শাহরিয়ার শরীফ
ছয় বছরের বিরতিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় পেয়েছেন এই প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোট নিয়ে অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা কিছু অভিযোগ-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা তুললেও মোটাদাগে এ ভোটকে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। তবে তাদের কোনো প্রার্থীই ডাকসুতে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেননি। জয় পাননি জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম কিংবা বামপন্থি কোনো ছাত্র সংগঠনের কোনো প্রার্থীও।
ডাকসুতে কখনোই জিততে না পারা ছাত্রশিবিরের এমন অবিস্মরণীয় জয়ের পাশাপাশি ছাত্রদলসহ বাকি সংগঠনগুলোর এমন ভরাডুবি বিস্ময় ছড়িয়েছে সারা দেশে। এই জয়কে ছাত্রদলসহ অন্য দলগুলোর পুরনো ধাঁচের রাজনৈতিক চর্চার বিপরীতে শিবিরের সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক চর্চার ফসল হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা।
ডাকসুর সাবেক নেতারা শিবিরের এই ভূমিধস জয়কে কীভাবে দেখছেন? এই জয়ের প্রতিক্রিয়া কোথায় কোথায় পড়বে বলে তারা মনে করেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসসহ জাতীয় রাজনীতিকে এই জয়ের প্রভাব পড়বে কতটুকু?
এসব বিষয়ে জানতে রাজনীতি ডটকম কথা বলেছে ডাকসুর সাবেক দুই সহসভাপতি (ভিপি) ও একজন সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) সঙ্গে।
তারা বলছেন, এই জয়ের মধ্য দিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা শিবিরের নেতৃত্বকে কতটা মেনে নিতে পারবেন, তার ওপর নির্ভর করছে ঢাবি ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ। শিবিরের কট্টর ডানপন্থি মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ থাকলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে।
ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর শিবির সমর্থিত প্যানেলের নবনির্বাচিত ভিপি, জিএস ও এজিএস সবাইকে অভিবাদন জানান। ছবি: ফোকাস বাংলা
পাকিস্তান আমলের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার নেতৃত্বের পাশাপাশি ছাত্রসংঘের নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হলে ছাত্রসংঘ বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে ফের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। আশির দশকে সংগঠনটি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ডাকসু নির্বাচনে কখনো প্রকাশ্যে প্যানেল দিয়ে লড়াই করতে পারেনি।
নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতিই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে তারা প্রকাশ্যে না পারলেও ঢাবিতে গোপনে গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল।
জুলাই অভ্যুত্থানে পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে শিবিরকেও নিষিদ্ধ করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরে শেখ হাসিনার পতন ঘটলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। ছাত্রশিবিরও সাড়ে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। এর এক বছরের মাথায় ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেই বাজিমাত করেছে ছাত্র সংগঠনটি।
ডাকসুর সাবেক নেতারা এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলকে নব্বই-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, তাদের এই জয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। নির্বাচন ঘিরে যেসব অনিয়ম-অভিযোগ উঠে এসেছে, সেগুলোও যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
ডাকসুর ১৯৭২-৭৩ মেয়াদের ভিপি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছাত্রশিবিরের এমন বিজয়কে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, আমরা যদি জনগণের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারি তাহলে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে। স্বাধীনতাবিরোধীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখপাত্র হিসেবে কথা বলবে, যা খুশি তাই বলবে, করবে এটা কি অন্যরা মেনে নেবে? অবশ্যই মানবে না। এরই মধ্যে অনেকে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। একটি বিষয় পরিষ্কার— পাকিস্তানপন্থিদের পুনর্বাসিত করার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রত্যাশা করা যায় না।
ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর শিবির সমর্থিত প্যানেল সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: ফোকাস বাংলা
