
প্রতিবেদক, রাজনীতি ডটকম

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে গণভোট আয়োজন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে থাকা ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলোও উপেক্ষা করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশনের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা তাদের অগোচরেই পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন জাতির ওপর এই সুপারিশ জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরের রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ যেভাবে প্রণীত হয়েছে তাতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর অংশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৭ অক্টোবর আমরা কেবল আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত সনদের অঙ্গীকারনামায় সই করেছি। কিন্তু ওই দিন জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরে প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি আমরা হাতে পাওয়ার পর দৃষ্টিগোচর হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল সুনির্দিষ্টভাবে দুটি ধারার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো সংশোধন করা হয়েছে তাদের অগোচরেই। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এতে সম্মতি দিয়েছিল। এ ছাড়া সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে চূড়ান্ত সনদে তাতে সংশোধনী আনা হয়েছে।
সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে বিএনপির আপত্তি তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, কমিশন জুলাই সনদের সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে বলে সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩ এ সংযোজিত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এ রকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই। সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুযায় ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, অতএব সেটি জারি করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিকল্প প্রস্তাব ১-এ সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেছে ঐকমত্য কমিশন। বিলের তফসিল-১-এ সংস্কার প্রস্তাবগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিল সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধান সংশ্লিষ্ট তফসিল-১-এ বর্ণিত ৪৮টি দফার (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত দফাগুলো) ওপরে গণভোট হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব দফার বিপরীতে সই হওয়া জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয়, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা,’— বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। তারা আলাদাভাবে সংসদ সদস্য ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত জাতীয় সংসদটি একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে অভিহিত হবে।
এর বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশ্ন হলো— নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না, আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়নি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হওয়ার অবকাশও ছিল না।
তিনি বলেন, এ জাতীয় কোনো সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করতে হলে তা-ও পরবর্তী জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলা হয়েছে, ওই বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই এ ধরনের অনুমানমূলক (প্রি-এম্পটিভ) পদক্ষেপ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যেকোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্তির পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।
এ ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশের বিষয়টি বিল আকারে না দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট গণভোটে উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়নি।
গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের গণভোট নির্বাচন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচনা ও জনগণের সম্মতি গ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের প্রস্তাব করেছিল। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে ও একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমরা গণভোটে সম্মত হয়েছি। কিন্তু যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমারা একমত হতে পারছি না। এসব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য তৈরি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের সব শহিদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন— তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সবার কাম্য
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ওই জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।
দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি, জাতীয় অর্থনীতির বিকাশসহ সব বিষয়ে যুগান্তকারী সব সংস্কার ও উন্নয়ন বিএনপি করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ও তারেক রহমানের ২৭ দফা, যা আন্দোলনের সহযোগীদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফায় পরিণত হয়— প্রতিটি কর্মসূচী সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা ও আগ্রহের প্রমাণ।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে গণভোট আয়োজন নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
