একাত্তর সালে নিজেকে চিনতে পেরেছি, এটা ভুলতে পারি না: ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যেখানেই যাচ্ছেন, সেখানেই ঘুষ চাচ্ছে। ঘুষ আমরা আর দেবো না। আপনারা সবাই রুখে দাঁড়াবেন। যে ঘুষ চাইবে তাকে ধরে পুলিশে দেবেন। আবার পুলিশতো ঘুষ খায়। কিন্তু আমরা এই পুলিশ পরিবর্তন করতেছি। ওই পুলিশ এখন জনগণের পুলিশ হবে। এইরকম একটা বাংলাদেশ আমরা চাচ্ছি। কেউ কেউ বলেন একাত্তর ভুলে যাবে। একাত্তর আমরা ভুলতে পারি না। একাত্তরে আমাদের একটা স্বাধীন দেশের জন্ম হয়েছে। আমি আমার নিজেকে চিনতে পেরেছি একাত্তর সালে। আমরা আমাদের জন্য একটা ভূখণ্ড তৈরি করতে পেরেছি।’
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) বিকালে পঞ্চগড় জেলার বোদা উপজেলার সাকোয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। এই দেশে নাকি হিন্দুদের ওপর অত্যাচার হচ্ছে। আমরা এই অঞ্চলের মানুষ শান্তিপ্রিয়। এখানে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সবাই একসঙ্গে বাস করি। পূজায় এখানে মন্দির পাহারা দিয়েছে আমাদের লোকজন। তারা আমাদের মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে বিপদে ফেলতে চাচ্ছে। আমাদের তাদের বিরুদ্ধ রুখে দাঁড়াতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘যারা লুটপাট করে তাদের সরিয়ে দিতে হবে। কেউ যেন আমাদের দেশের ওপর অন্যায়ভাবে হাত না দেয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আওয়ামী লীগ আমাদের উপর যে অত্যাচার করেছে, তা আর কেউ করেনি। আলেম-ওলামাদের ফাঁসি দিয়েছে। আমাদের রাজনীতিবিদদের ধরে নিয়ে গেছে। জেলে দিয়েছে। এইভাবে কেউ যেন আর অন্যায় করতে না পারে, সেজন্য সতর্ক থাকতে হবে। এখন যেন কেউ দেশকে বিভক্ত করতে না পারে। সবাই এক, সবাই বাংলাদেশি, আমরা বাংলাদেশের উন্নয়ন চাই। এভাবেই আমাদেরকে কাজ করতে হবে।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমি আহ্বান জানাতে চাই, সরকারি কর্মকর্তা, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবিসহ সবাইকে- আসুন আমরা একটা সুযোগ পেয়েছি এই সুযোগটাকে কাজে লাগাই। আবার আমরা বাংলাদেশকে সব বিভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে গড়ে তুলি।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শেখ হাসিনা জনগণকে বোকা বানিয়ে জোর করে তিনটি নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় থেকেছে। সে ভেবেছিল কোনোদিন ক্ষমতা থেকে যাবে না। তাকে সেনাবাহিনী দুটি অপশন দিয়েছিল- একটি হলো উত্তাল জনগণের দ্বারা পিষ্ট হবেন, নাকি বাঁচার জন্য পালিয়ে যাবেন? যে নেত্রী বলেছিল, আমি মুজিবের বেটি আমি পালাই না সে জীবন নিয়ে তার নেতাকর্মীদের ছেড়ে বিপদে ফেলে পালিয়ে গেছে। এই হলো ফ্যাসিবাদের পরিণতি। আমরা ছাত্রদের ধন্যবাদ দিতে চাই, তারা বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে আবার সুযোগ তৈরি করেছেন- যেন আমরা আবার দেশকে গণতান্ত্রিকভাবে গড়ে তুলতে পারি। ভোটের কথা বললে অনেকে অসন্তুষ্ট হয়। তাদের বলতে চাই, হ্যাঁ আমরা ভোট চাই এই কারণে যাতে আমরা সঠিক লোক নির্বাচন করতে পারি। যে সংসদে গিয়ে আমাদের জন্য কাজ করবে। আমরাও সংস্কার চাই। ২০২২ সালে আমাদের নেতা ৩১ দফা দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বলেছি, আমরা সংস্কারটা চাই। ২০১৬ সালে আমাদের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ভিশন বাংলাদেশ টুয়েন্টি থার্টি দিয়েছিলেন। আর আমাদের নেতা তারেক রহমান ২০২২ সালে ৩১ দফা দিয়েছেন। দেশকে গড়ে তুলতে হবে। স্কুল কলেজে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘুষ দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’
বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে কেন্দ্রীয় বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, আব্দুল খালেক, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বেবি নাজনীন, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড় জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাহিরুল ইসলাম কাচ্চু, সাবেক মেয়র তৌহিদুল ইসলামসহ দলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।