ভারতের এভাবে পুশইন করাটা সঠিক প্রক্রিয়া নয়: নিরাপত্তা উপদেষ্টা\n
বুধবার (৭ মে) সকালে ভারতীয় সেনাবাহিনী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্ট (সাবেক টুইটার) থেকে একটি ছবি পোস্ট করা হয়, যেখানে ইংরেজিতে লেখা ছিল ‘Operation Sindoor’। ছবিতে একটি ‘O’ অক্ষরের জায়গায় রাখা একটি সিঁদুরের পাত্র, আরেকটি ‘O’ অক্ষরে সেই সিঁদুর গড়িয়ে পড়ছে।
‘সিঁদুর’ বাংলা শব্দটিকে হিন্দিতে বলা হয় ‘সিন্দুর’। হিন্দু ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী, সিঁদুর একজন নারীর বিবাহিত থাকার প্রতীক। হিন্দু ধর্মাবলম্বী সধবা নারীদের কপালে বা মাথায় এই সিঁদুর পরার রীতি রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুতে কোনো নারী বিধবা হলে তখন তার কপালের সিঁদুর মুছে ফেলা হয়।
‘অপারেশন সিঁদুর’ নামকরণের পেছনের কারণ হিসেবে ভারত সরকার বা ভারতীয় সেনাবাহিনী কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে দেশটির গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বলা হয়েছে, এই নাম বেছে নেওয়ার পেছনে রয়েছে পহেলগামে হামলার সঙ্গে যোগসূত্র। পহেলগামের হামলাকারীরা যেহেতু ‘ধর্ম বেছে বেছে পুরুষদের হত্যা করে হিন্দু নারীদের বিধবা করেছে’, তাই এই অভিযানের নাম হিসেবে ওইসব বিধবা নারীদের প্রতীক হিসেবে ‘সিঁদুর’ নামকে বেছে নেওয়া হয়েছে।
পহেলগাম হামলায় নিহতদের সবাই পুরুষ এবং তাদের মধ্যে কয়েকজন সদ্যবিবাহিতও ছিলেন। এ প্রেক্ষাপটেই ভারতের এই অভিযানের নাম ‘সিঁদুর’কে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
পহেলগামের হামলায় নিহত কৌস্তভ গনবোটের স্ত্রী সঙ্গীতা গনবোট ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, সেনাবাহিনীর অভিযান খুব ভালো হয়েছে এবং ‘অপারেশন সিঁদুর’ নাম দিয়ে নারীদের সম্মান দেখানো হয়েছে। আমরা প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষাতেই ছিলাম। তিনি উপযুক্ত জবাব দিয়েছেন!
পহেলগাম হামলার শিকার মঞ্জুনাথ রাওয়ের মা বলেন, আমরা আশা করেছিলাম প্রধানমন্ত্রী মোদি একটি কার্যকর জবাব দেবেন। অপারেশন সিঁদুর নামটা একদম উপযুক্ত বলে মনে করি।
উত্তরাখণ্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেস নেতা হরিশ রাওয়াত এক্স হ্যান্ডলে একটি ভিডিও পোস্ট করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর উদ্দেশে লিখেছেন, আপনারা আমাদের মাথা গর্বে উঁচু করেছেন। এটি অপারেশন সিঁদুর। যারা আমাদের বোনেদের মাথার সিঁদুর মুছে দিয়েছে, তাদের আমরা কিছুতেই ছেড়ে দেবো না।
কাশ্মিরে নিহত শুভম দ্বিবেদীর স্ত্রী আইশানিয়া বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর প্রতিশোধ নেওয়ায় আমি প্রধানমন্ত্রী মোদিকে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের পরিবার তার ওপর ভরসা রেখেছিল, তিনি সেই আস্থা অটুট রেখেছেন। এটাই আমার স্বামীর প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধাঞ্জলি। তিনি যেখানেই থাকুন না কেন, আজ শান্তি পাচ্ছেন।
সন্তোষ জাগদালের স্ত্রী প্রগতি জাগদালে বলেন, সন্ত্রাসীরা যেভাবে সিঁদুর মুছে দিয়েছিল, তার উপযুক্ত জবাব এই অভিযান। অপারেশনের নাম শুনে আমার চোখে পানি চলে এসেছে। আমি সরকারের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই।
এর আগে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষে কর্নেল সোফিয়া কুরেশি বুধবার সকালে ‘অপারেশন সিঁদুর\' নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি দাবি করেন, গত ২২ এপ্রিল পহেলগামে সংঘটিত হামলার জবাব দিতেই এই ‘সামরিক প্রত্যুত্তর’ ভারতের পক্ষ থেকে। বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়েছে।
কর্নেল সোফিয়া আরও দাবি করেন, ‘অপারেশন সিন্দুরে’র অধীনে নিষিদ্ধঘোষিত লস্কর-ই-তইয়েবাসহ অন্যান্য জঙ্গি সংগঠনের ঘাঁটি ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছে।
কর্নেল কুরেশি বলেন, লক্ষ্যবস্তু হিসেবে এই ক্যাম্পগুলো বাছাই করা হয় বিস্তারিত গোয়েন্দা মূল্যায়নের পর এবং নিশ্চিত করা হয় যেন কেবল জঙ্গি স্থাপনাগুলোতেই হামলা চলে। এসব ক্যাম্প অতীতে ভারতের বিরুদ্ধে হামলার পরিকল্পনায় ব্যবহৃত হয়েছিল।
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও দাবি করেছে, এই অভিযানে কোনো পাকিস্তানি সামরিক স্থাপনাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়নি এবং লক্ষ্য নির্ধারণে সংযম দেখানো হয়েছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে অবশ্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর এ দাবি অস্বীকার করা হয়েছে। দেশটির সরকারি ও সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, ভারতের হামলার শিকার হয়েছে পাকিস্তানের কয়েকটি মসজিদ ও বেসামরিক আবাসিক এলাকা। হামলায় শিশু ও নারীসহ মোট ২৬ জন সাধারণ বেসামরিক নাগরিক নিহত ও ৪৬ জন আহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র দাবি করেছেন, ভারতীয় হামলার জবাবে পাকিস্তান বিমান বাহিনী পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ও একটি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। পাকিস্তান আরও জানিয়েছে, তারা এই হামলার জবাব দেওয়ার অধিকার রাখে এবং জবাব দেবেও।