top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

ঐতিহ্য

পাহাড়ি খাবার

পাহাড়ি খাবার
নানারকম পাহাড়ি খাবার

বাংলাদেশে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর মধ্যে গারো সম্প্রদায় অন্যতম। তাদের খাবারে তেল-মসলার ব্যবহার নেই বললেই চলে। অধিকাংশ খাবারের সঙ্গেই ব্যবহার করা হয় শুঁটকি এবং খাবার সোডা।

উৎসব-পার্বণে প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয় শূকরের মাংস। এই মাংসের সঙ্গে চালের গুঁড়া, পেঁয়াজ, আদা, রসুন ও মরিচ দিয়ে তৈরি করা হয় ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘ওয়াক ঘুরা’।

মাটির নিচে হওয়া এক ধরনের বড় আলুর সঙ্গে শুঁটকি এবং সোডা দিয়ে রান্না করা খাবারও গারো সমাজে বেশ জনপ্রিয়। আবার কলাপাতায় মুড়িয়ে রান্না করা ছোট মাছকে বলা হয় 'হিথোপ্পা'।

এটি বেশ সুস্বাদু খাবার। গারোদের পাশাপাশি চাকমা এবং মণিপুরিরাও খাবারে তেল ও মসলার ব্যবহার করে না বললেই চলে। আঠালো ভাত, সিদ্ধ সবজি এবং বিভিন্ন রকম ডাল দিয়ে রান্না করা ‘খার’ মণিপুরিদের জনপ্রিয় খাবারের একটি। মণিপুরিদের খাদ্যতালিকায় মাংস সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবে তাদের পূর্বপুরুষদের মাঝে মাংস খাওয়ার প্রচলন ছিল।

সাঁওতাল ও ত্রিপুরাদের প্রধান খাদ্য ভাত। তবে সাঁওতালদের ভাত রান্নায় রয়েছে ভিন্নতা। ভাত রান্নায় তারা পানি পুরোপুরি না শুকিয়ে স্যুপের মতো করে খায়। মাছ, কাঁকড়া, শূকর, খরগোশসহ বিভিন্ন পশু-পাখির মাংস পছন্দ করে সাঁওতালরা।

মারমাদের খাবারও বেশ বৈচিত্র্যময়। তেল ও মশলার অল্প ব্যবহার এদের খাবারের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সাংগ্রাই উৎসবে মারমারা বিভিন্ন সবজি এবং শুঁটকি দিয়ে ‘হাংরো’ নামে ঐতিহ্যবাহী এক ধরনের খাবার রান্না করে। তাদের পছন্দের আরো একটি খাবার হচ্ছে কচি বাঁশ সিদ্ধ, যা ব্যবহার করা হয় সবজি হিসেবে। স্থানীয়ভাবে এটি পরিচিত ‘বাঁশ কোড়ল’ নামে। বিকেলের নাশতায় মারমারা খায় ‘মুক্তি’ নামে একটি খাবার, যা অনেকটাই নুডলসের মতো। শুঁটকির গুঁড়া এবং গরম পানি দিয়ে পরিবেশন করা হয় এটি।

চাকমারা এ দেশের সর্ববৃহৎ পাহাড়ি জনগোষ্ঠী। তাদের খাবারে তেল ও মসলার ব্যবহার খুবই কম। তবে চাকমারা সিদ্ধ ঝাল-সবজি পছন্দ করে। তাদের প্রধান খাদ্য ভাত। শাক বা সবজিও তাদের পছন্দের খাবার। চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবারের নাম ‘সিদল’। এটি শুঁটকিজাতীয় খাবার। কয়েক রকম ছোট মাছ এবং কচু ঢেঁকিতে পিষে মণ্ড বানিয়ে শুকানো হয়। তাদের বেশির ভাগ তরকারিতেই থাকে সিদল। চাকমাদের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার ‘পাচন ত্রোণ’।

চৈত্রসংক্রান্তির উৎসবে কমপক্ষে পাঁচটি সবজির মিশ্রণে এটি রান্না করা হয়। আবার মুণ্ডা, রাজবংশী, খাসিয়া, ওরাও, রাখাইন, কোচ, বুনা, চাক, হাজং, তঞ্চঙ্গা, টিপরা জনগোষ্ঠীর মধ্যেও ঐতিহ্যগতভাবে সবজি, সিদল, বাঁশ কোড়ল খাবারের চল রয়েছে। তবে প্রত্যেকের রান্নায়ই রয়েছে নিজস্ব পদ্ধতি, যা তাদের খাবারকে করে তুলেছে অনেক বেশি সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়।

r1 ad
r1 ad