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সুতরাং এটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে। কারণ ভোট কারচুরিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি ইলেকশন নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক হোসেনও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী অংশ নিয়েছেন, ভোটের হারও ভালো ছিল। কিন্তু কিছু অভিযোগ এটাকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল তো সুস্পষ্ট যে শিবির বিজয়ী হয়েছে। তবু ফলাফল যাই হোক না কেন, অভিযোগ যা আছে সেটার সঠিক তদন্ত করা উচিত। নির্বাচন তো আরও হবে। একাডেমিক কাজের জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার।
শিবিরের বিজয় প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক এই জিএস বলেন, শিবির তো ঘোষিত যে তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে। সেটা জেনেও ছাত্ররা ভোট দিয়েছে কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধের পরে বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় এসেছে তারা যেভাবে ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে, তাতে বীতশ্রদ্ধ হয়েছে। এরই প্রকাশ ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে। আর বিকল্প শক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীরা ছাত্রশিবিরকে একটি সুযোগ দিয়েছে। তারা সৎ মানুষ, দুর্নীতি করে না— এমন ধারণাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে। তাছাড়া শিবির নিজেদের দলের লোক বাড়ানোর জন্যও কিছু সামাজিক কাজকর্ম করে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা হয়তো সুযোগ দিয়েছে।
মুশতাক হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে অন্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের চেয়েও কোথাও কোথাও শিবিরের ভূমিকা বেশি ছিল। যদিও তখন তারা পরিচয় প্রকাশ করেনি। আর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্যাম্পাসে যে সহিংসতা করেছে সেটার কারণেও শিক্ষার্থীরা হয়তো তাদের ভোট দিয়েছে।
শিবিরের জয় ক্যাম্পাস রাজনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করছেন ডাকসুর ১৯৭৯-৮০ ও ১৯৮০-৮১ মেয়াদের ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ভেবে দেখেন, আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে একটি রাজনৈতিক দল মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো সাহস পেত না। তারা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে এসেছে এবং আমাদের চেয়ে বড় যারা তাদের চ্যালেঞ্জ করছে। তাদের এই জয় ঢাবি ক্যাম্পাসে অন্যদের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
তবে শিবিরের এই জয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন মান্না। নিজের উদাহরণ টেনেই তিনি বলেন, আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। খুব পপুলার ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে। কিন্তু আমার পলিটিক্যাল পার্টি হয়নি। আমি তো ক্ষমতায় যাইনি। আমার পার্টি তো ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ডাকসুতে জিতলেই যে তারা জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট কিছু করে ফেলবে, সে রকম নয়।
এদিকে ডাকসুতে জয়ের জন্য ছাত্রশিবিরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি অবশ্য প্রত্যাশা করেছেন, নবনির্বাচিত ডাকসু নেতারা সাংগঠনিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কাজ করবেন।
ছয় বছরের বিরতিতে অনুষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল ‘ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট’। ২৮টি পদের মধ্যে ২৩টিতেই জয় পেয়েছেন এই প্যানেলের প্রার্থীরা। ভোট নিয়ে অন্যান্য প্যানেলের প্রার্থীরা কিছু অভিযোগ-অনিয়ম-অব্যবস্থাপনার কথা তুললেও মোটাদাগে এ ভোটকে গ্রহণযোগ্য বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এ নির্বাচনে পূর্ণ প্যানেল নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও। তবে তাদের কোনো প্রার্থীই ডাকসুতে বিজয়ী হয়ে আসতে পারেননি। জয় পাননি জুলাই আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম কিংবা বামপন্থি কোনো ছাত্র সংগঠনের কোনো প্রার্থীও।
ডাকসুতে কখনোই জিততে না পারা ছাত্রশিবিরের এমন অবিস্মরণীয় জয়ের পাশাপাশি ছাত্রদলসহ বাকি সংগঠনগুলোর এমন ভরাডুবি বিস্ময় ছড়িয়েছে সারা দেশে। এই জয়কে ছাত্রদলসহ অন্য দলগুলোর পুরনো ধাঁচের রাজনৈতিক চর্চার বিপরীতে শিবিরের সুসংগঠিত ও সুশৃঙ্খল সাংগঠনিক চর্চার ফসল হিসেবে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা।
ডাকসুর সাবেক নেতারা শিবিরের এই ভূমিধস জয়কে কীভাবে দেখছেন? এই জয়ের প্রতিক্রিয়া কোথায় কোথায় পড়বে বলে তারা মনে করেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসসহ জাতীয় রাজনীতিকে এই জয়ের প্রভাব পড়বে কতটুকু?
