সজীব রহমান
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়ায় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ একমত হওয়া ৮৪টি দফা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একমত হওয়া ধারাগুলোও।
শনিবার (১৬ আগস্ট) জুলাই সনদের এ খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, পাঠানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এই খসড়ার ওপর দলগুলোর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে জুলাই সনদ। এরপর রাজনৈতিক দলসহ বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে ২০টি দফায় একমত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ছয়টি ধারায় এক বা একাধিক দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। এই সরকার নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও গঠন পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিএনপির।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়ায় কী রয়েছে।
বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারা সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এই ধারায় বলা রয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে এবং অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তবে প্রথম শর্ত তথা মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে নবনির্বাচিত ব্যক্তিরা আগের সংসদের মেয়াদ না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
সংশোধনীতে বলা হচ্ছে, মেয়াদ অবসান কিংবা অন্য যেকোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রেই জাতীয় নির্বাচন হবে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। এ প্রস্তাবে ২৯টি দল ও জোট একমত হয়েছে।
এ পর্যায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া ৫৮ ধারা সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সে ক্ষেত্রেও সংসদ ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে। ২৯টি দল ও জোটের সবাই এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনায় মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে ও সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় পাঁচ সদস্যের ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠন করা হবে। এই কমিটিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে।
এই কমিটিতে থাকবেন— প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি (আসন সংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে একাধিক দল থাকলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল)। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।
গঠনের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহবান করবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি।
প্রতিটি দল ও প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজন করে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবিত নামসহ নিজেদের অনুসন্ধানে পাওয়া নাম নিয়ে বৈঠক করে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন, যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
বাছাই কমিটি গঠনের পাঁচ দিন বা ১২০ ঘণ্টার মধ্যে আগের উল্লেখ করা পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ পদের জন্য সরকারি দল বা জোট ও বিরোধী দল বা জোট পাঁচজন করে যোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলও দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। স্পিকার নামগুলো সবার জন্য প্রকাশ করে দেবেন।
নামগুলো প্রকাশের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচজনের তালিকা থেকে প্রধান বিরোধী দল বা জোট যেকোনো একজনকে বেছে নেবে। একইভাবে প্রধান বিরোধী দল বা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচ নাম থেকে সরকারি দল বা জোট বেছে নেবে একজনকে। পাশাপাশি সরকারি ও বিরোধী দল বা জোট প্রত্যেকেই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাব করা দুজনের নামের তালিকা থেকে একজন করে বেছে নেবে।
এভাবে পাওয়া নামগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একজনের ব্যাপারে প্রস্তাবকারী দলগুলো একমত হলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন। সেটি না হলে বাছাই কমিটির পাঁচজন সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম চারজন কারও বিষয়ে একমত হলেও তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।
আগের দুটি পদ্ধতির কোনোটি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা সম্ভব না হলে তৃতীয় পদ্ধতি হিসেবে ‘র্যাংকড চয়েজে’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদে।
এ পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য প্রথমে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, কর্মরত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেবেন।
এই দুজন প্রতিনিধি যুক্ত হবেন আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটিতে। তবে তারা নিজেরা প্রধান উপদেষ্টা পদে কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।
এ পর্যায়ে সাত সদস্যের বাছাই কমিটির সদস্যরা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র্যাংকড চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে ওই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যেকোনো একজনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন।
এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন। তবে শর্ত থাকবে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা শপথ নেবেন না।
প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করতে প্রস্তাবিত এসব পদ্ধতির কোনোটিই শেষ পর্যন্ত কাজ না করলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যেতে হবে। ওই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতিকে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
ওই সংশোধনী অনুযায়ী, এ রকম বিচারপতি পাওয়া না গেলে তার অব্যবহিত আগে অবসর নেওয়া বিচারপতি, তাকেও না পাওয়া গেলে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং তাকেও পাওয়া না গেলে তার অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত এমন বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগের বিধান ছিল।
