top ad image
top ad image
home iconarrow iconফিচার

বিজ্ঞান

অন্ধকারে দেহঘড়ি

অন্ধকারে দেহঘড়ি
দেহঘড়িই আমাদের সচেতন করে দেয় কখন কী করতে হবে।

কখন সকাল হয়, কখন ঘুমুতে হবে, কখন জাগতে হবে, শরীর এসব বোঝে কী করে?

সহজ উত্তর দেহঘড়ির কারণে। অর্থাৎ শরীরের ভেতরেই এক অটোমেটিক দেহঘড়ি বাস করে। সেই দেহঘড়িই আমাদের সচেতন করে দেয় কখন কী করতে হবে।

এক সময় বেশির ভাগ গবেষকই মনে করতেন, সূর্যের আলোর সঙ্গে দেহঘড়ির সম্পর্ক আছে। কিন্তু সূর্যের আলো যদি না থাকে কোথাও! ঘুটঘুটে অন্ধকার এমন কোনো জায়গায় দেহিঘড়ি কি তাহলে কাজ করবে না?

এ নিয়ে দ্বিধাভক্ত ছিলেন বিজ্ঞানীরা।

কেউ কেউ মনে করতেন, সূর্য বা অন্য কোনো আলো না থাকলে সার্কাডিয়ান রিদম বা দেহঘড়ি ঠিকঠাক কাজ করবে না। কারো ধারণা আলোর সঙ্গে দেহঘড়ির কোনো সম্পর্ক নেই। শরীর নিজেই তার কাজের সময় ঠিক করে নেয়। কখন ঘুমাতে হবে, কখন বিপাক ক্রিয়া সম্পন্ন করতে হবে, তার জন্য বাইরে থেকে কোনো তথ্য দরকার হয় না শরীরের।

এ ব্যাপারটাই পরীক্ষা করে দেখার চেষ্টা করেন মার্কিন চিকিৎসাবিজ্ঞানী নাথানিয়েল ক্লেইটম্যান।

তার আগে দেহঘড়ি নিয়ে অনেক পরীক্ষা-নীরিক্ষা হয়েছে। প্রাচীন চৈনিক সভ্যাতায় কিংবা সম্রাট আলেক্সান্ডারের দরবারে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানে এটা প্রতিষ্ঠিত করার দরকার ছিল। এ জন্য একটা পরীক্ষা না করলেও চলত না। নাথানিয়েলে সে দায়িত্বটাই নিজের কাঁধে তুলে নিলেন।

বিজ্ঞানে কোনো তত্ত্ব দাঁড় করাতে হলে সেটা পরীক্ষা-নীরিক্ষার মাধ্যমে পাস করতে হয়। নাথানিয়েল তাঁর শিষ্য রিচার্ডসনকে নিয়ে দেহঘড়ির ব্যাপারটা পরীক্ষা করতে চাইলেন। এ জন্য তাঁরা যুক্তারাষ্ট্রের কেন্টাকি রাজ্যের ম্যামথ নামে এক পাহাড়ি গুহায় চলে গেলেন। কাঁথা-বালিশ আর পর্যাপ্ত খাবার নিয়ে। গুহায় বাস করলেন প্রায় এক মাস।

গুহাটার গভীরতা প্রায় ১২০ ফুট। সূর্যর আলো ঢোকার কোনো সুযোগই নেই। তাই সেটা ছিল পরীক্ষার জন্য আদর্শ জায়গা। কৃত্রিম আলোও তাঁরা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া জ্বালেননি। এক মাস গুহাবাসের পর ফিরে এলেন তাঁরা। সারা বিশ্বকে জানালেন তাঁদের গবেষণার ফল। সূর্য উঠত না সেখানে, কিন্তু নিয়ম করে প্রতিদিন রাতে তাঁদের ঘুম এসে যেত এবং সকালে একই সময়ে ভাঙত সে ঘুম।

এই পরীক্ষার ফল একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সারা বিশ্বে শ্রমজীবী মানুষের স্বাস্থ্যে। একসময় কলকারখানার মালিকরা বাধ্য হন প্রতিদিন একই শ্রমিককে নাইট ডিউটি না করাতে। শরীরের সামর্থ্যের সঙ্গে মিলিয়ে সুবিধামতো কর্মঘণ্টা ঠিক করা হয় বিশ্বের অনেক দেশেই। সুতরাং নাথানিয়েলের এই আবিষ্কার চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

সূত্র : ব্রিটানিকা

r1 ad
r1 ad