বিজ্ঞান
অমানবিক এডিসন!
প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করতে কত কাণ্ডই না করে মানষ। কেউ হাস্যকর কাণ্ড করে বসেন, কেউ আবার নির্মমতার চূড়ান্ত রূপ করেন। বিখ্যাত আবিষ্কারক টমাস আলভা এডিসন নাকি এমনই এক অদ্ভুত কাণ্ড করে বসেছিলেন। সেটা ছিল অমানবিক ও নির্মম ঘটনা। তবে ঘটনার সত্যতা নিয়ে সন্দেহ আছে। কিন্তু ঘটনা হোক, মিথ হোক; জানতে তো অসুবিধা নেই।
১৮৮৮ সাল। যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানহটন। অজস্র লোক জড়ো হয়েছেন রাস্তার মোড়ে। তামাশা দেখতে। সাধারণ লোক তো বটেই, সাংবাদিকেরাও আছেন সেই ভিড়ে। রাস্তার মোড়ে একটা কুকুরকে বেঁধে রেখেছেন তিনি। সেটাই আপাতত বলির পাঁঠা।
কুকুরের গাঁয়ে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে দিয়েছেন এডিসন। তারপর সেই তারে দিলেন বিদ্যুৎ-সংযোগ। প্রচণ্ড শকে কেঁপে উঠল কুকুরটা। দুমড়েমুচড়ে গেল ওটার শরীর।
সঙ্গে যন্ত্রণাকাতর চিৎকার। আসলে বিদ্যুতের এই ভয়াবহতাই এডিসন সাংবাদিক আর সাধারণ মানুষকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে চেয়েছিলেন। এর উদ্দেশ্য কিন্তু জনসচেতনতা বা জনকল্যাণ নয়, বরং নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সব প্রতিপক্ষকে কাবু করার জঘন্য পাঁয়তারা।
শরীরে বিদ্যুতের খোলা তার স্পর্শ করলে যে প্রচ- শক পেতে হয়, এ কথা এখন কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চারাও জানে। কিন্তু এডিসনের সেই কুকরকাণ্ডের আগে সে কথা জানত না সাধারণ মানুষ।
এডিসন নিজে বিদ্যুৎ নিয়ে কাজ করেছেন, বৈদ্যুতিক বাতি আবিষ্কার করেছেন। কিন্তু সেই বিদ্যুৎ ছিল ডিসি বা ডাইরেক্ট কারেন্ট। মোবাইল, রেডিও, টর্চে যে ড্রাইসেল ব্যবহার করা হয়, এগুলো সবই ডিসি কারেন্ট। এগুলো দিয়ে বড়জোর ছোটখাটো ডিভাইস চালানো যায়।
আমাদের নিত্যদিনে কলকারখানা থেকে শুরু করে বাড়ির টিভি, ফ্রিজ, ইলেকট্রিক ফ্যান, বৈদ্যুতিক বাতিতে যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি, এগুলোই আসলে এসি বা অলটারনেটিং কারেন্ট। এডিসনের কারবার ছিল ডিসি কারেন্ট নিয়ে। এসি কারেন্টের খবর তিনি জানতেন না। কিন্তু সার্বিয়া থেকে আসা এক তরুণ প্রতিভা, যার নাম নিকোলা টেসলা, তিনি বুঝেছিলেন এসি কারেন্টের মাহত্ম্য। বুঝেছিলেন আগামী পৃথিবী শাসন করবে তারই উদ্ভাবিত এসি কারেন্ট। টেসলার সঙ্গে এডিসনের বিরোধের সূত্রপাত তখনই।
অবশ্য এ ঘটনা আসলেই বাস্তব কিনা সন্দেহ আছে। সাল-তারিখ নিয়ে যেমন মতভেদ আছে। তেমনি, তেমনি কুকুর না হাতিকে বলির পাঠা করাপ হয়েছিল এ ঘটনায়, তা নিয়ে দুরকম মত চালু আছে। তবে আরেকদল মনে করেন, আসলেই এ ঘটনা ঘটেনি। এটা একটা মিথ; কিছু লোক টেসলাকে দেবতাজ্ঞান করেন, তাঁরাই এই মিথ বয়ে বেড়ান।
সূত্র: ব্রিটানিকা