শিল্প-সাহিত্য
জসীমউদদীনের স্কুলভীতি
জসীমউদদীন ছেলেবেলায়ে ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন। মাঠঘাট দাপিয়ে বেড়াতেন, নদীতে সাঁতার কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন, স্কুলে গেলে এসব থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয় তো ছিলই। জসীমউদদীনের ভয় ছিল, তিনি যদি স্কুলে যান, তাহলে বুনো ডুমুর গাছে, গাবগাছে, খেজুরগাছে ডুমুর-গাব-খেজুর পাকবে, সেসব কে খাবে? নিশ্চয়ই পাড়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সেগুলো দখল করবে। তাঁদের খেলাঘরে অন্য ছেলেরা খেলে যাবে! এসব কী করে মানা যায়! কিন্তু না মেনেও উপায় নেই।
জসীমউদদীনের স্কুলভীতিপল্লীকবি জসীমউদদীন ছেলেবেলায়ে ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন। মাঠঘাট দাপিয়ে বেড়াতেন, নদীতে সাঁতার কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন, স্কুলে গেলে এসব থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয় তো ছিলই। জসীমউদদীনের ভয় ছিল, তিনি যদি স্কুলে যান, তাহলে বুনো ডুমুর গাছে, গাবগাছে, খেজুরগাছে ডুমুর-গাব-খেজুর পাকবে, সেসব কে খাবে? নিশ্চয়ই পাড়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সেগুলো দখল করবে। তাঁদের খেলাঘরে অন্য ছেলেরা খেলে যাবে! এসব কী করে মানা যায়! কিন্তু না মেনেও উপায় নেই।লেবেলায়ে ডানপিঠে স্বভাবের ছিলেন। মাঠঘাট দাপিয়ে বেড়াতেন, নদীতে সাঁতার কেটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটিয়ে দিতেন, স্কুলে গেলে এসব থেকে বঞ্চিত হতে হবে। তা ছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বীদের ভয় তো ছিলই। জসীমউদদীনের ভয় ছিল, তিনি যদি স্কুলে যান, তাহলে বুনো ডুমুর গাছে, গাবগাছে, খেজুরগাছে ডুমুর-গাব-খেজুর পাকবে, সেসব কে খাবে? নিশ্চয়ই পাড়ার প্রতিদ্বন্দ্বীরা সেগুলো দখল করবে। তাঁদের খেলাঘরে অন্য ছেলেরা খেলে যাবে! এসব কী করে মানা যায়! কিন্তু না মেনেও উপায় নেই।
তবে স্কুলভীতির আরও একটা কারণ আছে। সেটা আরও ভয়ংকর। শিক্ষকেরা নাকি ভারী পেটায় ছাত্রদের!
কিন্তু বাবার নির্দেশ- আগামীকাল থেকেই তাঁকে স্কুলে যেতে হবে। একই নির্দেশ পেয়েছেন তাঁর চাচাতো ভাই নেহাজদ্দীনও। তিনি আবার জসীমউদদীনের খেলার সঙ্গী।
দুই ভাই মিলে ফন্দি আঁটতে থাকেন, কীভাবে পরদিন সকালে স্কুলের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। শেষমেশ একটা বুদ্ধি আসে মাথায়। বাড়ির অদূরেই আখক্ষেত। সকালে উঠে দুভাই আখক্ষেতে লুকিয়ে থাকেন। সেখানে জসীমউদদীনের চোখভরে পানি আসে। ফুঁফিয়ে-ফুঁপিয়ে কাঁদেন। বাবা তাঁকে খুব ভালোবাসেন, তিনিও বাবাকে ভালোবাসেন; সেই বাবাই কি না নিষ্ঠুর মাস্টারের হাতে তুলে দিতে চান, যিনি নাকি কথায় কথায় শিক্ষার্থীদের বেত মারেন। বাবা এত নিষ্ঠুর কী করে হতে পারেন?
আখক্ষেতে দুই ভাই নাকের জল চোখের জল এক করেন, অবশ্য মজা করে আখও খান। তা ছাড়া তো করারও কিছু নেই। পেট তো ভরাতে হবে। তারপর বেলা যথেষ্ট বেশি হলে, যখন বোঝেন, বাবা এখন আর বাড়িতে নেই, তখন বেরিয়ে আসেন। অবশ্য প্রতিদিন আখক্ষেতে লুকিয়ে থাকলে ধরা পড়ার আশঙ্কা আছে। তাই জায়গা বদল করেন। কোনো-কোনো দিন সরষেক্ষেতে গা-ঢাকা দেন। সেদিন কাঁচা মটরশুঁটি, কলাই কিংবা খেসারি খেয়ে উদরপূর্তি করতেন।
পালা করে সরষে আর আখক্ষেতে পলায়ন পর্ব চলল বেশ কদিন। কিন্তু বাবা টের পেয়ে গেলেন। একদিন সরষেক্ষেত থেকে ধরে এনে নিয়ে গেলেন স্কুলে। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে স্কুলে গেলেন দুভাই। স্কুলের বারান্দায় পা রেখেই দেখলেন, বেত হাতে যমদূত বসে আছেন! কয়েকজন অবাধ্য ছাত্রকে করাচ্ছেন নিলডাউন। আরেকজনের শাস্তি হচ্ছে সূর্যের দিকে তাঁকিয়ে থাকা। এসব দেখে কাঁপুনি আরো বেড়ে গেল দুভাইয়ের।
অবশ্যই না চাইলেও ভর্তিও হয়ে গেলেন স্কুলে। কিন্তু প্রথম দিন শিক্ষকের স্নেহাশিষ পেয়ে তাঁদের ভুল ভাঙল। শিক্ষক নামের যে যমদূতের ছবি তাঁরা কল্পনায় এঁকেছিলেন, স্কুলে বেত হাতে যে শিক্ষককে দেখেছিলেন, সে দেখাই শেষ দেখা নয়। শিক্ষককের পিতৃসুলভ আচরণ তাঁদেরকে ভীতি কাটিয়ে দিল। পরদিন থেকে সানন্দে ভাইকে নিয়ে জসীমউদদীন স্কুলে যাতায়াত করতে লাগলেন। ভাগ্যিস আখ কিংবা সরষেক্ষেতের মায়া তাঁরা কাটাতে পেরেছিলেন, নইলে কি বাংলাসাহিত্যের এই অমূল্য রত্নকে কি পেতাম আমরা!
সূত্র : স্মৃতিকথা সমগ্র/জসীমউদদীন