
খন্দকার হাসনাত করিম

আপসহীন দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের জননী খালেদা জিয়া অবশেষে আপস করতে বাধ্য হলেন মৃত্যুর সঙ্গে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন এই আপসহীন দেশনেত্রী এই জাতির স্মৃতিতে, স্মরণে, মননে ও সংগ্রামে এক অবিসংবাদিত বাতিঘর হয়ে রইবেন, হয়ে রইবেন জাতীয় ঐক্যের প্রবাদ-প্রতীক হিসাবে। জাতি যুগ যুগ ধরে তাকে ধারণ করবে শ্রদ্ধার উচ্চ শিরোপায়।
ইতিহাসে সত্যিই এ এক বিরল সাহসী ও দেশপ্রেমিক পরিবার, যার স্বামী একজন দেশবরেণ্য, বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধে বীর সেক্টর কমান্ডার। সেই মা দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের জননী, তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তাদের জ্যেষ্ঠপুত্র আগামীর রাষ্ট্রনেতা, যিনি দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রদর্শনের বলিষ্ঠ প্রবক্তা।
দেশ ও জাতির যেকোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে এই দেশপ্রেমিক পরিবারই জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বুঝতেই পারছেন, আমরা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং ভবিষ্যতের জাতীয় নেতা ও জননন্দিত রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের কথাই বলছি।
পাকিস্তানি শাসকরা যখন এ দেশের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালিয়ে আমাদের নির্মূল করতে চেয়েছিল, দেশ যখন নেতৃত্বহীন, ব্যারাকে বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছে, ক্ষুদ্ধ সমগ্র জাতি, শেখ মুজিবুর রহমান বন্দি থাকার কারণে দেশের সংকটময় মুহূর্তে অনুপস্থিত— সেই সংকটকালেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন অসীম সাহসী ও দেশপ্রেমিক মেজর জিয়াউর রহমান। তিনিও নিজে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন অমিত তেজী সেক্টর কমান্ডার। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথম যে তিনটি ব্রিগেডের নামকরণ করা হয়, তার একটি ছিল তারই নামানুসারে, অর্থাৎ ‘জেড’ ফোর্স ব্রিগেড। ৯ মাস একটানা মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করতে তিনি ফিরে যান বীর সৈনিকের পেশায়। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করতে সেনাবাহিনীসহ সমগ্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আবার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের পর ৩ নভেম্বর যখন পালটা-অভ্যুত্থান হয়, তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। যে যার এজেন্ডা অনুযায়ী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় সামরিক অফিসার নিধনের এক সর্বনাশা খেলা। তখন গোটা জাতি এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মুখে।
আবার এমনই এক ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান জাতির হাল ধরেন। তাকে বন্দিদশা থেকে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা মুক্ত করে নেতৃত্বেও যোগ্য আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতা বিপ্লবের সফল নেতৃত্ব দেন এবং জাতির পরিত্রাণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সেই অর্থে তিনি দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেন।
জনগণের বিপুল ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন। দেশে গণভোট দেন এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয় তারই প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে কায়েম হওয়া একদলীয় বাকশালের অবসান ঘটান জিয়াউর রহমান। কুখ্যাত চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের ঐতিহাসিক পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়া দেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রদর্শনের পতাকা সমুন্নত করেন।
