জাতীয় নাগরিক কমিটি: ভবিষ্যতের রাজনীতির এক নতুন দিশা

সাইফুল্লাহ হায়দার
প্রকাশ: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৫: ০০
জাতীয় নাগরিক কমিটি।

আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রের ভবিষ্যত গড়ার দায়িত্ব নতুন প্রজন্মের কাঁধে। তারা যে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করবে তা আমাদের জন্য শুধু চিন্তার বিষয় নয়, বরং ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হতে পারে। বর্তমান সময়ে রাজনীতিতে নেতৃত্বের জায়গা শুধু বয়স কিংবা পরিচিতির ওপর নির্ভরশীল নয়। মেধা, সাহস ও কর্মই মানুষকে নেতৃত্বের আসনে বসাতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে মানুষকে মেধাবী, সাহসী ও কর্মঠ করে গড়ে তোলা, যাদের হাত ধরেই আগামীর রাষ্ট্রকল্প বাস্তবায়িত হবে। আর এ লক্ষ্যে কাজ করছে জাতীয় নাগরিক কমিটি, যা দেশের জন্য একটি নতুন দিশা দেখানোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

মেধা, সাহস ও কর্ম: নেতৃত্বের মূল সত্তা

একটি জাতির উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সর্বোত্তম নেতৃত্ব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সেই নেতৃত্ব কীভাবে আসবে? এটি আসবে সেসব ব্যক্তির কাছ থেকে, যারা তাদের মেধা, সাহস ও কাজের মাধ্যমে সমাজে প্রভাব তৈরি করতে পারে। নেতৃত্বর মূল উপাদান যদি এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে নিহিত থাকে, তবে সেখানে বয়সের কোনো বাধা থাকতে পারে না।

মেধা একজন নেতার সবচেয়ে বড় সম্পদ। মেধা বলতে শুধু একাডেমিক শিক্ষাকে বোঝানো হচ্ছে না, বরং সেই ব্যক্তি যে সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের বিষয়ে জ্ঞানের অধিকারী, তেমন একজন ব্যক্তি। মেধা একজন নেতাকে তার সমস্যাগুলোর সমাধান বের করার জন্য নতুন পথ খুঁজে বের করার সক্ষমতা দেয়। সেইসঙ্গে একজন নেতার প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা তাকে দেশের নীতি ও পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সহায়তা করে।

এ ছাড়া, সাহস একজন নেতার জন্য অপরিহার্য। সাহসী নেতা কখনো বিপদকে ভয় পায় না। সমাজের অসঙ্গতিগুলোর বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সংগ্রাম করতে সে কখনো পিছপা হয় না। সাহসী নেতা যখন জনগণের বিপক্ষে গিয়ে সত্য কথা বলে, তখন সে বাস্তবতার চেহারা সবার সামনে তুলে ধরতে সক্ষম হয়। জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মীরা এই সাহসিকতা ধারণ করে দেশের স্বার্থে কাজ করে যাচ্ছে। তারা কখনো তাদের আদর্শ থেকে পিছপা হয়নি, বরং দেশের উন্নতির জন্য সবসময় সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

কর্ম একজন নেতার চূড়ান্ত পরিণতি। শুধু কথায় কিছু হয় না, কাজে ফলপ্রসূতা আনতে হয়। জাতির নেতৃত্ব যদি শুধু কথার ওপর নির্ভর করে থাকে, তবে তা শিগগিরই মূর্খতায় পরিণত হবে। জাতীয় নাগরিক কমিটির কর্মীরা এ বিষয়টি গভীরভাবে উপলব্ধি করে। তারা বিশ্বাস করে, প্রতিটি পরিকল্পনা, প্রতিটি আন্দোলন, প্রতিটি পদক্ষেপকে কার্যকর করতে হবে। তবেই তা জাতির কল্যাণে সহায়ক হবে।

ভবিষ্যতের রাষ্ট্রকল্প বাস্তবায়নে

জাতীয় নাগরিক কমিটি আগামী দিনের রাষ্ট্রকে রূপ দিতে এক সঙ্গে কাজ করার সংকল্প নিয়ে এগিয়ে চলছে। রাষ্ট্রের উন্নতি ও জনগণের কল্যাণের জন্য একতা, সহানুভূতি ও জাতির প্রতি দায়িত্ববোধ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের উচিত নিজেদের অদক্ষতা ও দুর্বলতা না দেখে আমাদের শক্তি ও সম্ভাবনাকে চিনতে শেখা। শুধু একত্রে লড়াই করলেই আমরা ভবিষ্যতের রাষ্ট্রের কাঙ্ক্ষিত রূপ তৈরি করতে পারব। এখানে সবার কণ্ঠে একযোগী আন্দোলন ও পরিকল্পনার প্রয়োগ জরুরি। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক নেতৃত্ব, যা আমাদের দেশে প্রকৃত পরিবর্তন আনতে সক্ষম।

