ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ৮, জবাব দিয়েছে পাকিস্তান\n
দেশভাগের এত বছরেও দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের উত্তেজনা থামেনি, বরং বেড়েছে। সেরকমই কিছু উত্তেজনাপূর্ণ ও রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সময় এবং সংঘাতগুলো নিম্নে তুলে ধরা হলো:গ
প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধ (১৯৪৭)
১৯৪৭ সালের শেষদিকে, হিমালয় অঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়। জাতিসংঘের সমর্থনে ১৯৪৯ সালের জানুয়ারিতে ৭৭০ কিলোমিটার (৪৭৮ মাইল) দীর্ঘ একটি যুদ্ধবিরতি রেখা টানা হয়, যা কার্যত কাশ্মীরকে বিভক্ত করে দেয়। এই সীমারেখা \'লাইন অব কন্ট্রোল\' নামে পরিচিত এবং এ সীমান্ত রেখার দুই পাশেই দুই দেশের সামরিক নিরাপত্তা অত্যন্ত কঠোর।
কাশ্মীরের প্রায় ৩৭ শতাংশ পাকিস্তানে ও ৬৩ শতাংশ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তবে উভয় দেশই পুরো অঞ্চলটির মালিকানা দাবি করে আসছে।
দ্বিতীয় কাশ্মীর যুদ্ধ (১৯৬৫)
কাশ্মীর দখলের উদ্দেশ্যে ১৯৬৫ সালের আগস্টে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। সাত সপ্তাহ পর সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় একটি যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে যুদ্ধটির আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে। তবে যুদ্ধটি কোনো চূড়ান্ত ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ (১৯৭১)
১৯৭১ সালের মার্চে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য শুরু হয় বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্বপাকিস্তান) মুক্তিযুদ্ধ। এ যুদ্ধে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে সমর্থন ও সহায়তা দেয় ভারত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারত। বাংলাদেশের ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রাণ হারায় ৩০ লাখ মানুষ।
পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা (১৯৭৪)
১৯৭৪ সালে ভারত প্রথম বারের মতো পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে পাকিস্তান প্রথমবার প্রকাশ্যে পারমাণবিক পরীক্ষা চালায় ১৯৯৮ সালের মে-তে। ওই বছর ভারত পাঁচটি এবং পাকিস্তান ছয়টি পরীক্ষা চালায়।
বিশ্বের ষষ্ঠ ও সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে তারা আন্তর্জাতিক মহলে উদ্বেগ তৈরি করে এবং বেশ কয়েকটি নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে।
কাশ্মীরে বিদ্রোহ (১৯৮৯)
১৯৮৯ সালে ভারতের শাসনের বিরুদ্ধে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে এক সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হয়। পরবর্তী কয়েক বছরে নিরাপত্তা বাহিনী ও কাশ্মীরি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাতে হাজার হাজার যোদ্ধা ও সাধারণ নাগরিক মারা যান। এই সংঘাতের দুই পক্ষ থেকেই ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়।
১৯৯০ সাল থেকে হাজার হাজার কাশ্মীরি হিন্দু প্রতিশোধমূলক হামলার আশঙ্কায় কাশ্মীর ছেড়ে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
কারগিল যুদ্ধ (১৯৯৯)
১৯৯৯ সালে পাকিস্তান সমর্থিত বিদ্রোহীরা বিতর্কিত কাশ্মীর সীমান্ত অতিক্রম করে কারগিলের বরফে ঢাকা পাহাড়ি অঞ্চল দখল করে নেয়। সে অঞ্চল মূলত ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিল।
১০ সপ্তাহের চেষ্টায় সে অঞ্চল পুনরায় দখল করে ভারতীয় সেনাবাহিনী, হটিয়ে দেয় অনুপ্রবেশকারীদের। এ সংঘাতের অবসান ঘটলেও উভয় পক্ষের প্রায় ১,০০০ সেনা ও যোদ্ধা এতে প্রাণ হারায়। যুক্তরাষ্ট্রের চাপেই শেষ পর্যন্ত এই যুদ্ধ থামে।