এ রকম বিচারপতি কাউকেই শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া না গেলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোনো উপযুক্ত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্রপতির হাতে। তাতেও সমাধান না মিললে রাষ্ট্রপতি নিজেকেই প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করতে পারতেন। জুলাই সনদে অবশ্য শেষ এই ধারা, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে।
কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এর আগের র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ওই ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন।
এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও আগের উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্যপদ পূরণের অধিকার রাখবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পর উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধান উপদেষ্টা সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নেবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠন করা হবে।
এ কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন বা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে একই পদ্ধতিতে উপযুক্ত একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবে। রাষ্ট্রপতি অবিলম্বে তাকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা পদের জন্য বয়সের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ বছর। আগের মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
সংবিধানের বিভিন্ন বিধানসাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে বলে একমত হয়েছে সব দল।
জুলাই সনদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না হলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে একমত হয়েছে দলগুলো।
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া অনুযায়ী, নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে সব দল একমত হলেও বিএনপি এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য দলগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএনপি এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে জুলাই সনদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অংশের ৭ উপদফায় দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদশ ও বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টি।
এই উপদফায় বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে সরকারি দল বা জোট ও বিরোধী দল বা জোট প্রস্তাবিত পাঁচজন করে ১০ জন এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দল প্রস্তাবিত দুজনসহ ১২ জনের মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা রয়েছে।
সনদের এ দফায় ৮ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ও জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ। এখানে আগের উপদফায় প্রস্তাবিত ১২ জনের মধ্য থেকে প্রস্তাবকারী দলগুলোর ঐকমত্য অথবা প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটির চারজনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ৯ উপদফায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোট। এ উপদফায় আগের পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই সম্ভব না হলে বাছাই কমিটিতে বিচার বিভাগের দুজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এর ঠিক পরের ১০ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট ও বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টির। এ উপদফায় ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সনদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অংশের ১২ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে এনডিএম। এ উপদফায় ত্রয়োদশ সংশোধনী ফিরিয়ে এনে বিচার বিভাগের সাবেক বিচারপতি বা উপযুক্ত নাগরিকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
এ ছাড়া ১৩ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের। এ উপদফায় প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে ফের ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে আগের তালিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার ভিত্তিতে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো নিয়ে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। খসড়ায় রাজনৈতিক দল ও জোটগুলোর ‘নোট অব ডিসেন্ট’সহ একমত হওয়া ৮৪টি দফা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে একমত হওয়া ধারাগুলোও।
শনিবার (১৬ আগস্ট) জুলাই সনদের এ খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে, পাঠানো হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। এই খসড়ার ওপর দলগুলোর পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে জুলাই সনদ। এরপর রাজনৈতিক দলসহ বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে এর বাস্তবায়ন পদ্ধতি চূড়ান্ত করা হবে।
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়ায় তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে ২০টি দফায় একমত হওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে ছয়টি ধারায় এক বা একাধিক দলের ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে। এই সরকার নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও গঠন পদ্ধতি নিয়ে দ্বিমত রয়েছে বিএনপির।
একনজরে দেখে নেওয়া যাক, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে জুলাই সনদের সমন্বিত খসড়ায় কী রয়েছে।
বর্তমান সংবিধানের ১২৩ (৩) ধারা সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। বর্তমানে এই ধারায় বলা রয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে এবং অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। তবে প্রথম শর্ত তথা মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে নবনির্বাচিত ব্যক্তিরা আগের সংসদের মেয়াদ না হওয়া পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না।
সংশোধনীতে বলা হচ্ছে, মেয়াদ অবসান কিংবা অন্য যেকোনো কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার ক্ষেত্রেই জাতীয় নির্বাচন হবে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। এ প্রস্তাবে ২৯টি দল ও জোট একমত হয়েছে।