জিয়া জনগণের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। নিষিদ্ধঘোষিত গণমাধ্যম ফিরে পায় স্বাধীনতা, আদালত ফিরে পায় বিচারিক এখতিয়ার। বহির্বিশ্বে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়া বাংলাদেশকে উন্নীত করেন এক অভাবনীয় উচ্চতায়। তিনি ছিলেন ১০ বছর ধরে চলা উপসাগরীয় যুদ্ধে একক মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রপ্রধান। সৌদি আরবসহ মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের আদর্শিক সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন।
দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে জিয়া সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেন, দেশের পোশাক রপ্তানির দিগন্ত উন্মোচন করেন, যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ কার্যত বিশ্বে প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি ছিল ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ, যা ভূ-উপরিস্থ পানিধারা রক্ষা করার মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব সাধন করতে পারত। তিনি দেশের ডান, মধ্য ও বাম মিলিয়ে দেশের প্রথম জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলেন। সর্বোপরি, জিয়া প্রত্যাবর্তন করান বহুদলীয় গণতন্ত্রে। এমনকি আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করেন, কারণ বাকশাল ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ ছিল।
এভাবে দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বারবার মুক্তির দূত হিসেবে অবতীর্ণ হন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার মহানুভবতায় প্রবাসের জীবন থেকে সসম্মানে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। অথচ হাসিনা দেশে ফেরার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী প্রভুরা চক্রান্ত করে চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে খুন করেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল রাষ্ট্রনায়ক রাষ্ট্রপতিকে।
আধিপত্যবাদী নৃশংস চক্রান্তের পর জিয়ার মৃত্যুর পর দেশের হাল ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জিয়ার শাহাদতের জন্য দায়ী করেন এরশাদকে এবং পরে তার এই আপসহীন ভূমিকার যথার্থতা ও দূরদর্শিতা প্রমাণিত হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি একনায়ক, খুনি ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। তার নেতৃত্বে সারা দেশে এরশাদ-বিরোধী গণআন্দোলন রূপ নেয় ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে।
খালেদা জিয়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানোর আইন করেন, যেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারে। আওয়ামী লীগ ও তার কুচক্রী দোসররা বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকেও কঠোর দমন নীতির মুখে পড়তে হয়। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়।
স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বেগম জিয়া ও তার জনপ্রিয় দল বিএনপির বিরুদ্ধে যে দমন-পীড়ন শুরু করে, তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়। আফসোস, তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারলেন না ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার।
একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও একটি পরিবারকে ১৬ বছর ধরে অন্যায়-অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য দেশের সব স্তরের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার সফল গণআন্দোলনে তিনি মুক্ত হলেন এবং আজ চলে গেলেন।
পিতাকে হত্যা করে, মাকে জেলে পচিয়ে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যা করেছে, তার নজির পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। কিন্তু আপস করেননি— জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান— কেউই। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের জেল-জুলুম, গুম-খুন, হামলা-মামলা, মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে আপসহীন দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদের গৌরবকে ধারাবাহিকভাবে লালন করে চলেছে এই দেশপ্রেমিক পরিবারের তিন প্রজন্ম।
