গাজার পথে গিয়ে আক্রান্ত, গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা কী

ডেস্ক, রাজনীতি ডটকম
গাজায় গ্রাণ নিয়ে রওয়ানা হয়েছিল গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। ছবি: সংগৃহীত

ত্রাণ নিয়ে গাজার পথে গিয়ে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা। সুইডেনের জলবায়ু কর্মী গ্রেটা থুনবার্গসহ জাহাজে থাকা কর্মীদের আটক করে নেওয়া হয়েছে ইসরায়েলের একটি বন্দরে। এ ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে চলছে নিন্দার ঝড়। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার সমালোচনায় মুখর হয়েছেন মানবাধিকার কর্মীসহ অনেকেই।

কিন্তু ইসরায়েলি বাহিনীর হামলার শিকার হয়ে আলোচনায় আসা এই গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা প্রকৃতপক্ষে কী? এটি কারা পরিচালনা করছে? কী এর উদ্দেশ্য?

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার নিজস্ব ওয়েবসাইটের দেওয়া তথ্য বলছে, এটি মূলত ২০২৫ সালেই গঠিত একটি আন্তর্জাতিক বেসামরিক প্রতীকী নৌ বহর। এর মূল লক্ষ্য গাজার ওপর ইসরায়েলের আরোপিত সামুদ্রিক অবরোধ ভেঙে দিয়ে গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া।

আয়োজকরা বলছেন, এটি একটি অহিংস (নন-ভায়োলেন্ট) মানবকল্যাণ উদ্যোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চিকিৎসক, আইনজীবী, সাংবাদিক, পরিবেশ কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবী মিলিয়ে বিভিন্ন দেশের বন্দর থেকে জাহাজ ছেড়ে সমুদ্র পথে গাজার দিকে এরই মধ্যেই যাত্রা করেছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নিয়ে।

ফ্লোটিলা ইংরেজি শব্দের অর্থ নৌ বহর, অর্থাৎ একাধিক নৌ যানের সমন্বয়ে গঠিত বহর। এই ফ্লোটিলার নামে ব্যবহৃত ‘সুমুদ’ শব্দটি আরবি ভাষা থেকে নেওয়া। এর অর্থ অটলতা বা ধৈর্য, যা উদ্যোগের রাজনৈতিক ও মানবিক দৃঢ় প্রত্যয়ের প্রতীককে প্রতিফলিত করে।

ফ্লোটিলাটি বিশ্বব্যাপী সমন্বয় করে তৈরি করা হয়েছে, যাতে রয়েছে ৫০টির মতো ছোট-বড় নৌ যান। কয়েক শ স্বেচ্ছাসেবক অংশ নিয়েছেন এই ফ্লোটিলায়। সংগঠকদের দাবি, এসব স্বেচ্ছাসেবকের বাইরে লক্ষাধিক মানুষ অনলাইনে নিবন্ধিত হয়ে যুক্ত রয়েছেন এই উদ্যোগের সঙ্গে।

গ্রেটা থুনবার্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অধিকার কর্মীরা রয়েছেন সুমুদ ফ্লোটিলায়। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেটা থুনবার্গসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অধিকার কর্মীরা রয়েছেন সুমুদ ফ্লোটিলায়। ছবি: সংগৃহীত

আয়োজকরা জানিয়েছেন, এই ফ্লোটিলা গঠনে তাদের উদ্দেশ্য ছিল মূলত দুটি। প্রথমত, ইসরায়েল যে গাজায় সমুদ্রপথে অবরোধ জারি রেখেছে সেই অবরোধ ভেঙে দিয়ে সেখানে খাদ্য, ওষুধ ও অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম গাজায় পৌঁছে দেওয়া। দ্বিতীয়ত, এই নৌ বহরের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণ করা।

অবশ্য এই নৌ বহর অভীষ্ট গন্তব্যে পৌঁছাতে গেলে তা রাজনৈতিক ও সামরিক টানাপোড়েনের মুখোমুখি হবে, সেটিই ছিল স্বাভাবিক। কারণ ইসরায়েল সমুদ্রপথে কড়া নিরাপত্তা আরোপ করে রাখে সবসময়। এসব কারণে ইসরায়েল এই ফ্লোটিলাকে ‘প্ররোচনামূলক’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

এসবকিছুর মধ্যেই গ্লোবাল ফ্লোটিলা সুমুদ রওয়ানা দেয় গাজার পথে। বুধবার (১ অক্টোবর) ও বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইসরায়েলি নৌ বাহিনী এই নৌ বহরকে বাধা দিয়েছে। নৌ সেনারা কয়েকটি জাহাজে উঠে শতাধিক মানবাধিকার কর্মীকে আটক করে নিয়ে গেছে তাদের বন্দরে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সুইডিশ পরিবেশ অধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গও।

স্বাভাবিকভাবেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের এসব অ্যাকটিভিস্টের নৌ বহরে হামলা ও তাদের আটকের ঘটনায় বিশ্ব জুড়ে নিন্দা-প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। কয়েকটি দেশের কূটনৈতিক পদক্ষেপও তীব্র হয়েছে। ইসরায়েল অবশ্য বলছে, নৌ বহর থেকে এসব অধিকার কর্মীকে ‘নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়া হয়েছে’।

এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া বিভক্ত হলেও স্পষ্টভাবে বলা যায়— অভিযানটি মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নতুন জটিলতা যোগ করেছে। কিছু দেশ ও মানবাধিকার সংস্থা ইসরাইলের নৌ বাহিনীর কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক সমুদ্রবিধি ও মানবিক নীতির পরিপন্থি বলে সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে কিছু রাজনীতিবিদ ও সরকার এ ধরনের সমুদ্র অভিযানকে ঝুঁকিপূর্ণ ও নীতিবিরোধী হিসেবে অভিহিত করেছেন।

একই সময়ে ফ্লোটিলার সংগঠকদের দাবি, তারা সরাসরি যুদ্ধারোপ কিংবা সশস্ত্র সংঘর্ষে জড়াতে চায় না। তারা মানবিক ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার এক শান্তিপূর্ণ উপায় হিসেবে কেবল নৌ বহরটি পরিচালনা করতে চেয়েছে।

তবে ফ্লোটিলা ইস্যুটি সরাসরি ত্রাণ ব্যবসায় বা নৌ সীমাগত বিরোধই নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন, গণতান্ত্রিক বিক্ষোভের সীমা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে সুশীল সমাজকে কার্যকর করার সক্ষমতা নিয়ে ব্যাপক রাজনৈতিক ও নৈতিক বিতর্ক গড়ে তুলেছে।

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এই অভিযান সরাসরি গাজার ক্রান্তিকালে মানবিক অবস্থার ওপর আলোকপাত করেছে। আবার কিছু রাজনীতিবিদ ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ বলেছেন, এমন উদ্যোগ স্থায়ী সমাধান তৈরিতে সীমিত ভূমিকা রাখতে পারে এবং তা পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত করতে পারে।

তবে গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়ার প্রতীকী নৌ বহর বা ফ্লোটিলা সুমুদ অভিযান এখন শেষ পর্যায়ে। ছোট ছোট জাহাজগুলোর বেশির ভাগই এখন ইসরায়েলি সেনাদের নিয়ন্ত্রণে। অল্প যে কয়টি এখনো সচল আছে, সেগুলোর পেছনে ছুটছে ইসরায়েলি নৌ বাহিনী।

বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি গণমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলি নৌ বাহিনী আন্তর্জাতিক সমুদ্রসীমায় অবস্থানরত জাহাজগুলোকে আটক করার অভিযান অব্যাহত রেখেছে। রাতভর অভিযানের পর তা বৃহস্পতিবার সকালেও চলছিল।

ইসরায়েলি সেনাদের দাবি— গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার ৪৭টি নৌযানের ৪০টিই তাদের নিয়ন্ত্রণে। ওই জাহাজগুলো থেকে দুই শতাধিক মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলের আশদোদ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সেখান থেকে তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার দাবি নিয়ে শুরু হলেও দ্রুত আন্তর্জাতিক কূটনীতি, নৌ বাহিনীর কার্যক্রম ও গণআন্দোলন-প্রতিক্রিয়ার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। ভবিষ্যতে এর ধারাবাহিকতা ও প্রভাব কেমন হবে— তা নির্ভর করবে আন্তর্জাতিক আইনি বিশ্লেষণ, কূটনৈতিক হস্তক্ষেপ ও সংঘটিত কৌশলগত সিদ্ধান্তের ওপর।

ad
ad

বিশ্ব রাজনীতি থেকে আরও পড়ুন

ইন্দোনেশিয়ায় স্কুল ধসে ৩ শিক্ষার্থী নিহত, নিখোঁজ ৯১

উদ্ধারকর্মীরা জানাচ্ছেন, বিশেষ ক্যামেরা ব্যবহার করে কয়েকজন জীবিত থাকার সংকেত পাওয়া গেছে। কিন্তু ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ভারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ফলে হাতে হাতে ধ্বংসস্তূপ সরাতে হচ্ছে।

৯ ঘণ্টা আগে

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ৫৩ জন নিহত

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ এক্সে লিখেছেন, গাজা সিটিতে থেকে যাওয়া সবাইকে “সন্ত্রাসী কিংবা সন্ত্রাসীদের সমর্থক” হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

৯ ঘণ্টা আগে

এ মাসেই জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনী প্রধানদের সম্মেলন ভারতে

লেফটেন্যান্ট জেনারেল রাকেশ জানান, এ সম্মেলন শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নেওয়া দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সংলাপ, সহযোগিতা ও বোঝাপড়া বাড়ানোর এক অনন্য প্ল্যাটফর্ম হবে। ভারত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষায় দীর্ঘদিন ধরেই অন্যতম বৃহৎ ও ধারাবাহিক অবদান রাখা দেশ। এ সম্মেলনের মাধ্যমে ভারত কেবল তার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে

১৯ ঘণ্টা আগে

ম্যানচেস্টারে ইহুদি উপাসনালয়ে ছুরিকাঘাতে নিহত ২

বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) ইহুদিদের পবিত্রতম দিন ইয়ম কিপুরে ইহুদি উপসনালয় সিনাগগে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজনকেও গুলি করা হয়েছে।

১ দিন আগে