top ad image
top ad image
home iconarrow iconঅর্থের রাজনীতি

যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্রের ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ

বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও ১০০ পণ্যে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেবে বাংলাদেশ। সরকারে এমন উদ্যোগের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধিকে (ইউএসটিআর) চিঠি দিয়েছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন।

বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৩৭ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের অংশ হিসেবে বাণিজ্য উপদেষ্টা এ চিঠি দিয়েছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সোমবার (৭ এপ্রিল) এ চিঠি পাঠানো হয়েছে বাণিজ্য উপদেষ্টার তরফ থেকে।

এ দিন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসও আরেকটি চিঠি পাঠিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে। ওই চিঠিতে নতুন শুল্কহার কার্যকরের সময় তিন মাস পিছিয়ে দেওয়ার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে পণ্যের আমদানি বাড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশি পণ্যের ওপর অগ্রাধিকারমূলক সুবিধা প্রত্যাহার করে সব রপ্তানি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করে। অথচ বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর গড়ে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর মধ্যে কাঁচা তুলা ও লোহার স্ক্র্যাপের ক্ষেত্রে আমাদের শুল্কহার যথাক্রমে শূন্য ও ১ শতাংশ।

চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় তুলা আমদানিকারক দেশ, যা দিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প চালিত হয়। অথচ যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানির ক্ষেত্রে আমাদের পণ্যগুলোর ওপর বেশি শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের শুল্ক তালিকায় ১৯০টি পণ্যের ওপর শুল্কহার শূন্য এবং আরও ১০০টি পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা চিঠিতে বলেন, ২০১৩ সালের ২৫ নভেম্বর বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) সই হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, উভয় দেশ বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পথে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে তা যৌথভাবে দূর করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বাংলাদেশ সবসময় গঠনমূলক সংলাপ ও সহযোগিতায় বিশ্বাসী। যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিতে যদি কোনো বাধা থাকে তা দূর করতে প্রস্তুত।

এ বিষয়ে ঢাকায় অবস্থিত মার্কিন দূতাবাসের বাণিজ্য শাখার সঙ্গে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে চিঠিতে। আরও বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার শুল্ক হার কমানো, সব ধরনের অশুল্ক বাধা দূর করা এবং পারস্পারিক বাণিজ্যকে আরও লাভজনক করতে বিভিন্ন সংস্কারমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। এসব উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে— আমদানি নীতির হালনাগাদ, কাস্টমস প্রক্রিয়া সহজীকরণ, মেধাস্বত্ব সংরক্ষণ, ট্রেডমার্ক, পেটেন্ট সুরক্ষা ইত্যাদি।

চিঠিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি; মার্কিন অটো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে বাংলাদেশে কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব; বেসরকারি উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে সয়াবিন, গম, তুলা ইত্যাদি বড় আকারে আমদানির উদ্যোগ; এবং যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাতকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য সেবামূলক খাতে বিনিয়োগে উৎসাহিত করা হচ্ছে। বাণিজ্য উপদেষ্টার বিশ্বাস, এসব উদ্যোগ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ভারসাম্য আনতে এবং দুই দেশের জনগণের জীবনমান উন্নয়নে সহায়ক হবে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা লিখেছেন, প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারসহ তিনি ব্যক্তিগতভাবে ইউএসটিআর দপ্তরের সঙ্গে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও মজবুত করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

গত বুধবার বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ হারে পালটা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের বেশির ভাগ দেশের পণ্যে এমন শুল্ক আরোপ করেন তিনি। যে দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি বেশি, ট্রাম্প সেই দেশের ওপর বেশি হারে শুল্ক আরোপ করেছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের নতুন এ শুল্কহার নিয়ে বিশ্ব জুড়ে তোলপাড় চলছে। বাংলাদেশেও সরকারের উচ্চ মহল ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা এ বাড়তি শুল্কের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পৃথক দুটি চিঠি দিলেন।

r1 ad
top ad image