top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

ওয়েরস্টেডের কম্পাস

ওয়েরস্টেডের কম্পাস
শিল্পীর চোখে ওয়েরস্টেডের সেই ঐতিহাসিক পরীক্ষণ

১৮২০-এর দশক। ডেনিস বিজ্ঞানী হ্যান্স ক্রিশ্চয়ান ওয়েরস্টেড তখন কোপেনহেগেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। পদার্থবিজ্ঞানের। সুতরাং বিদ্যুতের কারবারও পড়াতে হয় শিক্ষার্থীদের। যন্ত্রপাতির সাহায্যে পরীক্ষা করেও দেখান।

একদিন ক্লাসে সেভাবেই পড়াচ্ছিলেন।

পরিবাহীর তারের মধ্যে দিয়ে কীভাবে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় সেই বিষয়টাই দেখাচ্ছিলেন ওয়েরস্টেড। তখন ক্লাসরুমের ডায়াসে একটা কম্পাস লাগানো ছিল। তারের ভেতর দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলো, তখন যেন সামান্য নড়ে উঠল কম্পাসের কাঁটাটা। ওয়েরস্টেড ভাবলেন ভুল দেখলেন কী-না।

আবার পরীক্ষা করে দেখলেন। আবারও একই ঘটনা।

কেন ঘটল এ ঘটনা? বুঝতে সময় লাগল ওয়েরস্টেডের। ভাবতে লাগলেন তিনি। একটা সমাধানও উঁকি দিল তাঁর মনে। তবে কি বিদ্যুৎ ও চুম্বকের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে?

বলতে পারেন, এখানে চুম্বক এলো কোথা?

কম্পাসের যে কাঁটা, সেটা আসলে এক ধরনের দণ্ড চুম্বক। যেকোনো চুম্বককে ঝুলিয়ে রাখলে সেটা উত্তর আর দক্ষিণমুখি হয়ে থাকে। এ ব্যাপারটা যখন জানতে পারে মানুষ, তখন চুম্বক তরলে ভাসিয়ে কম্পাস তৈরি করার উপায় উদ্ভাবণ করে।

বাইরের কোনো প্রভাব না থাকলে চুম্বক সবসময় উত্তর-দক্ষিণমুখি হয়ে থাকে। তাদের মুখ এমনিতে অন্যদিকে ঘুরবে না। চুম্বকের কাছে যদি আরেকটা চুম্বক বা চৌম্বক পদার্থ নড়াচড়া করে, তবেই কেবল চুম্বকের মুখ ঘুরে যেতে পারে। ওয়েরস্টেড সে সময় কোনো চুম্বক বা চৌম্বক পদার্থ নিয়ে কাজ করেননি। তবু কাঁটা নড়ল কেন? এই বিষয়টাই ওয়েরস্টেডকে ভাবিয়ে তুলেছিল।

সে সময় বিদ্যুৎবিজ্ঞানের প্রবাদ পুরুষ ছিলেন বিট্রিশ বিজ্ঞানী উইলিয়াম গিলবার্ট। অবশ্য ওয়েরস্টেডের সময় তিনি জীবিত ছিলেন না। তিনি বিদ্যুৎ বিষয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা লিখে গিয়েছিলেন। সেগুলোকে সবাই মেনে চলত। গিলবার্টের ধারণা ছিল, বিদ্যুৎ আর চুম্বকের মধ্যে কোনো সম্পর্ক নেই। ওয়েরস্টেড বুঝতে পারলেন, গিলবার্টের ধারণায় নিশ্চয়ই ভুল ছিল। তিনি নিজের পর্যবেক্ষণ আর এর পেছনের সম্ভ্যাব্য কারণ বিষয়ে একটা প্রবন্ধ লিখলেন। সেটা ছাপা হলো জার্নালে। ফলে এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠল ইউরোপের বিজ্ঞানীদের মধ্যে। অনেকেই ওয়েরস্টেডের সঙ্গে একমত, অনেকে আবার গিলবার্টের তত্ত্বের বিরোধিতা করার পক্ষপাতি নন।

এই আলোচনার ঝড় বন্ধ করার একটাই উপায় ছিল। ওয়েরস্টেডেরে মতো করে আরেকটা পরীক্ষা করা। সেই কাজটাই করলেন ফরাসী বিজ্ঞানী আন্দ্রে মরি অ্যাম্পিয়ার। যাঁর নামেই তড়িৎপ্রবাহের একক ‘অ্যাম্পিয়ার’-এর নামকরণ করা হয়।

অ্যাম্পিয়ার ওয়েরস্টেডের পরীক্ষাটা করেন, তবে উল্টোভাবে। তিনি দুটো আলাদা আলাদা তার নিলেন। তার দুটো খুব কাছাকাছি রাখলেন। তারপর তার দুটোর ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করেন, একই সঙ্গে।

ওয়েরস্টেড প্রথমবার দুই তারের ভেতর দিয়ে একই দিক থেকে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করলেন। তখন তার দুটো পরস্পরকে বিকর্ষণ করল। পরের বার দুেই তারের ভেতরে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হলো পরস্পরের বিপরীত দিকে। তখন তার দুটো পরস্পরকে বিকর্ষণ করল।

এই পরীক্ষায় কোনো চুম্বক রাখা হয়নি। অথচ বিদ্যুৎ প্রবাহের ফলে তার দুটো চুম্বকের মতো আচরণ কেরছে। এর মানে কী?

অ্যাম্পিয়র নিশ্চিত হলেন, নিশ্চয়ই বিদ্যুৎ ও চুম্বকের মধ্যে কোনো সম্পর্ক আছে। তিনি একটা সিদ্ধান্তে এলেন, পরিবাহী তারের ভেতর দিয়ে যখন বিদ্যুৎ প্রবাহিত করা হয়, তখন এর চারপাশে চুম্বকক্ষেত্রের সৃষ্টি হয়। এই চুম্বকশক্তির কারণেও তারগুলো পরস্পরকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে। অ্যাম্পিয়ার নিশ্চত হলেন, ঠিক এ কারণেই ওয়েরস্টেডের কম্পাসটা নড়ে উঠেছিল। তারমানে, ওয়েরস্টেড যে তারের ভেতর দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত করেছিলেন, সেটা চুম্বকক্ষেত্র তৈরি করেছিল, তাই কম্পাসের কাঁটা নড়ে উঠেছিল।

কিন্তু পদার্থবিজ্ঞানের একটা নীতি আছে। শুধু তত্ত্ব দাঁড় করালেই সেটা ‘বিজ্ঞান’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় না। প্রয়োজন হয় পরীক্ষা-নিরীক্ষামূলক প্রমাণেরও। আবার উল্টোটাও সত্যি। শুধু পরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করলেই হয় না। তার একটা গাণিতিক তত্ত্বও থাকতে হয়। অ্যাম্পিয়ার সেই কাজটাই করলেন। বিদ্যুৎ চুম্বকের মধ্যে সম্পর্কের একটা সেতুবন্ধন তৈরি করলেন গাণিতিক সূত্র দ্বারা।

r1 ad
r1 ad