এসব বিষয়ে জানতে রাজনীতি ডটকম কথা বলেছে ডাকসুর সাবেক দুই সহসভাপতি (ভিপি) ও একজন সাধারণ সম্পাদকের (জিএস) সঙ্গে।
তারা বলছেন, এই জয়ের মধ্য দিয়ে ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের একক আধিপত্য বিস্তারের সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ও শিক্ষার্থীরা শিবিরের নেতৃত্বকে কতটা মেনে নিতে পারবেন, তার ওপর নির্ভর করছে ঢাবি ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক গতিপথ। শিবিরের কট্টর ডানপন্থি মতাদর্শের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ থাকলেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোকে।
ডাকসু নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর শিবির সমর্থিত প্যানেলের নবনির্বাচিত ভিপি, জিএস ও এজিএস সবাইকে অভিবাদন জানান। ছবি: ফোকাস বাংলা
পাকিস্তান আমলের জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ছিল ইসলামী ছাত্রসংঘ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর তখনকার নেতৃত্বের পাশাপাশি ছাত্রসংঘের নেতৃত্বের বিরুদ্ধেও মানবতাবিরোধী নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
স্বাধীনতার পর ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা হলে ছাত্রসংঘ বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরে ফের রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। আশির দশকে সংগঠনটি ক্যাম্পাস রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ডাকসু নির্বাচনে কখনো প্রকাশ্যে প্যানেল দিয়ে লড়াই করতে পারেনি।
নব্বইয়ের অভ্যুত্থানে সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর ক্রিয়াশীল সব ছাত্র সংগঠনের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে ঢাবিতে শিবিরের রাজনীতিই নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তখন থেকে তারা প্রকাশ্যে না পারলেও ঢাবিতে গোপনে গোপনে সাংগঠনিক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছিল।
জুলাই অভ্যুত্থানে পতনের ঠিক আগ মুহূর্তে জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে শিবিরকেও নিষিদ্ধ করেছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পরে শেখ হাসিনার পতন ঘটলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলে সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যায়। ছাত্রশিবিরও সাড়ে তিন দশকের মধ্যে প্রথমবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে রাজনীতি করার সুযোগ পায়। এর এক বছরের মাথায় ডাকসুতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে নেমেই বাজিমাত করেছে ছাত্র সংগঠনটি।
ডাকসুর সাবেক নেতারা এবারের ডাকসু নির্বাচনের ফলাফলকে নব্বই-পরবর্তী সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা হিসেবে দেখছেন। তারা মনে করছেন, তাদের এই জয়ে ক্যাম্পাস রাজনীতিতে এক নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। নির্বাচন ঘিরে যেসব অনিয়ম-অভিযোগ উঠে এসেছে, সেগুলোও যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা।
ডাকসুর ১৯৭২-৭৩ মেয়াদের ভিপি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ছাত্রশিবিরের এমন বিজয়কে অশনি সংকেত হিসেবে দেখছেন। এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে ক্যাম্পাসে অস্থিরতা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন তিনি।
মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম রাজনীতি ডটকমকে বলেন, আমরা যদি জনগণের সমস্যাগুলোর সমাধান করতে না পারি তাহলে মৌলবাদ মাথাচাড়া দিতে পারে। স্বাধীনতাবিরোধীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মুখপাত্র হিসেবে কথা বলবে, যা খুশি তাই বলবে, করবে এটা কি অন্যরা মেনে নেবে? অবশ্যই মানবে না। এরই মধ্যে অনেকে এই ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছে। একটি বিষয় পরিষ্কার— পাকিস্তানপন্থিদের পুনর্বাসিত করার মধ্য দিয়ে শান্তি প্রত্যাশা করা যায় না।
ডাকসু নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার পর শিবির সমর্থিত প্যানেল সংবাদ সম্মেলন করে। ছবি: ফোকাস বাংলা
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে প্রার্থীরা যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়ে সেলিম বলেন, ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বেশ কিছু অভিযোগ এসেছে। সুতরাং এটা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন হয়েছে। কারণ ভোট কারচুরিসহ নানা অনিয়ম নিয়ে একাধিক প্রার্থী অভিযোগ করেছে, কিন্তু প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটি ইলেকশন নয়, ইঞ্জিনিয়ারিং ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট।