তবে ২০০১ ও ২০০২ সালে ভারতে একাধিক হামলা হয়, যার জন্য পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোকেই দায়ী করতে থাকে ভারত। এর জেরে দুই দেশের সীমান্তে আবারও বিপুল সংখ্যক সেনা মোতায়েন করা হয়। ২০০৩ সালে সীমান্তজুড়ে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করা হয়। পরের বছর একটি শান্তি চুক্তির প্রক্রিয়া শুরু হলেও তা কোনো সুস্পষ্ট ফলাফল ছাড়াই শেষ হয়।
মুম্বাইয়ে হামলা (২০০৮)
২০০৮ সালের নভেম্বরে একটি সশস্ত্র দল ভারতের মুম্বাই শহরে হামলা চালিয়ে ১৬৬ জনকে হত্যা করে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাকে এই হামলার জন্য দায়ী করে ভারত এবং শান্তি আলোচনা স্থগিত করে দেয়।
তবে ২০১১ সালে দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ পুনরায় শুরু হয়, তবে পরিস্থিতি বিচ্ছিন্ন লড়াইয়ের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। ভারতীয় সেনারা কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অবস্থান নিশ্চিহ্ন করতে আন্তঃসীমান্ত অভিযান চালায়। এর মধ্যে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে অপ্রত্যাশিতভাবেই পাকিস্তান সফরে যান ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
সার্জিক্যাল স্ট্রাইক (২০১৬)
কাশ্মীরকে ঘিরে চিরবৈরী ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে লড়াই হয়েছে। তবে সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশের ভেতরে গিয়ে হামলা সেবারই প্রথম। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালায় ভারত। এর সপ্তাহ দু-এক আগে সীমান্তে ভারতীয় সেনা ফাঁড়িতে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হামলায় ১৯ জওয়ান নিহত হন। ভারত জানায়, পাকিস্তানের কাশ্মীরের জঙ্গিদের ওপর ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালিয়েছে তারা। যদিও এ রকম কোনো হামলার কথা অস্বীকার করে ইসলামাবাদ।
পুলওয়ামা সংকট (২০১৯)
২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি কাশ্মীরের পুলওয়ামায় এক আত্মঘাতী বোমা হামলায় ভারতীয় একটি আধাসামরিক বাহিনীর ৪১ জওয়ান নিহত হন। পাকিস্তানভিত্তিক জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে। পরে কাশ্মীরের নিয়ন্ত্রণরেখা পেরিয়ে পাকিস্তান অংশে বিমান হামলায় চালায় ভারতীয় বিমানবাহিনী। এতে ভারত হতাহতের দাবি করলেও পাকিস্তান তা অস্বীকার করে।
মাউন্টব্যাটেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী ব্রিটিশ আইনজীবী স্যার শেরিল র্যাডক্লিফ ‘র্যাডক্লিফ লাইন’ নামক ভারত বিভক্তের যে সীমান্তরেখা এঁকেছিলেন, তার জন্য তাঁকে মাত্র পাঁচ সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছিল। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে কাশ্মীর অঞ্চলের সীমান্তরেখা নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে তিনি যে ভুলটি করে ফেলেন, তার খেসারত আজও দিয়ে চলেছে ভারত ও পাকিস্তানের বাসিন্দারা।
কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন প্রত্যাহার (২০১৯)
২০১৯ সালে কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলায় ৪১ জন আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী। আর এ হামলার পালটা প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় ভারত। ভারত সরাসরি পাকিস্তানের বালাকোটে বিমান হামলা চালায়। ১৯৭১ সালের পর পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এটি ছিল ভারতের প্রথম সামরিক অভিযান। জবাবে পাকিস্তানও পাল্টা বিমান হামলা চালায়।
এ সংঘাত থেকে দুই দেশের মধ্যে পাল্টাপাল্টি আকাশপথে যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখা দেয়। সে বছরই ভারত হঠাৎই কাশ্মীরের সংবিধানের সীমিত স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে এবং হাজার হাজার রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে গ্রেপ্তার করে। সূত্র : আল-জাজিরা