ডিএমপি কমিশনারের ‘ধর্ষণ’ শব্দ ব্যবহার না করার অনুরোধে সরকারের নিন্দা

ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলীর ‘ধর্ষণ’ শব্দের বদলে ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নারী নিপীড়ন’ ব্যবহারের অনুরোধের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে সরকার।
রোববার (১৬ মার্চ) রাতে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ কথা বলা হয়েছে।
ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যের বিপরীতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ধর্ষণ মানেই ধর্ষণ, তা সে ৮ বছরের শিশুর ক্ষেত্রে হোক কিংবা ৮০ বছরের বৃদ্ধার ক্ষেত্রে। এমন জঘন্য অপরাধকে তার যথাযথ নামেই অভিহিত করা উচিত।
এর আগে শনিবার (১৫ মার্চ) গণপরিবহনে নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘হেল্প’ অ্যাপের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ডিএমপি কমিশনার। সেখানে তিনি বলেন, “আমি দুটো শব্দ খুব অপছন্দ করি। এর মধ্যে একটি হলো ‘ধর্ষণ’। আপনাদের কাছে অনুরোধ, এটা ব্যবহার করবেন না। আপনারা ‘নারী নির্যাতন’ বা ‘নিপীড়ন’ বলবেন। আমাদের আইনেও নারী ও শিশু নির্যাতন বলা হয়েছে। যে শব্দগুলো শুনতে খারাপ লাগে, সেগুলো আমরা না বলি।”
ডিএমপি কমিশনারের এমন মন্তব্য ছড়িয়ে পড়লে আইনজ্ঞসহ নারী অধিকার কর্মীরা তার তীব্র সমালোচনা করেছেন। তারা বলছেন, ধর্ষণ যেমন একটি অপরাধ, নারী নির্যাতন বা নারী নিপীড়ন তেমনি পৃথক অপরাধ। আইনেই এগুলোর আলাদা আলাদা সংজ্ঞা রয়েছে। ফলে ধর্ষণের ঘটনাকে নারী নির্যাতন বা নারী নিপীড়ন হিসেবে অভিহিত করার সুযোগ নেই। ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে।
রোববার ‘শিশু ধর্ষণ, নির্যাতন ও হত্যার ঘটনায় শিশু অধিকারবিষয়ক এনজিওদের (বেসরকারি সংস্থা) প্রতিবাদ ও উদ্বেগ প্রকাশ’ শিরোনামে এক সংবাদ সম্মেলনেও বক্তারা সুস্পষ্টভাবে বলেন, আইনি দিক ও অপরাধের ভয়াবহতার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ধর্ষণকে ধর্ষণই বলতে হবে। ধর্ষণকে শুধু নারী নির্যাতন ও নারী নিপীড়ন বললে এর ভয়াবহতা হালকা হয়ে যায়।
এ দিন দুপুরে দেশ জুড়ে চলমান নারী ও শিশু নিপীড়ন এবং ধর্ষণের প্রতিবাদে মানববন্ধন আয়োজন করেছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সেখানে ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এর মাধ্যমে ডিএমপি কমিশনার ধর্ষকের পক্ষ নিয়েছেন এবং ধর্ষককে সুরক্ষার উপায় বের করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছেন, যা অগ্রহণযোগ্য। অবিলম্বে তার এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
সরকারও এবার আনুষ্ঠানিকভাবে ডিএমপি কমিশনারের মন্তব্যটির তীব্র সমালোচনা করল। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বার্তায় আরও বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের কোনো নাগরিকের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের সহিংসতা বরদাশত করবে না।