ডাকসু নির্বাচন নিয়ে ওঠা অভিযোগগুলো তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন ১৯৮৯-৯০ মেয়াদের ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) মুশতাক হোসেনও। রাজনীতি ডটকমকে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক প্রার্থী অংশ নিয়েছেন, ভোটের হারও ভালো ছিল। কিন্তু কিছু অভিযোগ এটাকে অনেকটা ম্লান করে দিয়েছে। নির্বাচনের ফলাফল তো সুস্পষ্ট যে শিবির বিজয়ী হয়েছে। তবু ফলাফল যাই হোক না কেন, অভিযোগ যা আছে সেটার সঠিক তদন্ত করা উচিত। নির্বাচন তো আরও হবে। একাডেমিক কাজের জন্য শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে দূরত্ব কমিয়ে আনা দরকার।
শিবিরের বিজয় প্রসঙ্গে ডাকসুর সাবেক এই জিএস বলেন, শিবির তো ঘোষিত যে তারা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার বিরুদ্ধে। সেটা জেনেও ছাত্ররা ভোট দিয়েছে কারণ যারা মুক্তিযুদ্ধের পরে বিভিন্ন সময় ক্ষমতায় এসেছে তারা যেভাবে ফ্যাসিবাদী আচরণ করেছে, তাতে বীতশ্রদ্ধ হয়েছে। এরই প্রকাশ ঘটেছে গণঅভ্যুত্থানে। আর বিকল্প শক্তি হিসেবে শিক্ষার্থীরা ছাত্রশিবিরকে একটি সুযোগ দিয়েছে। তারা সৎ মানুষ, দুর্নীতি করে না— এমন ধারণাও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছে। তাছাড়া শিবির নিজেদের দলের লোক বাড়ানোর জন্যও কিছু সামাজিক কাজকর্ম করে। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা হয়তো সুযোগ দিয়েছে।
মুশতাক হোসেন বলেন, গণঅভ্যুত্থানে অন্য প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের চেয়েও কোথাও কোথাও শিবিরের ভূমিকা বেশি ছিল। যদিও তখন তারা পরিচয় প্রকাশ করেনি। আর আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্যাম্পাসে যে সহিংসতা করেছে সেটার কারণেও শিক্ষার্থীরা হয়তো তাদের ভোট দিয়েছে।
শিবিরের জয় ক্যাম্পাস রাজনীতির জন্য চ্যালেঞ্জ হতে পারে বলে মনে করছেন ডাকসুর ১৯৭৯-৮০ ও ১৯৮০-৮১ মেয়াদের ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, ‘ভেবে দেখেন, আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে একটি রাজনৈতিক দল মাথা তুলে দাঁড়ানোর মতো সাহস পেত না। তারা এখন মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমাদের সামনে এসেছে এবং আমাদের চেয়ে বড় যারা তাদের চ্যালেঞ্জ করছে। তাদের এই জয় ঢাবি ক্যাম্পাসে অন্যদের জন্যও চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
তবে শিবিরের এই জয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন মান্না। নিজের উদাহরণ টেনেই তিনি বলেন, আমি দুইবার ডাকসুর ভিপি হয়েছি। খুব পপুলার ছিলাম ছাত্রদের মধ্যে। কিন্তু আমার পলিটিক্যাল পার্টি হয়নি। আমি তো ক্ষমতায় যাইনি। আমার পার্টি তো ক্ষমতায় যেতে পারেনি। ডাকসুতে জিতলেই যে তারা জাতীয় রাজনীতিতে বিরাট কিছু করে ফেলবে, সে রকম নয়।
এদিকে ডাকসুতে জয়ের জন্য ছাত্রশিবিরকে অভিনন্দন জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি অবশ্য প্রত্যাশা করেছেন, নবনির্বাচিত ডাকসু নেতারা সাংগঠনিক পরিচয়ের ঊর্ধ্বে উঠে সবার জন্য কাজ করবেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) নির্বাচনে প্রশাসনের পক্ষপাতমূলক ভূমিকা ও ছাত্রশিবিরকে ভোট জালিয়াতিতে সহযোগিতার অভিযোগ তুলে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে ‘সংশপ্তক পর্ষদ’ প্যানেল।
৯ ঘণ্টা আগেজামায়াত আমির ফেসবুকে লেখেন, ‘মহান আল্লাহর ওপর পরিপূর্ণ ভরসা। সত্যের ওপর অটল থাকা এবং প্রিয় জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থনের ওপর আস্থাই আমাদের শক্তি।’
৯ ঘণ্টা আগেজাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল সমর্থিত সহ-সভাপতি (ভিপি) প্রার্থী মো. শেখ সাদী হাসান অভিযোগ করে বলেন, জামায়াতে ইসলামীর একটি অখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকে সরবরাহকৃত ব্যালট পেপার দিয়ে জাকসু নির্বাচন হচ্ছে। তিনি এতে কারচুপির আশঙ্কাও করছেন।
১৩ ঘণ্টা আগেনির্বাচিত জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধনের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষমতা রাখে জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ভিন্ন কোনো প্রক্রিয়ায় গেলে পরবর্তী সময়ে সংশোধনী সংবিধান আদালতে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
১৩ ঘণ্টা আগে