বিজ্ঞান
কান্নার বৈজ্ঞানিক কারণ
কান্নার অনুভূতির জন্ম মস্তিষ্কে। চোখের কাছাকাছি অঞ্চলে মস্তিষ্কের যে অংশটি, তার নাম ল্যাক্রিমাল গ্ল্যান্ড। সেখান থেকেই প্রোটিন, মিউকাস বা তেলতেলে নোনা জল তৈরি হয়। এগুলো চোখ দিয়ে অশ্রুর আকারে বেরিয়ে আসে। এটিকেই আসলে কান্না বলে।
মস্তিষ্কে সেরিব্রাম নামে একটা অংশ আছে, সেখানে দুঃখ জমা হয় বা দুঃখের অনুভূতি তৈরি হয়। সেই অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ হলো কান্না। দুঃখের বা মন খারাপের কারণে শীররে একধরনের টক্সিন বা ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ তৈরি হয়। সেগুলো বের করে দেয়ার জন্য কান্নার প্রয়োজন। চোখের জলের সঙ্গে সেই ক্ষতিকর পদার্থ বেরিয়ে আসে।
কাঁদার যেমন ধরন আছে, দুঃখ, ব্যথা ছাড়াও অনেক সময় আমরা কেঁদে ফেলি। যেমন চোখে ঝাল বা পেঁয়াজের কষ লাগলে পানি চলে আসে। এটাকে আমরা কান্না বলি না অবশ্য। কিন্তু কান্নার বাহ্যিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে এর মিল আছে।
স্রেরিব্রাম অংশ থেকে এন্ডেক্রিন সিস্টেম বা অন্তঃক্ষরা পদ্ধতিতে হরমোন নির্গত হয়। দুঃখের কারণে জমা হওয়া ক্ষতিকর পদার্থগুলো বহন করে চোখের আশপাশের অঞ্চলে নিয়ে যায় এই হরমোনগুলো। সেখান থেকে চোখের জলের সঙ্গে টক্সিনগুলো বেরিয়ে আসে কান্নার আকারে। এটিই আসলে আবেগীয় কান্না। যন্ত্রণার বা খুশির কান্নাও একই পদ্ধতিতে আসে।
রিফ্লেক্স নামে আরেক ধরনের কান্না আছে। এই কান্নাকে অবশ্য সত্যিকার কান্না বলা যায় না। হঠাৎ ব্যথা পেলে, কিংবা ঝাঁঝালো কোনো বস্তু যেমন পেঁয়াজ বা সর্ষের তেলের কিংবা ধুলাবালি নাক বা চোখ দিয়ে ঢুকলে এ ধরনের কান্না তৈরি হয়। এসব ঝাঁঝালো বস্তু চোখে ঢুকলে চোখের কর্নিয়ায় যে স্নায়ুতন্ত্র আছে, সেটাতে বার্তা পাঠায়। বদলে মস্তিষ্কও প্রতিরক্ষার জন্য হরমোন পাঠিয়ে দেয়ে চোখের পাতায়। চোখে সেগুলো অশ্রুর মতো জমা হয়। ধুলাবালি বা ক্ষতিকর পদার্থ বয়ে নিয়ে চোখ থেকে বেরিয়ে আসে সেই অশ্রু।
আপনজনের কান্না দেখে আমরা যে ভয় পেয়ে যাই, সেটা আসলে অমূলক। কান্নার মাধ্যমে ক্ষতিকর পদার্থই বেরিয়ে আসে চোখ থেকে। কান্নার পর মাথা অনেক সজীব হয়। ভালো লাগার অনুভূতি তৈরি হয়। তাই ক্ষণস্থায়ী কান্নাকে ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।