তিনি বলেন, জুলাই সনদে থাকা ‘নোট অব ডিসেন্ট’গুলোও উপেক্ষা করা হয়েছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়। কমিশনের আলোচনায় ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা তাদের অগোচরেই পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে। ঐকমত্য কমিশন জাতির ওপর এই সুপারিশ জোরজবরদস্তি চাপিয়ে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) দুপুরের রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনায় কিছু কিছু বিষয়ে কিছু কিছু রাজনৈতিক দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ ঐকমত্য হয়েছে। জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫ যেভাবে প্রণীত হয়েছে তাতে ‘নোট অব ডিসেন্ট’-এর অংশে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ভিন্নমত/নোট অব ডিসেন্ট প্রদানকারী কোনো রাজনৈতিক দল বা জোট তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে উল্লেখ করে যদি জনগণের ম্যান্ডেট লাভ করে, তাহলে তারা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, গত ১৭ অক্টোবর আমরা কেবল আলোচনার মাধ্যমে প্রণীত সনদের অঙ্গীকারনামায় সই করেছি। কিন্তু ওই দিন জুলাই জাতীয় সনদের চূড়ান্ত কপি আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হয়নি। পরে প্রিন্টেড পুস্তক হিসেবে জুলাই জাতীয় সনদের কপি আমরা হাতে পাওয়ার পর দৃষ্টিগোচর হয়েছে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে সম্মত কয়েকটি দফা আমাদের অগোচরে পুনরায় সংশোধন করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল সুনির্দিষ্টভাবে দুটি ধারার উল্লেখ করেছেন, যেগুলো সংশোধন করা হয়েছে তাদের অগোচরেই। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বিভিন্ন সরকারি/বেসরকারি অফিসে টাঙানো সংক্রান্ত বিধান [অনুচ্ছেদ ৪ (ক)] বিলুপ্ত করার বিষয়টি সনদে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি, যদিও প্রায় সব রাজনৈতিক দল এতে সম্মতি দিয়েছিল। এ ছাড়া সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদ (পঞ্চম, ষষ্ঠ ও সপ্তম তফসিল) পুরোপুরি বিলুপ্ত করার বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে প্রায় সব রাজনৈতিক দল সম্মতি প্রকাশ করলেও অগোচরে চূড়ান্ত সনদে তাতে সংশোধনী আনা হয়েছে।
সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশে বিএনপির আপত্তি তুলে ধরে দলটির মহাসচিব বলেন, কমিশন জুলাই সনদের সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিষয়গুলো কার্যকর করার উদ্দেশ্যে সরকার ‘জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ ২০২৫’ শিরোনামে একটি আদেশ জারি করবে বলে সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবিত আদেশের একটি খসড়া সংযুক্তি-২ ও সংযুক্তি-৩ এ সংযোজিত করা হয়েছে। কিন্তু সরকারের এ রকম আদেশ জারি করার এখতিয়ার নেই। সংবিধানের ১৫২ নম্বর অনুচ্ছেদের সংজ্ঞা অনুযায় ‘আদেশ’ আইনের মর্যাদাপ্রাপ্ত, অতএব সেটি জারি করা রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বিকল্প প্রস্তাব ১-এ সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ খসড়া বিল গণভোটে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করেছে ঐকমত্য কমিশন। বিলের তফসিল-১-এ সংস্কার প্রস্তাবগুলো সন্নিবেশিত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বিল সরকারি গেজেটে প্রকাশ করা হবে। বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, সংবিধান সংশ্লিষ্ট তফসিল-১-এ বর্ণিত ৪৮টি দফার (জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত দফাগুলো) ওপরে গণভোট হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সব দফার বিপরীতে সই হওয়া জুলাই জাতীয় সনদে অন্তর্ভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত, ‘নোট অব ডিসেন্ট’ উল্লেখ করা হয়নি। অর্থাৎ ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব এবং সুপারিশ একপেশে ও জবরদস্তিমূলকভাবে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
‘তাহলে এটাই প্রতীয়মান হয়, দীর্ঘ প্রায় এক বছর ধরে সংস্কার কমিশন ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর দীর্ঘ ধারাবাহিক আলোচনা ছিল অর্থহীন, অর্থ ও সময়ের অপচয়, প্রহসনমূলক এবং জাতির সঙ্গে প্রতারণা,’— বলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশে বলা হয়েছে, জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে জাতীয় সংসদ গঠিত হওয়ার পাশাপাশি একই সঙ্গে একটি ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ গঠিত হবে। তারা আলাদাভাবে সংসদ সদস্য ও সংবিধান সংস্কার পরিষদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন। অর্থাৎ নির্বাচিত জাতীয় সংসদটি একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে অভিহিত হবে।
এর বিরোধিতা করে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রশ্ন হলো— নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিকভাবে জাতীয় সংসদ ও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাপ্রাপ্ত; সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের লক্ষ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত নয়। ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়টি এজেন্ডাভুক্ত ছিল না, আলোচনার জন্য উপস্থাপিত হয়নি, সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠনের বিষয়ে কোনো ঐকমত্য হওয়ার অবকাশও ছিল না।