প্রবাস থেকেও তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন এ দেশের স্বাধীনতার দল, গণতন্ত্রের দল ও জাতীয়তাবাদের দুর্গ বিএনপিকে। আর এখন বিজয়ী বীর হিসেবে দেশে ফিরে এসে তিনিও পরিণত হলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে। তার প্রতিটি উচ্চারণে যেমন সুমার্জিত নেতৃত্বের বহির্প্রকাশ, তেমনি দেশ-জনতা, স্বাধীনতা-জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদের সুমহান দর্শনের প্রশ্নে তিনিই রেখেছেন তিন প্রজন্মের আপসহীনতার মহান উত্তরাধিকার। তাই তো দেশের পথে আজ শুনি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তহীন আহাজারি।
বাংলাদেশের রাজনীতির মানচিত্রে খালেদা জিয়া এমনই এক নাম, যিনি কেবল একজন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নন, বরং তিনি একটি ‘মাইলফলক’। একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে বিশ্বমঞ্চে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠার গল্পটি কোনো সাধারণ জীবনী নয়; এটি শেক্সপিয়রীয় নাটকের মতো নাটকীয়তা, ট্র্যাজেডি ও অবিশ্বাস্য পুনরুত্থানের এক জীবন্ত দলিল।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

আপসহীন দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের জননী খালেদা জিয়া অবশেষে আপস করতে বাধ্য হলেন মৃত্যুর সঙ্গে। যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন এই আপসহীন দেশনেত্রী এই জাতির স্মৃতিতে, স্মরণে, মননে ও সংগ্রামে এক অবিসংবাদিত বাতিঘর হয়ে রইবেন, হয়ে রইবেন জাতীয় ঐক্যের প্রবাদ-প্রতীক হিসাবে। জাতি যুগ যুগ ধরে তাকে ধারণ করবে শ্রদ্ধার উচ্চ শিরোপায়।
ইতিহাসে সত্যিই এ এক বিরল সাহসী ও দেশপ্রেমিক পরিবার, যার স্বামী একজন দেশবরেণ্য, বিশ্বনন্দিত রাষ্ট্রনায়ক এবং মুক্তিযুদ্ধে বীর সেক্টর কমান্ডার। সেই মা দেশনেত্রী, গণতন্ত্রের জননী, তিনবার নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী। তাদের জ্যেষ্ঠপুত্র আগামীর রাষ্ট্রনেতা, যিনি দেশের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রদর্শনের বলিষ্ঠ প্রবক্তা।
দেশ ও জাতির যেকোনো সংকট ও ক্রান্তিকালে এই দেশপ্রেমিক পরিবারই জনগণের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। বুঝতেই পারছেন, আমরা শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া এবং ভবিষ্যতের জাতীয় নেতা ও জননন্দিত রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমানের কথাই বলছি।
পাকিস্তানি শাসকরা যখন এ দেশের নির্বাচিত জন প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা না দিয়ে ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যা চালিয়ে আমাদের নির্মূল করতে চেয়েছিল, দেশ যখন নেতৃত্বহীন, ব্যারাকে বাঙালি সৈন্যরা বিদ্রোহ করেছে, ক্ষুদ্ধ সমগ্র জাতি, শেখ মুজিবুর রহমান বন্দি থাকার কারণে দেশের সংকটময় মুহূর্তে অনুপস্থিত— সেই সংকটকালেই চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন অসীম সাহসী ও দেশপ্রেমিক মেজর জিয়াউর রহমান। তিনিও নিজে যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে।
জিয়াউর রহমান ছিলেন একজন অমিত তেজী সেক্টর কমান্ডার। দেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রথম যে তিনটি ব্রিগেডের নামকরণ করা হয়, তার একটি ছিল তারই নামানুসারে, অর্থাৎ ‘জেড’ ফোর্স ব্রিগেড। ৯ মাস একটানা মুক্তিযুদ্ধে দেশ স্বাধীন করতে তিনি ফিরে যান বীর সৈনিকের পেশায়। তিনি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে সুরক্ষিত করতে সেনাবাহিনীসহ সমগ্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানোর সংকল্পে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
আবার পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সামরিক অভ্যুত্থানের পর ৩ নভেম্বর যখন পালটা-অভ্যুত্থান হয়, তিন দিন দেশে কোনো সরকার ছিল না। যে যার এজেন্ডা অনুযায়ী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে পড়ে। শুরু হয় সামরিক অফিসার নিধনের এক সর্বনাশা খেলা। তখন গোটা জাতি এক রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের মুখে।
