top ad image
top ad image
home iconarrow iconখবরাখবর

‘আমার মেয়ের গলায় ফাঁস দেছে, ওরেও যেন ফাঁসি দিয়ে মারে’

‘আমার মেয়ের গলায় ফাঁস দেছে, ওরেও যেন ফাঁসি দিয়ে মারে’
শিশুটির মায়ের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

ধর্ষণের শিকার হয়ে আট দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়েছে শিশুটি। আট বছরের শরীরটি সেই তীব্র যন্ত্রণা সইতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত পরাজিত হয়েছে মৃত্যুর কাছে। মেয়েকে হারানোর ব্যথা কী করে সইবেন মা! মেয়েকে হারিয়ে এখন তার সঙ্গী শুধুই বিলাপ। আর চাওয়া একটাই— মেয়ে যে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে মারা গেছে, তার হত্যাকারীদেরও যেন একইরকম যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়।

বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) দুপুর ১টায় ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মাগুরায় ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

আট দিন ধরে মেয়েকে যন্ত্রণা ভোগ করতে দেখেও বুকে পাথর চেপে রেখেছিলেন মা। চিকিৎসকরা বারবার বলছিলেন, মেয়েটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি নেই। তবু ক্ষীণ হলেও আশা নিয়ে মা হাসপাতালের করিডোরে সময় কাটিয়েছেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার ঘোষণায় তার আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের পরিবেশ।

মা বলেন, আমার মণি যেভাবে মরছে, আমার মণিরে যেভাবে গলায় ফাঁস দিয়ে মারছে, আমি তারও (অপরাধীর) ফাঁস দিয়ে বিচার চাই। (তার) এরম মৃত্যু চাই আমি।

তিনি বলেন, আমার মণিরে যেমন বেলেড (ব্লেড) দিয়ে কাটছে, গলায় ফাঁস দেছে, ঠিক সেরম বিচার চাই আমি আপনাদের কাছে। ওরে যেন ওইরকম ফাঁসি দিয়ে মারে। ওরকম যেন ওরে বেলেড দিয়ে কাটে। আমার মেয়েটারে যে কষ্ট দিছে না? আমি তারেও এরকম দেখতে চাই।

এ দিন সেনাবাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে করে শিশুটির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মাগুরায়। হেলিকপ্টারে মরদেহের সঙ্গে ছিলেন মা। সরকারের উপদেষ্টা ফরিদা আখতারও সঙ্গে ছিলেন।

মাগুরা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে হেলিকপ্টারটি মাগুরা স্টেডিয়ামে অবতরণ করে। হেলিকপ্টার থেকে তারা নামার সময় কিছু স্বজনও উপস্থিত ছিলেন। তাদের কাছে পেয়ে আবারও কান্নায় ভেঙে পড়েন শিশুটির মা।

সেখানেও তিনি একই কথা বলেন, আমার মেয়ের ধর্ষণকারীদের ফাঁসি চাই। আমার মনিরে বেলেড দিয়ে কেটে কেটে হত্যা করতে চেয়েছিল। ফাঁস দিয়ে মারতে চেয়েছিল। ওরেও যেন ফাঁসি দিয়ে মারে।

মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে গত বুধবার (৫ মার্চ) দিবাগত রাত ২টার দিকে ধর্ষণের শিকার হয় মেয়েটি। বোনের শ্বশুর বাড়ির আত্মীয়দের হাতেই ধর্ষণের শিকার হয় সে।

Dead-Body-Taken-To-Magura-By-Helicopter-13-03-2025

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে শিশুটির মরদেহ মাগুরায় নেওয়া হয়। ছবি: আইএসপিআর

তাকে মাগুরা সদর হাসপাতাল ও সেখান থেকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (৮ মার্চ) সন্ধ্যায় তাকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ভর্তি করা হয় ঢাকা সিএমএইচের শিশু আইসিইউতে।

চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরও শিশুটির শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বুধবারই গ্লাসগো কোমা স্কেলে (জিসিএস) তার চেতনার মাত্রা ৪ থেকে ৩-এ নেমে আসে, যেটিকে জীবিত অবস্থায় চেতনার সর্বনিম্ন মাত্রা হিসেবে বিবেচনা করে থাকেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা।

এর মধ্যেই বুধবার চারবার ও বৃহস্পতিবার তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় মেয়েটির। বৃহস্পতিবার প্রথম দুবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ার পর সিপিআর দিয়ে শিশুটির হৃৎস্পন্দন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু তৃতীয়বার আর তাকে ফেরানো যায়নি। চিকিৎসকদের সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছে শিশুটি।

r1 ad
r1 ad
top ad image