top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

সাহিত্য

ধন্যিরাজার পুণ্যি দেশ— প্রবাদটি কীভাবে এলো?

ধন্যিরাজার পুণ্যি দেশ— প্রবাদটি কীভাবে এলো?
বাংলার প্রাচীন প্রবাদে লুকিয়ে আছে সেকালের জীবনচিত্রের ইতিহাস

যে বছর বর্ষা কম হয়, সে বছর শীত বেশি পড়ে। ব্যাপারটা সত্যি। কিন্তু কথাটা যিনি বলেছিলেন, সেই যুগে আবহাওয়া অধিদপ্তর ছিল না; আধুনিক বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগেনি সমাজে। তাই দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা আর পর্যবেক্ষণ ছিল তার মূল হাতিয়ার। সেই হাতিয়ার ব্যবহার করেই খনা বলেছিলেন, ‘উনো বর্ষায় দুনো শীত।’ কলা চাষের পর, ফলন শেষে তার গোড়া না কাটার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেছিলেন, কলা রুয়ে না কাটো পাত, তাতেই কাপড় তাতেই ভাত। কথাটা আজও সত্যি। তবে তার সব প্রবাদই এই যুগে নিরেট নয়।

কৃষিবিজ্ঞানের দৌলতে কৃষিব্যবস্থাতে এসেছে আমূল পরিবর্তন। নতুন ফসলের জাত তৈরি হচ্ছে, বিরূপ আবহাওয়াকেও তাই বশ মানাতে কষ্ট হচ্ছে না কৃষকদের। কিন্তু শত বছর আগেও খনার বচনগুলো এ দেশের কৃষিব্যস্থার বাইবেল হিসেবে গণ্য হতো।

শুধু কৃষিই বা বলি কেন, সামাজিক জীবন, মানুষে মানুষে সম্পর্ক নিয়েও খনা ছড়া ফেঁদেছেন, কালের আবর্তনে সেগুলো পরিণত হয়েছে প্রবাদবাক্যে। যেমন তিনি বলেছেন, ‘যদি হয় সুজন/এক পিঁড়িতে নজন’। অর্থাৎ মিলেমিশে বাস করলে কম সম্পদেও জীবনটা সুন্দর হতে পারে।

সমাজ-সংসারকে যিনি এত নিগূড়ভাবে দেখেছেন, এ দেশের কৃষিব্যবস্থার নাড়ি-নক্ষত্র যিনি অনুধাবন করেছেন, তিনি সাধারণ মানুষ হতে পারেন না।

তিনি অসাম্প্রদায়িক, বিপ্লবী, দার্শনিক, জ্যোতির্বিদ, কৃষিবিদ, আবহাওয়াবিদ ও গণিতবিদ। নারীবাদী কারণে তার ছড়ায় পুরুষবন্দনা নেই, নারীবিদ্বেষী শব্দ নেই। তিনি কৃষিবিদ, কারণ তিনি বলছেন, গাছগাছালি ঘন রোবে না/গাছ হবে তাতে ফল হবে না।

তিনি খাদ্য ও পুষ্টিবিদ, কারণ সেই কালেই তিনি বলেছেন, জল খেয়ে ফল খায়/যম বলে আয় আয়। তাকে অসাম্প্রদায়িক কেন বলা হচ্ছে? কারণ, সে সময়কার কোনো সাহিত্যই দেবী বা ইশ্বরবন্দনা ছাড়া রচিত হতো। পৌরাণিক গল্পই বারবার উঠে আসত, কিন্তু খনার শ্লোকে এসবের বালাই ছিল।

তিনি পুরাণের আবহ থেকে বেরিয়ে তৎকালীন সমাজ, কৃষিব্যবস্থাকে জোর দিয়েছিলেন। অলৌকিকতার হাত থেকে সাহিত্য মুক্ত করার সেটাই ছিল প্রথম প্রয়াস। তাই তিনি উদাত্ত কণ্ঠে বলতে পেরেছিলেন, যদি বর্ষে মাঘের শেষ/ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।

r1 ad
top ad image