top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

‘ঐক্যমতের অভাবে পানি অধিকার রক্ষায় শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি’

‘ঐক্যমতের অভাবে পানি অধিকার রক্ষায় শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি’

টেকসই পানি ও নদী ব্যবস্থাপনার জন্য আঞ্চলিক সহযোগিতার জোট গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন পানিসম্পদ ও জলবায়ু পরিবর্তন বিশেষজ্ঞ এবং ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আইনুন নিশাত।

তিনি বলেন, ‘আন্তঃসীমান্ত পানি ব্যবস্থাপনার পক্ষে জোরালো কণ্ঠস্বর তৈরি করতে আঞ্চলিক জোট গঠন করা প্রয়োজন। আঞ্চলিক ঐক্যমতের অভাবে পানি অধিকার রক্ষায় আমরা শক্ত অবস্থানে যেতে পারিনি। ভবিষ্যতে আমাদের সফল ও কার্যকর মডেল তৈরি করতে হবে, যা আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পানি ও নদী সমস্যাগুলো চিহ্নিত ও সমাধান করতে পারবে।’

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে নদী ও পানি ব্যবস্থাপনা নিয়ে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ‘বাংলাদেশে পানি আলোচনার ১০ বছর: পানি জাদুঘরের অবদান’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে বইয়ের পর্যালোচনাও করেন ড. আইনুন নিশাত। তিনি আরও বলেন, ‘পানি হচ্ছে সীমিত সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তন এই সীমিত সম্পদকে আরও জটিল করে তুলছে। যেমন- এক জায়গায় বন্যা, অন্য জায়গায় খরা। আমাদের খুব দ্রুতই এই সমস্যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।’

অনুষ্ঠানের শুরুতে ফারাহ্ কবির বলেন, ‘ন্যায়সঙ্গত ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা অর্জনের জন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রের মধ্যে আলোচনা ও সহযোগিতা গড়ে তোলা প্রয়োজন, যেন ঐতিহ্যগত ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান উভয়কেই একত্রিত করা যায়। এ লক্ষ্যে পানি সম্পদের গুরুত্ব, পানির ন্যায্যতা ও নদীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতে অ্যাকশনএইডের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা তুলে ধরার লক্ষ্যে এই বই প্রকাশ করা হয়েছে।’

সেন্টার ফর অলটারনেটিভসের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘নদীকে শুধু পানির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার সুযোগ নেই। কারণ পানি, জ্বালানি, জীববৈচিত্র্য ও পলিমাটির এক বহুমুখী সমন্বয়ে নদীর অস্তিত্ব। পানির পাশাপাশি এই অনিবার্য উপাদানগুলো নিয়েও আমাদের আলোচনায় আসতে হবে।’

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজি স্টাডিজের (বিআইআইএসএস) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. সুফিয়া খানমও বইটির একটি পর্যালোচনা করেন। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘পানি জাদুঘরের পরিধি সম্প্রসারণ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তুলতে হবে, যেন পানির টেকসই ও ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থাপনার দিকে রূপান্তরমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়। এ বিষয়েও এই বইয়ে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এটি টেকসই পানি ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।’

সমাপনী বক্তব্যে অ্যাকশনএইড ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ সোসাইটির চেয়ারপারসন ইব্রাহিম খলিল আল জায়াদ বলেন, ‘পানিসম্পদ ও তার ব্যবস্থাপনা নিয়ে মানুষের চিন্তার প্রসার, পানি নিয়ে বিভিন্ন উদ্ভাবনী চিন্তার বিকাশ ঘটানো, বিভিন্ন ধরনের সংলাপকে উৎসাহিত করা, পানি নিয়ে একত্রে কাজ করতে জোট গঠন, আন্তঃসীমান্ত কার্যক্রমের উৎসাহ প্রদানে নিরবচ্ছিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। পানি ব্যবস্থাপনাকে টেকসই করতে এই চেষ্টা অব্যাহত থাকবে বলে আমি আশা করি।’

খলিল আল জায়াদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আলোচনায় আরও অংশ নেন পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও গবেষণা বিষয়ক পরামর্শক ড. হাসিব মো. ইরফানুল্লাহ; ইউনিভার্সিটি অব লিবারেটস আর্টস বাংলাদেশের শিক্ষক ও সেন্টার ফর সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের (সিএসডি) পরিচালক ড. সামিয়া সেলিম।

অনুষ্ঠানে ভিডিও বার্তায় প্রকাশনার অংশ হতে পেরে নিজের অভিব্যক্তি তুলে ধরেন ভারতের দ্য ওয়াটার রিসোর্সেস কাউন্সিলের ন্যাশনাল প্রেসিডেন্ট ড. মানসী বাল ভার্গব। এ ছাড়াও অনুষ্ঠানে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কর্মকর্তা, বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাসহ জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

বইটিতে অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে একশনএইড বাংলাদেশের ১০ বছরের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা, যেমন- আন্তর্জাতিক পানি সম্মেলন আয়োজন ও বাংলাদেশের প্রথম পানি জাদুঘর প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পানির ব্যবস্থাপনা টেকসই করার বিষয়গুলো উঠে এসেছে। অ্যাকশনএইডের জমিকেন্দ্রিক থেকে পানিকেন্দ্রিক কৌশলে স্থানান্তরিত হওয়ার পক্ষে সমর্থনের বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এই বইয়ে। কমিউনিটির অংশগ্রহণ, স্থানীয় উদ্যোগ ও জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব তুলে ধরাসহ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু সহনশীলতা বাড়ানোর জন্য কার্যকর কৌশলগুলোর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে এই বইয়ে।

r1 ad
r1 ad
top ad image