তিনি বলেন, এ জাতীয় কোনো সংবিধান সংস্কার পরিষদ গঠন করতে হলে তা-ও পরবর্তী জাতীয় সংসদে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বলা হয়েছে, ওই বাস্তবায়ন আদেশ অনুযায়ী অনুষ্ঠিত গণভোটে যদি ইতিবাচক সম্মতি পাওয়া যায় তাহলে সংবিধান সংস্কার বিলটি সংবিধান সংস্কার পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সহায়ক হিসেবে বিবেচনা করবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠান হওয়ার আগেই এ ধরনের অনুমানমূলক (প্রি-এম্পটিভ) পদক্ষেপ আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, আদেশে বলা হয়েছে, সংবিধান সংস্কার পরিষদ প্রথম অধিবেশন শুরুর তারিখ হতে ২৭০ পঞ্জিকা দিবসের মধ্যে যদি সংস্কার সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয় তাহলে গণভোটে অনুমোদিত সংবিধান সংস্কার বিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হবে, যা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও হাস্যকর। জাতীয় সংসদে অনুমোদনের পর যেকোনো বিল রাষ্ট্রপতির অনুমোদনপ্রাপ্তির পরই কেবল আইনে পরিণত হয়। স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই এবং তা গণতান্ত্রিক রীতি ও সংসদীয় সার্বভৌমত্বের পরিপন্থি।
এ ছাড়া জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের বিকল্প-২ প্রস্তাবে জুলাই সনদ আদেশের বিষয়টি বিল আকারে না দিয়ে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত প্রস্তাবগুলো সরাসরি গণভোটে উপস্থাপন করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত, ভিন্নমত ও নোট অব ডিসেন্ট গণভোটে উপস্থাপনের সুযোগ রাখা হয়নি।
গণভোট প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অথবা নির্বাচনের দিন জুলাই সনদের গণভোট নির্বাচন করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে ঐকমত্য কমিশন। বিএনপি জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি রচনা ও জনগণের সম্মতি গ্রহণের জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোটের প্রস্তাব করেছিল। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। সে ক্ষেত্রে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে প্রস্তাবিত গণভোট অনুষ্ঠান সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, সময় স্বল্পতা ও নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল অঙ্কের ব্যয় এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ ব্যাপক লোকবল নিয়োগ এবং একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মতো বিশাল আয়োজনের বিবেচনায় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত। একই আয়োজনে ও একই ব্যয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই গণভোট অনুষ্ঠান করা বাঞ্ছনীয়।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আইনি ভিত্তি দেওয়ার জন্য আমরা গণভোটে সম্মত হয়েছি। কিন্তু যেসব বিষয়ে ভিন্নমত বা ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ ঐকমত্য হয়েছে, তার উল্লেখ না রেখে এবং দীর্ঘ আলোচনায় যেসব প্রসঙ্গ আলোচনায় আসেনি তা অন্তর্ভুক্ত করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অন্য সব সুপারিশ অগ্রহণযোগ্য বিধায় আমারা একমত হতে পারছি না। এসব সুপারিশ কেবল জাতিকে বিভক্ত করবে, ঐক্যের বদলে অনৈক্য তৈরি করবে। মনগড়া যেকোনো সংস্কার প্রস্তাব গ্রহণ করলে জাতীয় জীবনে দীর্ঘ মেয়াদে অকল্যাণ ডেকে নিয়ে আসতে পারে।
জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আশা করি, জাতির প্রত্যাশা পূরণে এবং দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলন ও ২০২৪ সালের ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের সব শহিদের রক্তের অঙ্গীকার অনুযায়ী এবং যারা দীর্ঘ এই সংগ্রামে ফ্যাসিবাদী শাসনামলে গুম, খুন, অপহরণ, নির্যাতন, মামলা, হামলার শিকার হয়েছেন— তাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র পুনর্গঠন করতে পারব। প্রতিষ্ঠিত হবে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা। সে লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্য বজায় রাখা আমাদের সবার কাম্য
তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে জাতির অভিপ্রায় অনুযায়ী সাংবিধানিক ধারাবাহিকতায় প্রতিষ্ঠিত বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানতম লক্ষ্য হবে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠা করা এবং ওই জাতীয় সংসদকে প্রকৃত অর্থে জাতীয় জীবনের সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রে পরিণত করা।
দেশ ও দেশের জনগণের কল্যাণে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র পরিচালনা পদ্ধতি, জাতীয় অর্থনীতির বিকাশসহ সব বিষয়ে যুগান্তকারী সব সংস্কার ও উন্নয়ন বিএনপি করেছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ১৯ দফা কর্মসূচি, দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ও তারেক রহমানের ২৭ দফা, যা আন্দোলনের সহযোগীদের মতামতের ভিত্তিতে ৩১ দফায় পরিণত হয়— প্রতিটি কর্মসূচী সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির আন্তরিকতা ও আগ্রহের প্রমাণ।

বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের কাজ হলো ঐক্য সৃষ্টি করা, বিভক্তি তৈরি করা নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে দেখা যাচ্ছে, কমিশন জাতিকে বিভ্রান্ত করছে এবং রাজনৈতিক বিভক্তি তৈরি করছে।
১০ ঘণ্টা আগে
নির্বাচনের আগে গণভোট না হলে পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হবে জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ অনুযায়ী আগামী নভেম্বর মাসের মধ্যেই গণভোটের আয়োজন করতে হবে।
১১ ঘণ্টা আগে
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে এ বৈঠক হয়।
১১ ঘণ্টা আগে
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঘোষণা দিয়েছেন, ২০৩৪ সালের মধ্যে বিএনপির লক্ষ্য হবে একটি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি’ গড়ে তোলা, যা লাখ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
১১ ঘণ্টা আগে