এ পর্যায়ে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বিলুপ্ত হওয়া ৫৮ ধারা সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্ভুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ১৫ দিন আগে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে।
মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সে ক্ষেত্রেও সংসদ ভঙ্গ হওয়ার পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যেই নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ চূড়ান্ত করতে হবে। ২৯টি দল ও জোটের সবাই এ প্রস্তাবে একমত হয়েছে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে আলোচনায় মেয়াদ অবসানের ক্ষেত্রে সংসদের মেয়াদ অবসান হওয়ার ৩০ দিন আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরুর বিষয়ে দলগুলো একমত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় সংসদের স্পিকারের তত্ত্বাবধানে ও সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় পাঁচ সদস্যের ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠন করা হবে। এই কমিটিই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় নেতৃত্ব দেবে।
এই কমিটিতে থাকবেন— প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার (বিরোধী দলের) ও সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের একজন প্রতিনিধি (আসন সংখ্যায় দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের অবস্থানে একাধিক দল থাকলে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল)। কমিটির যেকোনো বৈঠক ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সভাপতিত্ব করবেন স্পিকার।
গঠনের পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল, সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের কাছ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তির নাম প্রস্তাবের আহবান করবে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি।
প্রতিটি দল ও প্রত্যেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে একজন করে ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবেন। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে কমিটির সদস্যরা প্রস্তাবিত নামসহ নিজেদের অনুসন্ধানে পাওয়া নাম নিয়ে বৈঠক করে উপদেষ্টা হওয়ার যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেবেন, যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেবেন।
বাছাই কমিটি গঠনের পাঁচ দিন বা ১২০ ঘণ্টার মধ্যে আগের উল্লেখ করা পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা চূড়ান্ত করা সম্ভব না হলে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এ পদের জন্য সরকারি দল বা জোট ও বিরোধী দল বা জোট পাঁচজন করে যোগ্য ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করবে। সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলও দুজনের নাম প্রস্তাব করবে। স্পিকার নামগুলো সবার জন্য প্রকাশ করে দেবেন।
নামগুলো প্রকাশের পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকারি দল বা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচজনের তালিকা থেকে প্রধান বিরোধী দল বা জোট যেকোনো একজনকে বেছে নেবে। একইভাবে প্রধান বিরোধী দল বা জোটের প্রস্তাবিত পাঁচ নাম থেকে সরকারি দল বা জোট বেছে নেবে একজনকে। পাশাপাশি সরকারি ও বিরোধী দল বা জোট প্রত্যেকেই দ্বিতীয় বৃহত্তম বিরোধী দলের প্রস্তাব করা দুজনের নামের তালিকা থেকে একজন করে বেছে নেবে।
এভাবে পাওয়া নামগুলোর মধ্য থেকে যেকোনো একজনের ব্যাপারে প্রস্তাবকারী দলগুলো একমত হলে তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন। সেটি না হলে বাছাই কমিটির পাঁচজন সদস্যের মধ্যে ন্যূনতম চারজন কারও বিষয়ে একমত হলেও তিনিই পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত হবেন।
আগের দুটি পদ্ধতির কোনোটি দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করা সম্ভব না হলে তৃতীয় পদ্ধতি হিসেবে ‘র্যাংকড চয়েজে’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে জুলাই সনদে।
এ পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য প্রথমে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, কর্মরত প্রধান বিচারপতি ও আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতির সমন্বয়ে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হবে। তারা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ থেকে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন দেবেন।
এই দুজন প্রতিনিধি যুক্ত হবেন আগের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটিতে। তবে তারা নিজেরা প্রধান উপদেষ্টা পদে কারও নাম প্রস্তাব করতে পারবেন না।
এ পর্যায়ে সাত সদস্যের বাছাই কমিটির সদস্যরা পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে স্পিকারের তত্ত্বাবধানে গোপন ব্যালটে ‘র্যাংকড চয়েজ’ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতি প্রয়োগ করে ওই সংক্ষিপ্ত তালিকা থেকে যেকোনো একজনকে পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবেন।
এই পদ্ধতিগুলোর যেকোনো একটি পদ্ধতিতে মনোনীত ব্যক্তিকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি পরবর্তী ৯০ দিনের জন্য প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন। তবে শর্ত থাকবে, সংসদ বহাল থাকা অবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা শপথ নেবেন না।
প্রধান উপদেষ্টা মনোনীত করতে প্রস্তাবিত এসব পদ্ধতির কোনোটিই শেষ পর্যন্ত কাজ না করলে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীতে ফিরে যেতে হবে। ওই সংশোধনীতে রাষ্ট্রপতিকে সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল।
ওই সংশোধনী অনুযায়ী, এ রকম বিচারপতি পাওয়া না গেলে তার অব্যবহিত আগে অবসর নেওয়া বিচারপতি, তাকেও না পাওয়া গেলে আপিল বিভাগের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং তাকেও পাওয়া না গেলে তার অব্যবহিত পূর্বে অবসরপ্রাপ্ত এমন বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগের বিধান ছিল।
এ রকম বিচারপতি কাউকেই শেষ পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া না গেলে প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে কোনো উপযুক্ত নাগরিককে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা ছিল রাষ্ট্রপতির হাতে। তাতেও সমাধান না মিললে রাষ্ট্রপতি নিজেকেই প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা করতে পারতেন। জুলাই সনদে অবশ্য শেষ এই ধারা, অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির নিজেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে বেছে নেওয়ার সুযোগ বাদ দেওয়া হয়েছে।
