top ad image
top ad image
home iconarrow iconঘরের রাজনীতি

শুল্ক পুনর্বিবেচনায় ট্রাম্পকে ইউনূসের চিঠি, আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

শুল্ক পুনর্বিবেচনায় ট্রাম্পকে ইউনূসের চিঠি, আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও ডোনাল্ড ট্রাম্প

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানিতে প্রতিযোগিতামূলক শুল্কহার (রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কার্যকরের আগে তিন মাস সময় চেয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। একই সঙ্গে তিনি চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্য আমদানি বাড়ানোরও পতিশ্রুতি দিয়েছেন।

সোমবার (৭ এপ্রিল) প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে। এর অংশ হিসেবে মার্কিন কৃষি পণ্য আমদানি বাড়ানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে শুল্ক কমানো ও অশুল্ক বাধা অপসারণের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগিতামূলক শুল্ক ব্যবস্থা বাংলাদেশে প্রয়োগ স্থগিত রাখার জন্য তিন মাস সময় চেয়েছেন, যেন এই সময়ের মধ্যে সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে রপ্তানি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ানোর জন্য নেওয়া পদক্ষেপগুলো সহজে বাস্তবায়ন করতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান গত ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেছেন। ওই সফরের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে চিঠিতে অধ্যাপক ইউনূস লিখেছেন, আমরাই প্রথম দেশ যারা এ ধরনের (যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি বাড়াানার) সক্রিয় উদ্যোগ নিয়েছি।

খলিলুর রহমানের ওই সফরের পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে নির্দিষ্ট পদক্ষেপ নির্ধারণের জন্য ঘনিষ্ঠভাবে কাজ চলছে। এ ছাড়া বাংলাদেশই প্রথম দেশ, যারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির জন্য বহু বছরের একটি চুক্তিতে প্রবেশ করেছে।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে পণ্য আমদানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে কৃষিপণ্যকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, তুলা, গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের মতো কৃষিপণ্য উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আমদানি বাড়াতে পারে বাংলাদেশ। এগুলোর রপ্তানি বাড়লে তা সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকদের উপকারে আসবে।

প্রেস উইংয়ের বার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ পণ্যের ওপর শুল্ক সবচেয়ে কম। প্রধান উপদেষ্টা এ বিষয় উল্লেখ করে চিঠিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরও কমানোর পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া তুলার বাজারে দ্রুত প্রবেশ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিশেষ শুল্কমুক্ত বন্ডেড গুদাম নির্মাণ করবে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, আমরা নির্দিষ্ট কিছু পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তা বাতিল করছি। প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সার্টিফিকেশনের নিয়মগুলো বাস্তবসম্মত করছি এবং কাস্টমস প্রক্রিয়া ও মানদণ্ড সহজ করার মতো বাণিজ্য সহায়ক পদক্ষেপ নিচ্ছি।

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনুস প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করে বলেন, বাংলাদেশ আপনার বাণিজ্য উদ্যোগকে সম্পূর্ণ সমর্থন দিতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে।‘

এ ছাড়া বাংলাদেশের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর বিস্তারিত একটি চিঠি বাণিজ্য উপদেষ্টার মাধ্যমে শিগগিরই মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে পাঠানো হবে।

এর আগে গত বুধবার ট্রাম্প বিশ্বের প্রায় সব দেশের জন্যই নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেন। তার ঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে যে দেশ যত শতাংশ শুল্ক আরোপ করে রেখেছে, ট্রাম্প সেই দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন তার অর্ধেক।

ঘোষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের ওপর বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ হবে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যে মোট শুল্ক হবে আগের ১৫ শতাংশসহ ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের অন্যতম প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্র হওয়ায় অর্থনীতিতে এর প্রভাব অনেক বেশি পড়বে বলেই সবাই নানামুখী আশঙ্কায় ছিলেন।

এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই গতকাল রোববার (৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাসহ অন্যদের নিয়ে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানেই সিদ্ধান্ত হয়, প্রধান উপদেষ্টা নিজে এ ইস্যুতে চিঠি দেবেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। পাশাপাশি বাণিজ্য উপদেষ্টা চিঠি দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য দপ্তর ইউএসটিআরকে। ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই প্রধান উপদেষ্টা এ চিঠিটি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্টকে।

r1 ad
top ad image