আবার এমনই এক ক্রান্তিকালে জিয়াউর রহমান জাতির হাল ধরেন। তাকে বন্দিদশা থেকে দেশপ্রেমিক সৈনিক ও জনতা মুক্ত করে নেতৃত্বেও যোগ্য আসনে প্রতিষ্ঠা করেন। ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক সিপাহী-জনতা বিপ্লবের সফল নেতৃত্ব দেন এবং জাতির পরিত্রাণকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। সেই অর্থে তিনি দেশকে দ্বিতীয়বার স্বাধীন করেন।
জনগণের বিপুল ও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থনে জিয়াউর রহমান প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন এবং দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক হয়ে ওঠেন। দেশে গণভোট দেন এবং ১৯৭৯ সালের নির্বাচনে নিরঙ্কুশভাবে বিজয়ী হয় তারই প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীতে কায়েম হওয়া একদলীয় বাকশালের অবসান ঘটান জিয়াউর রহমান। কুখ্যাত চতুর্থ সংশোধনী বাতিল করে সংবিধানের ঐতিহাসিক পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়া দেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব এবং জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রদর্শনের পতাকা সমুন্নত করেন।
জিয়া জনগণের হারানো গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেন। নিষিদ্ধঘোষিত গণমাধ্যম ফিরে পায় স্বাধীনতা, আদালত ফিরে পায় বিচারিক এখতিয়ার। বহির্বিশ্বে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়া বাংলাদেশকে উন্নীত করেন এক অভাবনীয় উচ্চতায়। তিনি ছিলেন ১০ বছর ধরে চলা উপসাগরীয় যুদ্ধে একক মধ্যস্থতাকারী রাষ্ট্রপ্রধান। সৌদি আরবসহ মুসলিম উম্মাহর সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের আদর্শিক সৌহার্দ্যের সেতুবন্ধন গড়ে তোলেন।
দেশের অর্থনীতিকে সুদৃঢ় ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে জিয়া সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেন, দেশের পোশাক রপ্তানির দিগন্ত উন্মোচন করেন, যার ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ আজ কার্যত বিশ্বে প্রধান পোশাক রপ্তানিকারক দেশ।
জিয়াউর রহমান ছিলেন আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার। জিয়ার খাল খনন কর্মসূচি ছিল ফারাক্কা বাঁধের বিরুদ্ধে এক সাহসী প্রতিবাদ, যা ভূ-উপরিস্থ পানিধারা রক্ষা করার মাধ্যমে কৃষিতে বিপ্লব সাধন করতে পারত। তিনি দেশের ডান, মধ্য ও বাম মিলিয়ে দেশের প্রথম জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলেন। সর্বোপরি, জিয়া প্রত্যাবর্তন করান বহুদলীয় গণতন্ত্রে। এমনকি আওয়ামী লীগকে পুনর্জীবিত করেন, কারণ বাকশাল ব্যবস্থায় আওয়ামী লীগও নিষিদ্ধ ছিল।
এভাবে দেশ ও জাতির ক্রান্তিকালে বারবার মুক্তির দূত হিসেবে অবতীর্ণ হন শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তার মহানুভবতায় প্রবাসের জীবন থেকে সসম্মানে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। অথচ হাসিনা দেশে ফেরার দুই সপ্তাহেরও কম সময়ে আধিপত্যবাদী ও সম্প্রসারণবাদী প্রভুরা চক্রান্ত করে চট্টগ্রামে নৃশংসভাবে খুন করেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় ও সফল রাষ্ট্রনায়ক রাষ্ট্রপতিকে।
আধিপত্যবাদী নৃশংস চক্রান্তের পর জিয়ার মৃত্যুর পর দেশের হাল ধরেন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি জিয়ার শাহাদতের জন্য দায়ী করেন এরশাদকে এবং পরে তার এই আপসহীন ভূমিকার যথার্থতা ও দূরদর্শিতা প্রমাণিত হয়। ষড়যন্ত্র শুরু হয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি একনায়ক, খুনি ও স্বৈরাচারী এরশাদের বিরুদ্ধে ছিলেন আপসহীন। তার নেতৃত্বে সারা দেশে এরশাদ-বিরোধী গণআন্দোলন রূপ নেয় ৯০-এর গণঅভ্যুত্থানে।
খালেদা জিয়াই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করানোর আইন করেন, যেন নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র এ দেশে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ নিতে পারে। আওয়ামী লীগ ও তার কুচক্রী দোসররা বেগম জিয়ার বিরুদ্ধে কার্যত যুদ্ধ ঘোষণা করে এবং তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকেও কঠোর দমন নীতির মুখে পড়তে হয়। বারবার তাকে কারাবরণ করতে হয়।
