কেন্দ্রে একটা করে সুপারম্যাসিভ বা অতিভরের ব্ল্যাকহোল থাকে। যখন দুটি গ্যালাক্সির মধ্যে সংঘর্ষ হয়, তখন ভারী গ্যালাক্সির অতিভরের ব্ল্যাকহোলটি তুলনামূলক ছোট গ্যালাক্সির গ্রহ-নক্ষত্রদের গ্রাস করে। তখন সেই ব্ল্যাকহোলের অ্যাক্রেশন ডিস্ক উজ্জ্বল হয়ে কোয়াসারের জন্ম দিতে পারে। শুধু কোয়াসার নয়, রাতের আকাশে অন্যান্য যেসব অতি উজ্জ্বল জোতিষ্ক দেখা যায়, সেগুলোর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা করতে তাদের এই গবেষণা ভূমিকার রাখবে বলে মনে করছেন গবেষক দলটি।

r1 ad
r1 ad