জাতীয় নাগরিক কমিটি দেশের প্রতিটি নাগরিককে তাদের অধিকার ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করছে। তারা বিশ্বাস করে, জনগণের শক্তির ওপর ভিত্তি করেই একটি রাষ্ট্রের উন্নতি সম্ভব। জনগণ যদি তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রাম করতে প্রস্তুত হয়, তবে কোনো শক্তিই তাদের অগ্রযাত্রা থামাতে পারবে না। এই কমিটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রত্যেক নাগরিককে তাদের সাংবিধানিক অধিকার সম্পর্কে জানানো এবং তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে শুধু রাষ্ট্র নয়, জনগণও সমান গুরুত্ব পাবে।

নাগরিক সচেতনতা ও জাতির উন্নতি

এ অবস্থায় আমাদের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব, নাগরিক কমিটির উদ্যোগে অংশগ্রহণ করা, তাদের সহযোগিতা করা এবং নিজ নিজ এলাকার মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা। এই সচেতনতা রাষ্ট্রের উন্নয়নের পথকে সুগম করবে। তাতে করে রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হবে। একত্রে কাজ করার মাধ্যমে আমরা দেশকে একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং সুশাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করতে পারি।

শেষ কথা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ প্রজন্মের নেতা, সমাজ কর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব— সবার জন্যই সময় এসেছে নিজেকে আরও উন্নত, কর্মঠ ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলার। জাতীয় নাগরিক কমিটি এ ধরনের মানসিকতা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, যেখানে আমাদের লক্ষ্য শুধুমাত্র রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং এক একটি অগ্রসর জাতি গঠনের দিকেও লক্ষ্য রাখা হচ্ছে।

‘একসঙ্গে লড়ব, ইনশাআল্লাহ’— এই স্লোগান আমাদের পথপ্রদর্শক, যা প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে লুকানো শক্তি উদঘাটন করতে সাহায্য করবে। মেধা, সাহস ও কর্ম— এই তিনটি মন্ত্র নিয়ে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তবেই আমরা আমাদের প্রিয় জাতির উন্নত ভবিষ্যত গড়তে পারব।

লেখক: কেন্দ্রীয় সংগঠক, জাতীয় নাগরিক কমিটি

[email protected]

ad
ad

মতামত থেকে আরও পড়ুন

যুক্তরাজ্যে পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে পারবে অন্তর্বর্তী সরকার?

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বর্তমানে যুক্তরাজ্যে সফরে রয়েছেন। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সফরে বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়কে প্রাধান্য দেওয়া হবে।

৮ দিন আগে

সাম্রাজ্যবাদ: ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি থেকে হালের ডিপ স্টেট— একই মুদ্রার এ পিঠ-ও পিঠ!

হালের সাম্রাজ্যবাদী ঔপনিবেশবাদের নয়া কৌশলে দাবার ছকের নতুন গুটি জর্জ সোরেসের ‘ডিপ স্টেট’! এ কালের কাবলিওয়ালারা আক্রান্ত নিজ দেশীয় দোসরদের মাধ্যমেই সেই সাম্রাজবাদের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে দেশে দেশে। আর ডিপ স্টেটের প্রভুরা দেশীয় দোসরদের ব্যবহারের পর কাজ শেষে ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। তবে ততদিনে সাড়ে সর্

১৪ দিন আগে

হাইকোর্টের যে রায় ঘিরে আন্দোলনে শেখ হাসিনার পতন

এখন থেকে ঠিক এক বছর আগে, অর্থাৎ গত বছরের পাঁচই জুন হাইকোর্ট যখন সরকারি চাকরিতে কোটা বহালের পক্ষে রায় ঘোষণা করেছিল, তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কেউ তখন ধারণাও করতে পারেনি যে পরবর্তী দুই মাসের মধ্যে তাদের টানা দেড় দশকের শাসনের পতন ঘটে যাবে।

১৫ দিন আগে

শিক্ষায় অর্থায়ন: নিম্নমুখী বরাদ্দে ঊর্ধ্বমুখী অর্জন সম্ভব নয়

বৈষম্যের দেয়ালে ঘেরা এই বিশ্বে এখনও ২০ কোটির বেশি শিশু রয়েছে সাধারণ শিক্ষার বাইরে। যারা যাচ্ছে, তারাও আবার অনেক বিদ্যালয়ে গিয়ে যা শেখার তা শিখছে না। এভাবে চলতে থাকলে ২০৩০ সালে নিম্ন আয়ের দেশে মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষায় দক্ষতা অর্জন করতে পারবে, আবার কম আয়ের দেশে এই সংখ্যা আরও

১৮ দিন আগে