top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

যেভাবে তৈরি হয় মৌচাক

যেভাবে তৈরি হয় মৌচাক

মৌমাছি চাক বানানোর প্রক্রিয়া খুবই জটিল এবং সুশৃঙ্খল। প্রথমে তারা একটি উপযুক্ত জায়গা খুঁজে বের করে, যেখানে পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পাওয়া যায় এবং শিকারিদের থেকে নিরাপদে থাকা যায়। এই জায়গা নির্বাচিত হওয়ার পর, মৌমাছিরা সেই জায়গাটি প্রোপোলিস দিয়ে পরিষ্কার করে। তারপর নির্দিষ্ট কিছু উদ্ভিদের কুড়ির নিজেদের লালা প্রোপোলিস নাম এক ধরনের আঠালো পদার্থ তৈরি করে। প্রোপোলিসপ্রাকৃতিক জীবাণুনাশক কাজ করে।

এরপর মৌমাছিরা একজন আরেকজনের সঙ্গে ঝুলে লম্বা চেইন তৈরি করে এবং মোম দিয়ে চাক বানানো শুরু করে। কর্মী মৌমাছিরা জন্মের ১২ থেকে ২০ দিনের মধ্যে মোম তৈরি করতে সক্ষমতা লাভ করে। তাদের পেটের বিশেষ গ্রন্থি থেকে তরল মোম নিঃসরিত হয়, যা বাতাসের সংস্পর্শে জমাট বাঁধে। এরপর আরেকটি মৌমাছি সেই মোম নিয়ে সেটার সঙ্গে লালা ও পরাগ মেশায় এবং চিবিয়ে চিবিয়ে মোমটিকে চাক বানানোর উপযুক্ত করে তোলে।

মৌমাছিরা মোম দিয়ে ছোট গোল সিলিন্ডারের মতো চেম্বার তৈরি করে। পরে এগুলোকে ষড়ভুজাকার চেম্বারে পরিণত করে। এ জন্য সব মৌমাছি একসঙ্গে পাখা ঝাপটে তাপ উৎপন্ন করে, ফলে মোম কিছুটা গলে যায় এবং প্রতিটা সিলিন্ডার ছয় কোণা বিশিষ্ট হয়ে জোড়া লেগে যায়। এই ছয় কোণা খোপের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আছে। মোমে তৈরি এগুলো কাঠামোগত করাণে অনেক মজবুত হয়। এই আকৃতি অল্প জায়াগায় সর্বাধিক মধু সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দেয়। মাত্র ৪৫ গ্রাম মোম দিয়ে তৈরি একটি মৌচাকে তিন কেজি মধু সংরক্ষণ করা সম্ভব।

মৌচাকের শীর্ষ তলায় মধু সংরক্ষণ করা হয়। তারপরের তলায় ফুলের পরাগ, তার নিচে স্ত্রী মৌমাছির লার্ভা, এর নিচে পুরুষ মৌমাছির লার্ভা এবং একদম নিচে ভবিষ্যতের রানি মৌমাছির লার্ভা রাখা হয়। মৌচাক রক্ষায় পাহারাদার মৌমাছি সব সময় সতর্ক থাকে। যদি কোনো বিপদ দেখা দেয়, তারা অন্য মৌমাছিকে তলব করে এবং একসঙ্গে হামলা প্রতিহত করে। মৌচাক ঠাণ্ডা রাখতে তারা পানি বয়ে এনে পাখা উড়িয়ে বাষ্পীভূত করে তাপমাত্রা কমায়।

একটি মৌচাকে প্রায় ৫০ হাজার মৌমাছি থাকতে পারে। জনসংখ্যা বেড়ে গেলে তাদের একটি অংশ স্থানান্তরিত হয়। তবে তারা সহজে পুরো মৌচাক খালি করে না, বংশপরম্পরায় কয়েক দশক ধরে একই মৌচাক ব্যবহার করে।

এভাবেই মৌমাছিরা পরিশ্রম এবং সুশৃঙ্খলতার মাধ্যমে একটি চমৎকার মৌচাক তৈরি করে।

r1 ad
r1 ad
top ad image