বিজ্ঞান
অ্যারিস্টোটল ও পৃথিবীর আকার
পৃথিবীতে এখনো কিছু মানুষ আছে, যারা মনে করে পৃথিবী গোলকের মতো নয়, চ্যাপ্টা। তাদের একটা সংগঠনও আছে। ফ্ল্যাট আর্থ সোসাইটি। সারা দুনিয়ায় এদের শাখা আছে। আজ থেকে আড়াই হাজার বছর আগে এদের মতো সারা পৃথিবীর মানুষই মনে করত পৃথিবী সমতল।
এই ভুল প্রথম ভাঙেন গ্রিক দার্শনিক ও বিজ্ঞানী অ্যারিস্টটল। তিনি বলেন, পৃথিবী চ্যাপ্টা থালার মতো নয়। এটা একটা গোলক।
কিন্তু লোকে তাঁর মানবে কেন? প্রমাণ তো দেখাতে হবে!
অ্যারিস্টোটল বললেন, চন্দ্রগ্রহণ কেন হয়?
অ্যারিস্টোটল বলেছিলেন সূর্য আর চাঁদের মাঝখানে পৃথিবী এসে পড়ে বলেই চন্দ্রগ্রহণ হয়। চন্দ্রগ্রহণের সময় পৃথিবীর যে ছায়া পড়ে চাঁদের ওপর, সেই ছায়া সব সময় গোলাকার। কখনো লম্বাটে হয় না, কিংবা উপবৃত্তাকারও হয় না। পৃথিবী যদি থালার মতো হতো তাহলে ছায়াটা উপবৃত্তাকার হতো, গোলাকার নয়। অ্যারিস্টটল বললেন, পৃথিবীর আকার গোলকের মতো বলে বলেই চন্দ্রগ্রহণের সময় চাঁদের ওপর গোলাকার ছায়া পড়ে।
আরেকটা যুক্তি দিলেন ধ্রুবতারার উদাহরাণ টেনে। ধ্রুবতারা সব সময় আকাশের একই জায়গায় থাকে। উত্তর মেরুবিন্দুর ঠিক ওপরে। তাই উত্তর মেরু থেকে কোনো পর্যবেক্ষক যদি দেখেন, তিনি সব সময় মাথার ওপরেই দেখবেন ধ্রুবতারাকে। কিন্তু কেউ যদি দেখেন বিষুব রেখা থেকে, তিনি দেখবেন ঠিক দিগন্ত রেখায় অবস্থান করছে ধ্রুবতারা। সে যুগে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যাতায়াত করত বণিক ও ব্যবসায়ীরা।
তাঁরা দিক ঠিক করতেন ধ্রুবতারা দেখে। তাঁদের কাছ থেকেই জানা যেত কোন দেশে ধ্রুবতারার অবস্থান কোথায়।
অ্যারিস্টোটল জানতেন উত্তর দিকের দেশগুলোতে দেখলে এই তারাকে আকাশের অনেক ওপরে দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ দিক থেকে দেখলে একে নিচের আকাশে দেখা যায়। ধ্রুবতারার অবস্থানের এই তারতম্য থেকেও পৃথিবীর গোলাকৃতির বিষয়টা নিশ্চিত হওয়া যায়।