top ad image
top ad image
home iconarrow iconবিশ্ব রাজনীতি

যুদ্ধ হলে কী করবে দেশবাসী— আজ মহড়ায় শেখাবে ভারত

যুদ্ধ হলে কী করবে দেশবাসী— আজ মহড়ায় শেখাবে ভারত
যুদ্ধ হলে করণীয় কী, তা জানাতেই বুধবার মহড়ার আয়োজন করেছে ভারত সরকার। আনন্দবাজার থেকে নেওয়া প্রতীকী ছবি

কাশ্মিরের পহেলগামের হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চড়ছেই। দুই দেশের সরকারি পর্যায় থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতাদের কণ্ঠেও যুদ্ধের সুর রয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই যুদ্ধের সময় সাধারণ নাগরিকদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করতে ‘যুদ্ধের মহড়া’ আয়োজন করেছে ভারত।

আজ বুধবার (৭ মে) ভারতের সব রাজ্যে এই ‘মক ড্রিল’ বা যুদ্ধের মহড়া হবে। ভারতের গণমাধ্যমগুলো বলছে, দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলোতে ‘সিভিল ডিফেন্স’ বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগগুলো এই যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রস্তুতির মহড়া পরিচালনা করবে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ভারতের হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হলে বা বিমান হানা বা বন্দুকধারীদের হামলা হলে সাধারণ নাগরিকদের করণীয় কী হবে, তারই মহড়া হবে আজ।

এই মহড়া প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, যুদ্ধ বাঁধলে সামরিক বাহিনী তো থাকবেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বসে বসে দেখবে না। রাষ্ট্রের প্রতি তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেসব দায়িত্বই স্মরণ করিয়ে দেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।

মহড়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট সচিব গোভিন্দ মোহন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন মঙ্গলবার দুপুরে।

মহড়ায় কী হবে?

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে ভারতের ২৪৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলার শহর থেকে গ্রাম— সব এলাকাতেই বুধবার মহড়া চলবে। বিমান হামলা হলে ঠিকমতো সাইরেন বাজিয়ে সংকেত দেওয়া যাচ্ছে কি না, কন্ট্রোল রুমে কীভাবে কাজ হবে— সবই মহড়ার সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। খতিয়ে দেখা হবে বিমান বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা।

শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের কী করণীয় হবে, সেটাও বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেওয়া হচ্ছে। বিমান হামলা হলে ‘ব্ল্যাক আউট’ বা বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার মহড়াও হবে।

অন্যদিকে বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ ঠিক মতো আছে কি না, আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না অথবা উদ্ধারকাজ ঠিক মতো করা যাচ্ছে কি না— এগুলোও মহড়ার মাধ্যমে দেখে নেবে সরকার।

গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলোকে অতি দ্রুত রং করে ‘ক্যামোফ্লেজ’ করে দেওয়ার মহড়াও হবে বুধবার।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার সরকারি কর্মকর্তা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ড, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা এনসিসির শিক্ষার্থীসহ নেহরু যুব কেন্দ্র ও স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মহড়ায় অংশ নেওয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।

ভারতীয় বার্তা সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে। কোথাও আগুন নেভানোর ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোথাও উদ্ধারকারী দল বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিমান হামলার সাইরেন বাজলেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টেবিলের নিচে চলে যেতে বলা হচ্ছে— এমন নানা তথ্য দিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।

নাগরিকদের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে

যুদ্ধকালীন মহড়ার দিনে কোথাও বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠতে পারে, কোথাও বন্দুকধারীদের সাজানো হামলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

সরকার মনে করিয়ে দিচ্ছে, কেবল সরকারি ঘোষণার দিকেই যেন মানুষ নজর রাখেন। আতঙ্কিত না হতেও বলা হয়েছে মানুষকে। পুলিশ, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ ও স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশ মেনে চলতে বলা হচ্ছে।

কিছু এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সে সব এলাকার দিকে না যেতে বলা হয়েছে। কিছু ওষুধ, টর্চ, জলের বোতল ও ফার্স্ট এইড কিট হাতের কাছে রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।

মহড়া কেন দরকার?

নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সাবেক কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এ ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়ার দুটি মূল উদ্দেশ্য আছে— প্রথমত, পাকিস্তানের ওপরে এক ধরনের মানসিক চাপ তৈরি করা যে ভারতে মক ড্রিল হচ্ছে, তার মানে ভারত কোনো একটা সময় সামরিক পদক্ষেপ হয়তো নেবে। দ্বিতীয়ত কোনো হামলা হলে সাধারণ মানুষ যেন সতর্ক থাকতে পারেন, তাদের কর্তব্যগুলো কী, সেটা অবহিত করিয়ে দেওয়া।

একমাত্র ইসরায়েলে অনেক দশক ধরে এ ধরনের মক ড্রিল হয়ে আসছে জানিয়ে দীপাঞ্জন বলেন, এটা ভারতের নাগরিকদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে নিয়মিত ড্রিল হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষকেও আপৎকালীন পরিস্থিতির সঙ্গে একাত্ম করিয়ে নেওয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।

এর আগে সর্বশেষ যে যুদ্ধ হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে, সেই কারগিল যুদ্ধের সময়ে এ ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়া দেওয়া হয়নি। তবে ১৯৬৫ ও ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময়ে ব্ল্যাক আউট করে দেওয়া হতো এবং বিমান হামলার সংকেত দিয়ে সাইরেন বাজানো হতো।

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে

পহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে পৌঁছেছে। দুই দেশ থেকেই লাগাতার বিবৃতি-পালটা বিবৃতি দেওয়া হচ্ছে।

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রোববার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, আপনারা যেরকম চাইছেন, সেটাই করা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে।

একই সন্ধ্যায় দিল্লিতে সনাতন সংস্কৃতি জাগরণ মহোৎসবের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজনাথ সিং। সেখানে তিনি পহেলগাম হামলা বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু নানা ইঙ্গিত দিয়েছেন ভাষণে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সে দেশের অনেক রাজনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন যে ভারত হয়তো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে। গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, পাকিস্তানের জল বন্ধ করে দেওয়া বা অন্য খাতে বইয়ে দেওয়ার জন্য কোনো অবকাঠামো যদি তৈরি করা হয়, তাহলে সেটা ধ্বংস করে দেওয়া হবে।

পহেলগামের হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করে দেওয়া এবং পাকিস্তান থেকে সব ধরনের রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার মতো ব্যবস্থা।

অন্যদিকে জাহাজ চলাচল দপ্তরের মহানির্দেশক নির্দেশ দিয়েছেন যে পাকিস্তানের কোনো জাহাজ ভারতের কোনো বন্দরে ঢুকতে পারবে না।

r1 ad
top ad image