কোনো কারণে প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য এর আগের র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
দ্বিতীয় স্থানে থাকা বয়সে জ্যেষ্ঠতম ওই ব্যক্তি দায়িত্ব গ্রহণে অসম্মতি জানালে অথবা দায়িত্ব পালনে অপারগ হলে র্যাংকড চয়েজ বা ক্রমভিত্তিক ভোটিং পদ্ধতিতে পরবর্তী স্থানে থাকা ব্যক্তি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নিযুক্ত হবেন।
এ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদে পরিবর্তন হলেও আগের উপদেষ্টা পরিষদ বহাল থাকবে। তবে উপদেষ্টা পরিষদের কোনো পদ শূন্য হলে নবনিযুক্ত প্রধান উপদেষ্টা সেই শূন্যপদ পূরণের অধিকার রাখবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ লাভের পর উপযুক্ত বাছাই কমিটির সঙ্গে পরামর্শ করে প্রধান উপদেষ্টা সংবিধানের ৫৮গ অনুচ্ছেদে বর্ণিত উপযুক্ত ও যোগ্য ব্যক্তিদের মধ্য থেকে সর্বোচ্চ ১৫ জনকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের জন্য বেছে নেবেন। রাষ্ট্রপতি তাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেবেন।
মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনায় বিলুপ্ত সংসদের একই ধরনের প্রতিনিধিত্ব নিয়ে ‘নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটি’ গঠন করা হবে।
এ কমিটি পরবর্তী ১৪ দিন বা ৩৩৬ ঘণ্টার মধ্যে একই পদ্ধতিতে উপযুক্ত একজন ব্যক্তিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে বেছে নেবে। রাষ্ট্রপতি অবিলম্বে তাকে প্রধান উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেবেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও অন্যান্য উপদেষ্টা পদের জন্য বয়সের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৫ বছর। আগের মতোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রধানমন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা এবং অন্যান্য উপদেষ্টারা মন্ত্রীর পদমর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করবেন।
সংবিধানের বিভিন্ন বিধানসাপেক্ষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দায়িত্ব, কর্তব্য ও এখতিয়ার ও অবসানের সময়সীমা নির্ধারিত হবে বলে একমত হয়েছে সব দল।
জুলাই সনদে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৯০ দিন। তবে দৈব-দুর্বিপাকজনিত কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন সম্ভব না হলে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আরও সর্বোচ্চ ৩০ দিন দায়িত্ব পালন করতে পারবে বলে একমত হয়েছে দলগুলো।
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া অনুযায়ী, নতুন সংসদ গঠিত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী যে তারিখে তার পদের কার্যভার গ্রহণ করবেন সেই তারিখে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হবে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন নিয়ে সব দল একমত হলেও বিএনপি এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে অন্য দলগুলোর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছে। বিএনপি এই সরকার গঠনের প্রক্রিয়া সংসদের হাতে ন্যস্ত করার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে জুলাই সনদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অংশের ৭ উপদফায় দ্বিমত পোষণ করে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদশ ও বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টি।
এই উপদফায় বিকল্প পদ্ধতি হিসেবে সরকারি দল বা জোট ও বিরোধী দল বা জোট প্রস্তাবিত পাঁচজন করে ১০ জন এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম দল প্রস্তাবিত দুজনসহ ১২ জনের মধ্য থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা রয়েছে।
সনদের এ দফায় ৮ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট (এনডিএম) ও জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশ। এখানে আগের উপদফায় প্রস্তাবিত ১২ জনের মধ্য থেকে প্রস্তাবকারী দলগুলোর ঐকমত্য অথবা প্রধান উপদেষ্টা বাছাই কমিটির চারজনের ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে ৯ উপদফায় ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, এনডিএম, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোট। এ উপদফায় আগের পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা বাছাই সম্ভব না হলে বাছাই কমিটিতে বিচার বিভাগের দুজন প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
এর ঠিক পরের ১০ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২ দলীয় জোট ও বাংলাদশে নেজামে ইসলাম পার্টির। এ উপদফায় ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়নের কথা বলা হয়েছে।
এদিকে সনদের তত্ত্বাবধায়ক সরকার অংশের ১২ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ দিয়েছে এনডিএম। এ উপদফায় ত্রয়োদশ সংশোধনী ফিরিয়ে এনে বিচার বিভাগের সাবেক বিচারপতি বা উপযুক্ত নাগরিকদের মধ্য থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
এ ছাড়া ১৩ উপদফা নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ রয়েছে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও ১২ দলীয় জোটের। এ উপদফায় প্রধান উপদেষ্টার পদ শূন্য হলে ফের ‘র্যাংকড চয়েজ’ পদ্ধতিতে আগের তালিকা থেকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, আগামী ৫০ বছরের মধ্যে ওই ফল্টলাইনে ৮ মাত্রা বা তার বেশি শক্তির ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কা প্রায় ১৫ শতাংশ। এতে উপকূলীয় ভূমি সাড়ে ৬ ফুট পর্যন্ত ধসে যেতে পারে।
৪ ঘণ্টা আগেতত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা নিয়ে করা রিভিউ আবেদন দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সব রাজনৈতিক দল আপিল বিভাগে আবেদন জানিয়েছে। এ বিষয়ে শুনানির তারিখ আগামী ২৬ আগস্ট নির্ধারণ করেছেন আদালত।
৪ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ দূতাবাস (লিবিয়া) বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে আটক বাংলাদেশি নাগরিকদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
৫ ঘণ্টা আগে