রাজশাহীগামী বাসে ডাকাতির ঘটনায় মামলা, চলছে পুলিশি তদন্ত

ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির ঘটনায় টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় একটি মামলা দায়ের হয়েছে। অজ্ঞাত ৮ থেকে ৯ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন বাসযাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ওমর আলী।
শুক্রবার মামলাটি রেকর্ডভুক্ত করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।
ঘটনার তদন্তে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ নাটোরের বড়াইগ্রামে কাজ করছে। তদন্ত দলে রয়েছেন মির্জাপুর থানার ওসি (তদন্ত) সালাহ উদ্দীন।
শুক্রবার সকালে তিনি জানান, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টার দিকে বড়াইগ্রামে পৌঁছে তারা ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলছেন। ইতোমধ্যেই কয়েকজন পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে কথা বলেছে তদন্ত দল। আরও তিন নারী যাত্রীকে তারা শনাক্ত করে কথা বলছেন। তবে এখন পর্যন্ত ডাকাতির সময় ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির প্রমাণ তারা পাননি।
ঘটনার পরদিন বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ওই বাসের চালকসহ তিন জনকে আটক করে ৫৪ ধারায় চালান দিলে তারা জামিনে মুক্ত হন। বাসটি পুলিশ হেফাজতে রয়েছে।
যাত্রীদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, সোমবার রাতে ঢাকার গাবতলী থেকে রাজশাহীগামী ওই বাসে (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬৯) ওঠেন নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার গুড় ও সুপারি ব্যবসায়ী সোহাগ হোসেন (২৩) ও ওমর আলী (৫২) এবং একই উপজেলার মৌখারা এলাকার মজনু আকন্দ। পথে এক জায়গা থেকে পাঁচ জন এবং অপর এক জায়গা থেকে আরও তিন যাত্রী ওঠেন। কিছুক্ষণ পর টাঙ্গাইলে পৌঁছালে চালককে সরিয়ে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাত দল। ওই দলে থাকা অপর ৫-৭ জন যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন কেড়ে নেয় তারা। ওই বাসে থাকা যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকারও কেড়ে নেয় ডাকাত দল।
তিন ঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে ঘুরিয়ে একই জায়গায় বাসটি নিয়ে গিয়ে রাত ৩টা ৫২ মিনিটে ডাকাতরা নেমে যায়। এরপর বাসের চালক, তার সহকারী ও সুপারভাইজার নানান টালবাহানা করতে থাকেন। তারা বলেন, গাড়িতে তেল নেই। অবশেষে যাত্রীদের চাপের মুখে পড়ে তারা রাজশাহীর উদ্দেশে বাস ছাড়েন। যাত্রীরা প্রথমে বাসটি নিয়ে মামলা করার জন্য টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় যান। সেখানে তখন ওসি ছিলেন না বলে তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে সাড়ে ১১টার পরে বাসটি বড়াইগ্রামে থানায় ঢোকানো হয়।
খবর পেয়ে বড়াইগ্রাম পুলিশ বাসচালক রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার শাহমখদুম কলেজ এলাকার আব্দুল গফুরের ছেলে বাবলু (৪০), সুপারভাইজার একই থানার পূর্ব কাঠালিয়া মহল্লার আঙ্গুর মণ্ডলের ছেলে মাহাবুব আলম (৩০) ও সহকারী সাধুর মোড় এলাকার আব্দুল আজিজের ছেলে সুমন ইসলামকে (২৮) আটক করার পর বাসটি থানা হেফাজতে নেয়।
ভুক্তভোগী বড়াইগ্রামের গুড় ও সুপারি ব্যবসায়ী ওমর আলী জানান, ঘটনার ১১ দিন আগে তারা পাটালি গুড়, তরল গুড় ও সুপারি নিয়ে ঢাকায় যান। ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওই মালগুলো তিনি ও সোহাগ নামে আরেকজন ফেরি করে বিক্রির পর ওই গাড়িতে বাড়ি ফিরছিলেন।
তিনি দাবি করেন, গাড়িটিতে ওঠা নতুন আট যাত্রীর পিঠে ব্যাগ ছিল। তারা সুপারভাইজারের সঙ্গে বেশ কয়েকবার চুপি চুপি কথাও বলে। এরপর এক ডাকাত চালককে সরিয়ে বাসের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অন্যরা যাত্রীদের ছুরিসহ বিভিন্ন অস্ত্রে জিম্মি করে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন ও নারী যাত্রীদের টাকা, স্বর্ণালংকার কেড়ে নেয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি দাবি করেন, প্রথমে এক ডাকাত দুই যাত্রীকে টাকা দিতে না চাওয়ায় ছুরির আঘাতে রক্তাক্ত করে। বিষয়টি দেখে তিনি ২০ হাজার টাকা দিলে ওই ডাকাত চলে যায়। কিন্তু এরপর অন্য ডাকাতরা যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করতে থাকে। ওই সময় সোহাগের কাছে থাকা এক লাখ টাকাও নিয়ে নেয়।
মজনু আকন্দ জানান, ডাকাতরা তার ৪৬ হাজার টাকা নিয়েছে। ডাকাতরা নারী যাত্রীদের স্বর্ণালংকার, টাকা ইত্যাদি নেওয়ার সময় জোর-জবরদস্তি করে। ওই সময় কয়েকজন নারী কান্না আর চিৎকার করলে তাদের আঘাত করে ডাকাতরা।
এক প্রশ্নের জবাবে ওমর জানান, তার একটি ফোন ডাকাতরা নিয়ে নেয়। তবে গোপনে আর একটা ফোন ছিল। মির্জাপুর থানায় গিয়ে পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে নাটোরের পথে গাড়ি পৌঁছাতেই তিনি ওই গোপনে রাখা ফোন দিয়ে স্বজনদের বিষয়টি জানালে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়িটি থামান৷ খবর পেয়ে পুলিশ তাদের কথা নোট করে চালকসহ তিন জনকে আটক করে বাসটি থানায় নিয়ে যায়।
তিনি জানান, সব পুঁজি হারিয়ে তিনি এখন নিঃস্ব হয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে বড়াইগ্রাম থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, এই ঘটনায় চালকসহ তিন জনকে ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠানো হয়।
নাটোর কোর্ট ইন্সপেক্টর মোস্তফা কামাল জানান, বৃহস্পতিবারই ওই তিন জনকে জামিন দিয়েছেন আদালত।
মীর্জাপুর থানার ওসি তদন্ত সালাহ উদ্দিন জানান, ঘটনা তদন্তে তারা বড়াইগ্রামে কাজ করছেন। এই ঘটনায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত পাওয়া তথ্যে তিন নারী এবং পুরুষ যাত্রীরা যা বলেছেন তাতে যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে পুরুষ ও নারী যাত্রীদের টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার ডাকাতরা চাইলে কেউ তা সহজে দেয়নি। ওই সময় ওই মালামাল নিতে ডাকাতদের জোর-জবরদস্তির তথ্য পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।