স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার বেগম জিয়া ও তার জনপ্রিয় দল বিএনপির বিরুদ্ধে যে দমন-পীড়ন শুরু করে, তাকে চিকিৎসার সুযোগ থেকেও বঞ্চিত করে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেয়। আফসোস, তিনি জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারলেন না ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিচার।
একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল ও একটি পরিবারকে ১৬ বছর ধরে অন্যায়-অত্যাচারের মুখোমুখি হওয়ার দৃশ্য দেশের সব স্তরের জনগণ প্রত্যক্ষ করেছে। তার ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার সফল গণআন্দোলনে তিনি মুক্ত হলেন এবং আজ চলে গেলেন।
পিতাকে হত্যা করে, মাকে জেলে পচিয়ে ১৬ বছরের স্বৈরাচারী হাসিনা সরকার যা করেছে, তার নজির পৃথিবীর কোনো দেশে নেই। কিন্তু আপস করেননি— জিয়া, খালেদা জিয়া, তারেক রহমান— কেউই। স্বৈরাচারী ও ফ্যাসিবাদী সরকারের জেল-জুলুম, গুম-খুন, হামলা-মামলা, মিথ্যা অভিযোগের বিরুদ্ধে আপসহীন দেশপ্রেম এবং স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয়তাবাদের গৌরবকে ধারাবাহিকভাবে লালন করে চলেছে এই দেশপ্রেমিক পরিবারের তিন প্রজন্ম।
প্রবাস থেকেও তারেক রহমান নেতৃত্ব দিয়েছেন এ দেশের স্বাধীনতার দল, গণতন্ত্রের দল ও জাতীয়তাবাদের দুর্গ বিএনপিকে। আর এখন বিজয়ী বীর হিসেবে দেশে ফিরে এসে তিনিও পরিণত হলেন জাতীয় ঐক্যের প্রতীকে। তার প্রতিটি উচ্চারণে যেমন সুমার্জিত নেতৃত্বের বহির্প্রকাশ, তেমনি দেশ-জনতা, স্বাধীনতা-জাতীয় ঐক্য ও জাতীয়তাবাদের সুমহান দর্শনের প্রশ্নে তিনিই রেখেছেন তিন প্রজন্মের আপসহীনতার মহান উত্তরাধিকার। তাই তো দেশের পথে আজ শুনি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে অন্তহীন আহাজারি।
বাংলাদেশের রাজনীতির মানচিত্রে খালেদা জিয়া এমনই এক নাম, যিনি কেবল একজন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নন, বরং তিনি একটি ‘মাইলফলক’। একজন সাধারণ গৃহবধূ থেকে বিশ্বমঞ্চে ‘আপসহীন নেত্রী’ হয়ে ওঠার গল্পটি কোনো সাধারণ জীবনী নয়; এটি শেক্সপিয়রীয় নাটকের মতো নাটকীয়তা, ট্র্যাজেডি ও অবিশ্বাস্য পুনরুত্থানের এক জীবন্ত দলিল।
লেখক: জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা— দীর্ঘ সময় দেশের বাইরে থেকেও একজন নেতা কেবল ভিডিও কনফারেন্স ও সাংগঠনিক যোগাযোগের মাধ্যমে একটি বিশাল রাজনৈতিক জোটকে অভিন্ন লক্ষ্যে স্থির রাখতে পেরেছেন। তিনি হয়ে উঠেছিলেন ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনের এক অদৃশ্য কিন্তু শক্তিশালী সুতো, যা সকল মতের মানুষকে একই প
৬ দিন আগে
ব্যাংক খাতের কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্দশা কাটেনি। বিগত দিনগুলোতে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো সরকারের ইচ্ছানুযায়ী পরিচালিত হয়েছে, যা ব্যাংক ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলেছে। এ খাতে সুশাসন ফেরাতে সরকারের পক্ষ থেকে বেশ কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়ন করা গেলে ব্যাংক খাত আরও ভালো করবে।
৭ দিন আগে
কর্ণফুলীর স্রোতধারার সঙ্গে যুক্ত হয় বঙ্গোপসাগরের আছড়ে পড়া উত্তাল ঢেউ। সেই আনন্দের মাঝেই হঠাৎ যোগ দেয় একদল সশস্ত্র তিব্বতীয় গেরিলা। বঙ্গোপসাগরের ঢেউ আর কর্ণফুলীর স্রোত যেন স্তব্ধ হয়ে যায়। আনন্দে উদ্বেলিত জনতা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তিব্বতীয়দের দিকে।
১৫ দিন আগে
তখন আমাদের চিহ্নিত শত্রু ছিল হানাদার বাহিনী। তাদের সঙ্গে আরও চিহ্নিত হয়েছিল তাদের এ দেশীয় ‘কোলাবোরেটর’ বা সহযোগীরা, যারা ছিল মূলত রাজাকার, আলবদর বা আল শামস বাহিনীর। এরাও চিহ্নিত ছিল। এদের বিরুদ্ধে দেশের মানুষ একাট্টা হয়ে সংগ্রাম করেছে। সেই সংগ্রাম রক্তক্ষয়ী ছিল, বহু মানুষ অকাতরে শহিদ হয়েছে।
১৫ দিন আগে